চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ শ্রীলংকার

বৃথা মুশফিকের বিরোচিত লড়াই

হুমায়ুন কবির কিরণ

২৯ জুলাই, ২০১৯ | ২:২১ পূর্বাহ্ণ

আফসোস মুশফিকের জন্য। অপরাজিত থাকলেন, কিন্তু মাত্র ২ রানের জন্য ৮ম সেঞ্চুরিটা পাওয়া হলো না। শ্রীলংকার বিরুদ্ধে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে এই একটা না পাওয়ার কষ্ট হয়তো ভক্তদের পোড়াচ্ছে। এক ম্যাচ অবশিষ্ট রেখেই সিরিজ হারের বেদনাও সঙ্গী টাইগার ভক্তদের। তবে নতুন করে ঘটে যাওয়া আর কোন ঘটনা নেই। যেন প্রথম ম্যাচেরই কপি হলো গতকাল। পার্থক্য হলো, প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ রান চেজ করে মুখ থুবড়ে পড়েছিল। গতকাল দ্বিতীয় ম্যাচে কোন টার্গেট ছাড়াই ব্যাট করতে নেমে সেই একই দৃশ্য। শুধু বিরোচিত লড়াই করলেন মুশফিকুর রহিম, তাকে কিছুটা সঙ্গ দিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ (৪৩)। মুশফিকের অপরাজিত ৯৮ রানের সাথে মিরাজের ৪৩ রানের কল্যাণে ১১৭ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলার পরও লংকানদের ২৩৯ রানের লক্ষ্য দেয় টাইগাররা। জবাব দিতে নেমে টাইগার বোলারদের উপর ছড়ি (ব্যাট) ঘুরিয়ে ৩২ বল হাতে রেখে ৭ উইকেটের সহজ জয় কুড়িয়ে নেয় শ্রীলংকা। শ্রীলংকার হয়ে কাজের কাজটা করেন আভিষ্কা ফার্নান্দো। তিনি ৭৫ বলে ৮২ রান

করে ৯ চার ও জোড়া ছক্কায়। অপর ওপেনার দ্বিমুথ করুনারতেœ ২৯ বলে ১৫ রান করে মেহেদী মিরাজের বলে ফিরলেও নিষ্প্রান টাইগার বোলিংয়ে বাকীরা সহজেই রান তুলে সহজ জয় নিয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ নিজেদের করে নেয় স্বাগতিকরা। কুশল মেন্ডিজ ৪১ ও এঞ্জেলো ম্যাথিউজ ৫২ রান করে দলকে সিরিজ উপহার দিয়েই মাঠ ছাড়েন। কুশল পেরেরা ৩০ রান করেন। বাংলাদেশ বোলারদের মধ্যে মুস্তাফিজুর রহমান ২ উইকেটের জন্য ৮ ওভারে ব্যয় করেন ৫০ রান। মেহেদী মিরাজ ১ উইকেট নেন ১০ ওভারে ৫১ রান খরচ করে। গতকাল একাদশে ফেরা তাইজুল ইসলাম ১০ ওভারে ৩৫ রান দিয়ে উইকেটশুন্য ছিলেন।
এর আগে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে একের পর এক উইকেট হারানোর প্রতিযোগিতায় নামে বাংলাদেশ। ৮৮ রানের মধ্যে একে একে সাজঘরে ফিরে যান ৫ জন প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যান। সপ্তম উইকেট জুটিতে মিরাজের সঙ্গে ৮৪ রানের জুটি গড়েই মুশফিক বাংলাদেশকে পার করে দেন ২০০ রানের গন্ডি। শেষ পর্যন্ত ৮ উইকেট হারিয়ে ২৩৮ রান করতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। ১১০ বলে ৯৮ রানে অপরাজিত থাকেন মুশফিক। ৬টি বাউন্ডারির সঙ্গে ১টি ছক্কার মার মারেন তিনি। মুশফিক হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন ৭১ বলে। মাত্র ২টি বাউন্ডারি মেরে। পরের ৪৮ রান করেন তিনি ৩৯ বলে। বাউন্ডারি মেরেছেন আরও ৪টি। সঙ্গে একটি ছক্কাও। তার এই ব্যটিং দৃঢ়তাই লজ্জা থেকে বাঁচিয়ে দেয় বাংলাদেশকে। শ্রীলঙ্কার ইসুরু উদানা, নুয়ান প্রদীপ এবং আকিলা ধনঞ্জয়া নেন ২টি করে উইকেট।
বাংলাদেশের ইনিংসের ওপর ঝড় তুলছেন নুয়ান প্রদীপ আর ইসুরু উদানা। এই দুই বোলারের আগুনে বোলিংয়ের সামনে সৌম্য হয়েছেন এলবিডব্লিউ এবং তামিম ইকবাল হয়েছেন বোল্ড। প্রথম সাজঘরের রাস্তা ধরেন সৌম্য সরকার। নুয়ান প্রদীপের দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ হয়ে যান সৌম্য সরকার। ফুলটস বলটিই ব্যাটে লাগাতে পারলেন না, সরাসরি গিয়ে আঘাত হানে প্যাডে। ১৩ বলে ১১ রান করে ফিরে গেলেন সৌম্য। ৯ম ওভারের প্রথম বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান তামিম ইকবাল। ইসুরু উদানার বলটাকে নিজেই ব্যাটের ভেতরের কানায় লাগিয়ে স্ট্যাম্পে টেন আনলেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক। আউট হওয়ার আগে ৩১ বল মোকাবেলা করে ১৯ রান করেন তামিম। তামিম আউট হওয়ার পর জুটি গড়ার চেষ্টা করেন দুই ডানহাতি মুশফিকুর রহিম আর মোহাম্মদ মিথুন। তাদের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ানোরও চেষ্টা করে বাংলাদেশ। কিন্তু ১৫তম ওভারের তৃতীয় বলে বলটাতে সোজা কুশল মেন্ডিসের হাতে তুলে দেন মোহাম্মদ মিথুন। ৫২ রানের মাথায় ফিরে যান তিনি। ২৩ বলে ১২ রান করে সাজঘরের পথ ধরেন। মিথুন আউট হওয়ার পর আশা ছিল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে। মুশফিকের সঙ্গে ভালো একটা জুটি গড়তে পারলে বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠা সম্ভব ছিল। কিন্তু মাত্র ১৬ রানের জুটি গড়তে পারলেন রিয়াদ। ১৯তম ওভারের শেষ বলে ধনঞ্জয়া ডি সিলভার ঘূর্ণি বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান মাহমুদউল্লাহ। ১৮ বল খেলে মাত্র ৬ রান করেন তিনি। এরপর মোসাদ্দেক হোসেনকে নিয়ে ১১৭ রানে নিয়ে যান মুশফিক। যখন প্রয়োজন ছিল মোসাদ্দেকের দৃঢ়তা দেখানোর, তখন তিনি সেটা দেখাতে পারেননি। ৩২তম ওভারে মাত্র ১৩ রান করে মোসাদ্দেক আউট হয়ে যান। এরপর মুশফিকের সঙ্গে জুটি বাধেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এ জায়গায় মিরাজের সঙ্গে ভালো একটা জুটি গড়ে ওঠে মুশফিকুর রহীমের। ৮৪ রানের জুটিটি ভাঙে মিরাজ বিগ শট খেলতে গিয়ে। তবুও ৪৯ বলে ৪৩ রানের গুরুত্বপূর্ণ এক ইনিংস উপহার দিয়ে সাজঘরে ফিরে যান মিরাজ। এরপর রানআউট হন তাইজুল ইসলামও। আর এই রান সহজেই টপকে যায় লংকানরা।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট