চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

অজিদের বিরুদ্ধে হারে আক্ষেপের মাঝে অনুপ্রেরণাও

মিরাকল হলো না, হবেই না ?

হুমায়ুন কবির কিরণ

২২ জুন, ২০১৯ | ১:১০ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের মানুষ স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসেন। অবশ্য বড় কিছুর স্বপ্ন যদি দেখতেই না জানা হয় তাহলে লড়াইটা আর কিসের জন্য। অন্য অনেক কিছুর সাথে এদেশের মানুষ ক্রিকেট নিয়ে স্বপ্নটা একটু বেশিই দেখেন। তাদের সেই সাহসটা কিন্তু দিয়েছেন মাশরাফি-তামিম-সাকিবরাই।
তাই পরশু ট্রেন্ট ব্রিজে অজিরা যখন ৩৮১ রানে হিমালয়ে চড়ে বসলো, গ্যালারিতে উপস্থিত টাইগার দর্শকদের কোরাশ কিন্তু বিলীন হয়নি এতটুকুও। অথচ বছর কয়েক আগের চিত্রটা একবার ফ্ল্যাশব্যাক করুণ, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কোন ২৫০ বা তার বেশি করলেই ভক্তরা চুপসে যেতেন। গত কয়েক বছর ধরেই এ চিত্র আমুল বদলে গেছে। এখন প্রথমে ব্যাটিং করে ১৫০-২০০’র মধ্যে নিজেরা আউট হয়ে গেলেও ভক্তরা স্বপ্ন দেখেন মুস্তাফিজ-রুবেলে ম্যাচ জেতার। আবার প্রতিপক্ষ ৩০০ ছাড়ানো ইনিংস খেললেও ভক্তরা দিগুন জেদে গ্যালারির চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ান, আমাদে তামিম- সৌম-সাকিব-মুশফিকররা আছেন না। দক্ষিণ আফ্রিকা ও উইন্ডিজের বিরুদ্ধে টাইগাররা সেটা প্রমানও করেছে। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে অল্পের জন্য হয়নি। হয়নি পরশু অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধেও। তাই বলে স্বপ্ন দেখা যাবে না, ৩৮১ রান চেজ করে জিততে হলে মিরাকল কিছু লাগতো। মুশফিক সেঞ্চুরি করেছেন, তামিম-সাকিবও রান করেছেন, নিজেকে মেলে ধরার চেষ্টা করেছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও। তাতে জম্পেশ লড়াই হলো। নিজেদের সর্বোচ্চ ওয়ানডে স্কোরের রেকর্ডও হলো, হলো না শুধু মিরাকল। তা না হলেও এই বাংলাদেশের কোটি কোটি ক্রিকেট প্রেমীর সাথে নটিংহ্যামের ট্রেন্ট ব্রিজে নিশ্চিত একজনকেও মিলবে না যিনি বিষন্নতায় মুষড়ে বাড়ি ফিরেছেন।
পরশু ট্রেন্ট ব্রিজে বিশাল লক্ষ্য তাড়ায় সেয়ানে সেয়ানে লড়েছে টাইগাররা। ৪০ ওভার শেষে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ২৪৫। একই সময় অজিদের স্কোর ছিল ২৫০। ম্যাচের ধারাভাষ্যকাররা কিন্তু চুটিয়ে উপভেঅগ করেছেন টাইগারদের লড়াই। বাস্তবিক অর্থে সেই সময় বাংলাদেশ ম্যাচ থেকে অনেকটাই ছিটকে পড়লেও কেউ কেউ মিরাকলের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। অস্ট্রেলীয় ধারাভাষ্যকার পর্যন্ত কাঁপা কণ্ঠে বললেন, ‘ক্যান দে পুল অফ আ মিরাকল?’ না হয়নি, মিরাকল রোজ ঘটে না। বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত ৪৮ রানে হারল। তবে এই পরাজয়ও অনেক গর্বের। বাংলাদেশের হারের কারণ হিসেবে অনেক কিছুকেই দাঁড় করান যেতে পারে। টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে না পারা। ৩৮২ রানের লক্ষ্যে নেমে ৪২ ওভার পর্যন্ত ১০৭টি বল ডট দেওয়া কিংবা সাকিব, তামিমদের কারও নিজেদের ইনিংস বড় করতে না পারা। তবে বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি পোড়াবে, এই ম্যাচেই মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও মোসাদ্দেকের চোটে পড়া। মাঝের ওভারে উইকেট তুলে নেওয়ার ব্যর্থতা ও স্লগ ওভারে রান আটকানোর কাজটা কেউ করতে না পারার কাছেই যে হার মানলো বাংলাদেশ। ৩১ থেকে ৪০ ওভারের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া ৮২ রান নিয়েছে। বাংলাদেশ নিয়েছে ৬৮ রান। ৩০ ওভার পর্যন্ত উইকেট বেশি হারালেও রানে এগিয়ে ছিলেন সাকিব-তামিমরাই। কিন্তু উইকেট ধরে রেখে শেষে ঝড় তোলার কাজটা দুর্দান্তভাবে করেছে অস্ট্রেলিয়া। ৪১ থেকে ৪৬, এই ৬ ওভারে ৯৬ রান তুলেছে অস্ট্রেলিয়া। ওয়ার্নারের শুরু করা কাজটা ম্যাক্সওয়েল শেষ করেছেন দুর্দান্তভাবে। মাত্র ৩৭ বলে ২৫০কে ৩৫২ করে ফেলেছে অস্ট্রেলিয়া। ওদিকে বাংলাদেশ ৪১তম ওভারে তুলতে পেরেছে ৪ রান। ৪২ থেকে ৪৪ ওভারে ১৫, ১৩ ও ১২ রান এলেও সেটা প্রয়োজনের তুলনায় বেশ কমই ছিল। পরের ওভারে রানটা আরও কমে এল, এল ১১ রান। কিন্তু ৪৬তম ওভারেই অলৌকিকের সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল। ওই ওভারে এল ৪ রান। বিশ্বকাপে প্রতিপক্ষ দল যে নাথান কোল্টার-নাইলকে লক্ষ্য বানাচ্ছে, তাঁর টানা দুই বলেই ফিরলেন মাহমুদউল্লাহ ও সাব্বির। প্রথম ৩১ বলে ৩০ রান করা মাহমুদউল্লাহ পরের ১৯ বলে তুলেছেন ৩৯ রান। মুশফিক শেষ ১০ ওভারে ২৪ বলে তুলেছেন ২৭ রান। শেষ ৫ ওভারে মাত্র ৩৩ রান তুলেছে বাংলাদেশ।
এর মাঝেই বিশ্বকাপে নিজের সেঞ্চুরিটা পেয়ে যান মুশফিক। শেষ দশ ওভারে বাংলাদেশ ৪ উইকেট ৮৮ রান তুলেছে, অস্ট্রেলিয়াও ঠিক ৪ উইকেট হারিয়ে তুলেছে ১৩১ রান। ম্যাচের মীমাংসা মুল এই সময়েই হয়ে গিয়েছিল। বিশ্বকাপে আরও ৩ ম্যাচ বাকি। সে তিন ম্যাচে জিততেই হবে বাংলাদেশকে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পরশুর হার অন্তত বাংলাদেশকে সে তিন ম্যাচ নিয়ে আশা দেখাচ্ছে। ওয়ানডেতে নিজেদের সর্বোচ্চ সংগ্রহকে ১৯ দিনের মধ্যে দু’বার নতুন করে লিখেছে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের সেরা পারফরমার সাকিবের সেরা পারফরম্যান্স ছাড়াই যদি সাড়ে তিন শর বেশি রানের লক্ষ্য তাড়া করার সাহস দেখানো যায়, তবে তিন ম্যাচ জিতে সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্নও দেখা যায়। স্বপ্ন দেখতে অবশ্যই সাহস লাগে। শুরুতেই তো বলা, সেই সাহসটা যে টাইগার ক্রিকেটাররাই দেখাচ্ছেন। অজিদের বিরুদ্ধে মিরাকল হয়নি, কে বলতে পারে পরের তিন ম্যাচ জেতার সাথে সাথে অন্য দলের বিপর্যয়ে বাংলাদেশের সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে না? স্বপ্নতো দেখাই যায়, নাকি?

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট