চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

শ্রীলংকার অবিশ^াস্য জয়

মালিঙ্গা ঝড়ে উড়ে গেল ইংল্যান্ড

স্পোর্টস ডেস্ক

২২ জুন, ২০১৯ | ২:২১ পূর্বাহ্ণ

লাসিথ মালিঙ্গা ঝড়ে উড়ে গেল শিরোপা প্রত্যাশী স্বাগতিক ইংল্যান্ড। রোমাঞ্চকর এক ম্যাচে গতকাল স্বাগতিকদের ২০ রানে হারিয়ে সেমিফাইনালে আশা বাঁচিয়ে রাখল শ্রীলংকা। এঞ্জেলো ম্যাথুজের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ের পরও লড়াইয়ের পুঁজিটা খুব একটা বড় ছিল না। তবে দারুণ বোলিংয়ে সেটাকেই যথেষ্ট প্রমাণ করলেন লাসিথ মালিঙ্গা ও ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা। বেন স্টোকসের ব্যাটিং বীরত্বের পরও রোমাঞ্চকর ম্যাচে ইংল্যান্ডকে হারাল শ্রীলঙ্কা। প্রথমে ব্যাট করে এঞ্জেলো ম্যাথুজের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে লঙ্কানরা তুলেছে ২৩২ রান। জবাবে লাসিথ মালিঙ্গার বিধ্বংসী বোলিংয়ে ইনিংসের তিন ওভার আগেই ২১২ রানেই আটকে থাকল ইংল্যান্ড। রান বন্যার বিশ^কাপে ছোট পূঁজি নিয়ে লড়াই করে যে জয় সম্ভব সেটা প্রমান করলে করুনারতেœর দল। এ পরাজয়ে শীর্ষে উঠা হল না ইংল্যান্ডের। ৬ ম্যাচে ৪ জয়ে ৮ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে থাকল স্বাগতিকরা। অন্য দিয়ে দুরন্ত জয়ে ৬ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশকে টপকে তালিকার পঞ্চম স্থানে উঠল শ্রীলংকা।
লিডসে গতকাল জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুতে মালিঙ্গা ঝড়ের কবলে পড়ে ইংল্যান্ড। ইনিংসের দ্বিতীয় বলে রানের খাতা খেলার আগেই জনি বেয়ারস্ট্রোকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন মালিঙ্গা। সপ্তম ওভারে মালিঙ্গার দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হয়ে ফেরেন অপর ওপেনার জেসম ভিন্স। ১৮ বলে ২টি চারে ১৪ রান করেন ভিন্স। ২৬ রানে ২ উইকেট হারানোর পর দলপতি মরগান ও জো রুটে ব্যাটিং বিপর্যয় এড়ানোর চেষ্টা করে ইংল্যান্ড। পাওয়ার প্লের প্রথম ১০ ওভারে মাত্র ৩৮ রান করে মরাগান বাহিনী। ২০১৫ সালের পর থেকে এটি প্রথম পাওয়ার প্লেতে তাদের সর্বনি¤œ সংগ্রহ। ১৯তম ওভারে ইংল্যান্ডের দলীয় ৭৩ রানে মরগানকে ফিরতি ক্যাচ নিয়ে ফেরান বোলার উদানা। ৩৫ বলে ২টি চারে ২১ রান করেন ইংল্যান্ড দলপতি। এরপর চতুর্থ উইকেট জুটিতে জো রুট ও বেন স্টোকস ভালোই খেলছিলেন। দ্বিতীয় স্পেলে বল করতে আসা ৫৪ রানের এ জুটি ভেঙে শ্রীলংকাকে ম্যাচে ফেরান মালিঙ্গা। কুশল পেরেরার তালুবন্দী হওয়ার আগে ৮৯ বলে ৩টি চারে ৫৭ রান করে ফেরেন জো রুট। পরের ওভারে বাটলারকে ফিরিয়ে নিজের চতুর্থ উইকেট তুলে নেন মালিঙ্গা। এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ার আগে বাটলার ৯ বলে ১০ রান করেন। ১৪৪ রানে পঁাঁচ উইকেট হারানোর পর মঈন আলীকে নিয়ে বেন স্টোকস প্রতিরোধ করেন। এরপর ধনঞ্জয়া ডি সিলভার ৮ রানের মধ্যে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে ইংল্যান্ডকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দেন। ৩৯তম ওভারে দলীয় ১৭০ রানে সিলভার শিকার হয়ে ফেরেন মঈন। উদানার তালুবন্দী হওয়ার আগে ২০ বলে ১৬ রান করেন তিনি। ৪১তম ওভারের প্রথম বলে আবারো হাসি সিলভার। এবার কুশল পেরেরার ক্যাচে পরিণত করে ফেরান ২ রানে থাকা ওকসকে। একই ওভারের পঞ্চম বলে একইভাবে কুশল পেরেরার তালুবন্দী হন ১ রানে থাকা আদিল রশিদ। ১৭৮ রানে ৮ উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। তবে একপ্রান্ত আগলে রেখে লড়াই চালিয়ে যান বেন স্টোকস। শেষ দিকে ৩ রানে আর্চারের বিদায়ের পর মার্ক উডকে নিয়ে শেষ জুটিতে দলকে ভরসা দিয়ে যাচ্ছিলেন স্টোকস। তবে নুয়ান প্রদীপের বলে মার্ক উড শূন্য রানে ফিরে গেলে ভেঙে যায় ইংল্যান্ডে জয়ের স্বপ্ন। ৮৯ বলে ৭টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৮২ রানে অপরাজিত ছিলেন একপ্রান্ত আগলে রাখা স্টোকস। লংকানদের হয়ে মালিঙ্গার ৪টি ছাড়াও ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ৩টি, ইসরু উদানা ২টি এবং নুয়ান প্রদীপ ১টি উইকেট নেন।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে মাত্র তিন রানে দুই ওপেনারকে হারিয়ে বিপদে পড়ে শ্রীলংকার। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে দলীয় মাত্র ৩ রানের মাথায় জোফরা আর্চারের বলে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান অধিনায়ক দিমুথ করুণারতেœ। আউট হওয়ার আগে করুণারতেœ করেন মাত্র ১ রান। পরের ওভারে ক্রিস ওকসের ২য় বলে বলে মঈন আলীর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান কুশল পেরেরা। পেরেরা করেন মাত্র ২ রান। ব্যাটিং বিপর্যয়ের পর লঙ্কানদের হাল ধরেন আভিস্কা ফার্নান্দো। তবে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তিনিও। দলীয় ৬২ রানে রশিদের তালুবন্দী করে তাকে ফেরান মার্ক উড। ফেরার আগে মাত্র ৩৯ বলে ৬টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪৯ রান করেন তিনি। এরপর কুশল মেন্ডিসকে নিয়ে প্রতিরোধ করেন এঞ্জেলো ম্যাথুজ। ইনিংসের ৩০তম ওভারে আদিল রশিদ পর পর দুই বলে ফিরিয়ে দেন কুশল মেন্ডিস এবং জীবন মেন্ডিসকে। কুশল ৬৮ বলে ২টি চারে ৪৬ রান করলেও প্রথম বলেই শূন্য রানে ফেরেন জীবন মেন্ডিজ। দলীয় ১৩৫ রানের মাথায় পঞ্চম উইকেট হারানোর পর ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে নিয়ে দ্বিতীয় দফায় দলকে বিপর্যয় থেকে টেনে তোলার চেস্টা করেন ম্যাথুজ। দলীয় ১৯০ রানে ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে ফেরান আর্চার। রুটের তালুবন্দী হওয়ার আগে ৪৭ বলে ১টি চারে ২৯ রান করেন ধনাঞ্জয়া। এরপর থিসারা পেরেরা ২, ইসুরু উদানা ৬ এবং লাসিথ মালিঙ্গারা ১ রান করে বিদায় নেন। তবে উইকেটের এক প্রান্ত ধরে রাখেন সাবেক দলপতি এঞ্জেলো ম্যাথুজ। ১১৫ বলে পাঁচটি চার আর একটি ছক্কায় করেন অপরাজিত ৮৫ রান। ১ রানে অপরাজিত ছিলেন নুয়ান প্রদীপ।
ইংলিশ বোলার জোফরা আর্চার ও মার্ক উড ৩টি করে, স্পিনার আদিল রশিদ ২টি এবং ক্রিস ওকস ১টি উইকেট পান। ম্যাচে ব্যক্তিগত অর্জনও হয়েছে আর্চারের। যাঁর বিশ্বকাপে খেলা নিয়েই সংশয় ছিল, ১৫ উইকেট নিয়ে সেই আর্চারই আপাতত সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি।
শ্রীলঙ্কা ইনিংস : ২৩২/৯ (৫০/৫০)
দিমুথ করুনারতেœ-কট বাটলার বল আর্চার- ১
কুশল পেরেরা-কট মঈন বল ওকস- ২
অভিষ্কা ফার্নান্দো-কট রশিদ বল উড- ৪৯
কুশাল মেন্ডিজ-কট মরগান বল রশিদ- ৪৬
এঞ্জেলো ম্যাথুজ-অপরাজিত- ৮৫
জীবন মেন্ডিস-কট এন্ড বল রশিদ- ০
ধনঞ্জয় ডি সিলভা-কট রুট বল আর্চার- ২৯
থিসারা পেরেরা-কট রশিদ বল আর্চার- ২
ইসুরু উদানা-কট রুট বল উড- ৬
লাসিথ মালিঙ্গা- বোল্ড উড- ১
নুয়ান প্রদীপ-অপরাজিত- ১
বোলিং
বোলার-ওভার-রান-উইকেট
ক্রিস ওকস ৫-২২-১
জোফরা আর্চার ১০-৫২-৩
মার্ক উড ৮-৪০-৩
বেন স্টোকস ৫-১৬-০
মঈন আলী ১০-৪০-০
আদিল রশিদ ১০-৪৫-২
জো রুট ২-১৩-০
ইংল্যান্ড ইনিংস : ২১২/১০ (৪৭/৫০)
ব্যাটিং
জেমস ভিন্স-কট জীবন বল মালিঙ্গা-১৪
জনি বেয়ারস্ট্রো-এলবিডব্লিউ মালিঙ্গা-০
জো রুট-কট কুশল পেরেরা বল মালিঙ্গা-৫৭
ইয়ান মরগান-কট এন্ড বল উদানা-২১
বেন স্টোকস-অপরাজিত -৮২
জস বাটলার- এলবিডব্লিউ মালিঙ্গা-১০
মঈন আলী-কট উদানা বল ডি সিলভা-১৬
ক্রিস ওকস-কট কুশল পেরেরা বল ডি সিলভা-২
আদিল রশিদ-কট কুশল পেরেরা বল ডি সিলভা-১
জোফরা আর্চার-কট থিসারা পেরেরা বল উদানা-৩
মার্ক উড-কট কুশল পেরেরা বল প্রদীপ-০
বোলিং
লাসিথ মালিঙ্গা-১০-৪৩-৪
নুয়ান প্রদীপ-১০-৩৮-১
ধনঞ্জয় সিলভা-৮-৩২-৩
থিসরার পেরেরা-৮-৩৪-০
ইসরু উদানা-৮-৪১-২
জীবন মেন্ডিস-৩-২৩-০

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট