চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

অজিদের ভয় পাচ্ছে না টাইগাররা

হুমায়ুন কবির কিরণ

২০ জুন, ২০১৯ | ২:০৪ পূর্বাহ্ণ

বিশ্বকাপে খেলার জন্য ইংল্যান্ডের মাটি স্পর্শ করার আগে বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা ভক্তদের অতি অবেগতাড়িত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। নিজে আবার বলেছিলেন, শেষ চারে নিজেদের দেখতে পেলে আমি অন্তত অবাক হবো না’। মাশরাফি নিজে অন্তত বিশ্বাস করেন তার দল শেষ চারে খেলার সামর্থ্য রাখে। অবশ্য দলের প্রতি অধিনায়কেরই যদি আস্থা না থাকে তাহলে কিভাবে আর এগিয়ে যাওয়া যায়। পাকিস্তান দলকে দেখুন, ভারতের কাছে হারের পর তাদের নিয়ে বিশ্ব মিডিয়ায় অযুত-নিযুত সমালোচনা হচ্ছে। তবে বাস্তবতা পাক কাপ্তান সরফরাজ আহমেদের শারিরিক প্রকাশ কিন্তু তার নিজের সাথে দলের অন্যদের নিয়েও আস্থাহীনতাই প্রকাশ করে। এদিক থেকে পুরোটাই ব্যতিক্রম মাশরাফি। হাঁটুকে ব্যান্ডেজের উপর ব্যান্ডেজ পেঁচিয়েও তিনিই বলতে পারেন ‘ধরিয়ে দেবানে’। নিজে হয়তো বল হাতে নিজেকে উজাড় করে দিতে পারছেন না, কিন্তু অধিনায়ক হিসাবে যেভাবে পুরো দলকে আগলে রাখছেন সেটার মাহাত্ব ‘অজিত আগারকার’রা বুঝবেন না। একজন তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান কিংবা এখনও আনকোড়া লেবেল গায়ে লেপ্টে থাকা মোসাদ্দেক হোসেনরা জানেন একজন মাশরাফি কতটা ফাস্ট বোলার আর কতটা অধিনায়ক, নেতা। এই নেতা মাশরাফি স্বপ্ন দেখানোর সাহস দেখাতে জানেন। জানেন বলেই টাইগার ভক্তরা আজও অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে জয়ের আশায় ক্ষণ গুনছেন। যদিও অ্যারন ফিঞ্চদের ধরিয়ে দেওয়া একেবারে সহজ কাজ নয়। উইন্ডিজের ৩২১ রান চেজ করার সময় যেভাবে ক্যারিবিয় বাউন্সারগুলো সাকিব-লিটনরা সিমানা ছাড়া করেছেন তাতে কামিন্স-স্টার্কদের সামনেও লড়াই করার আশাতো করাই যায়। টনটনে ক্যারিবিয়দের বিরুদ্ধে যে আত্মবিশ্বাস অর্জিত হয়েছে নটিংহামে সেটা টাইগার জার্সি ঠিকরে বেরুলে আরেকটি ‘কার্ডিফ’ কা- ঘটে যাবে। প্রার্থনা শুধু নটিংহামে যেন কোনো আজ আকাশের মন খারাপ না হয়। প্রতিপক্ষ যেই হোক বাংলাদেশ শুধু ১ পয়েন্টের জন্য নয়, জয়ের জন্য আগ্রাসি। এত দিন মিচেল স্টার্ক ভীতিকর ছিলেন। প্যাট কামিন্স, নাথান কুল্টারনাইলের গতি নিয়েও চাপা আতঙ্ক ছিল বাংলাদেশ দলে। কিন্তু বিশ্বকাপের মাঝপথে এসে সেই ভয় কোথায় যেন উবে গেছে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মন থেকে। বাউন্সারের জবাবে পুল শট নিয়ে তৈরি তারা। ১৪০-এর বেশি গতির বল নিয়ে আতঙ্ক কেটে গেছে আগেই। ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানদের একের পর এক শর্ট বল খেলে নাকে-মুখে খাওয়ার ভয়ও গেছে কেটে। বরং সাকিব আল হাসান আর অস্ট্রেলিয়ার অফস্পিনার নাথান লায়নকে নিয়েই বেশি গবেষণা চলছে দলে। উদ্বেগটাই যে গবেষণার প্রাপ্ত ফল। সাকিবকে ঘিরে উদ্বেগ তাঁর বোলিং নিয়ে। এটা আর গোপন কিছু নয় যে বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের বিরুদ্ধে বোলিং খুব একটা স্বাচ্ছন্দ্য নন সাকিব। বিপিএল, আইপিএল এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মাঠে ডানহাতি ব্যাটসম্যানদের পেলেই বেশি আক্রমণাত্মক দেখায় তাঁকে। বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের সামনে রক্ষণাত্মক বোলিং করেন তিনি। সেটা করেও সাফল্য মেলে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই তো সাকিবের দুই শিকারই বাঁহাতি। তবে সেই প্রাপ্তিতে ব্যাটসম্যানের ভুলও আছে।
ডানহাতি ব্যাটসম্যানের বেলায় প্রতিপক্ষের ভুল নয়, নিজের সামর্থ্যরে ওপরই আস্থা রাখেন সাকিব। ওদিকে অস্ট্রেলিয়া দলের ব্যাটিং লাইন-আপের যে নামগুলো বিশ্বকাপের আসরে উজ্জ্বলতম, সেগুলোর চারটি বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের। ডেভিড ওয়ার্নার, উসমান খাজা, শন মার্শ ও উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান অ্যালেক্স ক্যারি। অ্যারন ফিঞ্চ কিংবা স্টিভেন স্মিথের বেলায় ঝুঁকি নেই। তবে ওয়ার্নার-খাজারা উইকেটে থেকে গেলে সাকিবের বোলিং নিয়ে গভীর ভাবনায় পড়তে হবে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাকে। এই ডানহাতি-বাঁহাতির জট আছে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়েও। বিশ্বকাপের চার ম্যাচের তিনটিতেই উদ্বোধনী জুটি থেকে পঞ্চাশোর্ধ্ব রান পেয়েছে দল। আর ৩ নম্বরে সাকিব আল হাসান তো স্বপ্নের ক্রিকেট খেলছেন। বলার অপেক্ষা রাখে না যে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের সৌন্দর্যই এখন শুরুর তিন। এ টপ অর্ডারের তিনজনই আবার বাঁহাতি। আজ অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের আগে বাংলাদেশ দলের মূল চিন্তা ওয়ার্নার ও স্মিথ। টিকে গেলে একাই ম্যাচ বের করে নিতে জানেন তারা। শুধু যে দ্রুত রান তুলবেন তা-ই নয়, রানিং বিটুইন দ্য উইকেটেও দুর্দান্ত অজিরা। টনটন দুহাত ভরে দিয়েছে। সামর্থ্যরে প্রয়োগের জন্য আত্মবিশ্বাস, মনের জোর লাগে। দলে যেটাকে বলা হয় ‘মাইন্ড সেট’।
বাঁচা-মরার ম্যাচে ৪১.৩ ওভারে ৩ উইকেটে ৩২২ রান করা দলে মনের জোরের অভাব থাকে কী করে! তাছাড়া তামিম- সৌম্য -সাকিব- লিটনরা নিজেদের মেলে ধরেছেন। তাদের সাথে আনসাং হিরো মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ যে এখনো নিজের নামটি বিশ্বকাপে তুলে ধরতে পারেননি। ফর্মে থাকাদের সাথে রিয়াদের সাথে লিটল ম্যান মুশিও যদি ছন্দে ফিরেন ওয়ার্নার-স্মিথ জুজু কাটিয়ে আজ মধ্যরাতে আরেকবার মাতোয়ারা হবে ক্রিকেট পাগল এ জাতি, অপেক্ষায় সবাই।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট