চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

মরগান ঝড়ে উড়ে গেল আফগানিস্তান

মিটু বিভাস

১৯ জুন, ২০১৯ | ২:২৯ পূর্বাহ্ণ

ইয়ান মরগানের এক কালবৈশাখী ঝড়ে বিধ্বস্ত হল আফগানিস্তান। আফগানবোলার নাকান-চুবানি খাওয়ালেন ইংল্যান্ড ব্যাটসম্যানরা। আর তাতেই ১৫০ রানের বড় এক জয়ে বিশ^কাপে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে উঠে গেল স্বাগতিকরা। ম্যানচেস্টারে কাল বৃষ্টি নামেনি। তবে ব্যাট হাতে চার-ছক্কার বৃষ্টি নামালেন মরগান বাহিনী। প্রথমে ব্যাট করে বেয়ারস্ট্রো ও জো রুটের অর্ধশতকের পর দলপতি মরগানের বিধ্বংসী শতকে ৬ উইকেট হারিয়ে ইংল্যান্ড গড়ে তুলে ৩৯৭ রানের এক বিশাল ইনিংস। জবাব দিতে নেমে হাসমত উল্লাহ শাহিদির অর্ধশতকে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৪৭ রানের বেশী এগুতে পারেনি আফগানিস্তান। এ জয়ে পাঁচ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার এক নম্বরে উঠেছে ইংল্যান্ড। সমান সংখ্যক ম্যাচে সমান পয়েন্ট থাকলেও নিট রানরেটে পিছিয়ে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে নেমে এসেছে অস্ট্রেলিয়া। অন্যদিকে টানা পাঁচ ম্যাচে পরাজয়ে পয়েন্টবিহীন আফগানিস্তান রইল তলানিতে।
চোটের জন্য এদিন মাঠে নামায় অনিশ্চিত ছিলেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক। কিন্তু মাঠে নেমে মানসিকভাবে অসুস্থ করে দিলেন আফগান বোলারদের। আফগান বোলারদের নাকের জল-চোখের জল এক করে দিয়েছেন বিধ্বংসী এক সেঞ্চুরিতে। ব্যক্তিগত ২৮ রানে মরগানের ক্যাচ ফেলার চরম খেসারত দিতে হল আফগানদের। মাত্র ৫৭ বলে সেঞ্চুরি ছুঁয়েছেন মরগান। বিশ্বকাপে যা চতুর্থ দ্রুততম সেঞ্চুরি। আউট হওয়ার আগে মাত্র ৭১ বলে করেছেন ১৪৮ রান। ৪টি চারের সঙ্গে ছক্কা হাঁকিয়েছেন ১৭টি। বিশ্বকাপে তো বটেই, ওয়ানডে ইতিহাসেই এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ছক্কার বিশ্ব রেকর্ড এটি। এতদিন রেকর্ডটা যৌথভাবে ছিল রোহিত শর্মা, এবি ডি ভিলিয়ার্স ও ক্রিস গেইলের। তিনজনই এক ইনিংসে মেরেছিলেন ১৬টি করে ছক্কা। মরগানের এ তা-বে ছক্কার রেকর্ড গড়েছে ইংল্যান্ডও। পুরো ইনিংস জুড়ে ৩৪টি চার ও ২৫টি ছক্কা হাঁকিয়েছে ইংল্যান্ড ব্যাটসম্যানরা। ওয়ানডে ফরমেটে এক ইনিংসে এত বেশি ছক্কা মারতে পারেনি আর কোনো দল। আগের রেকর্ডটিও ছিল ইংল্যান্ডেরই দখলে। চলতি বছরেরই ফেব্রুয়ারিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৪১৮ রানের ইনিংস গড়ার পথে ২৪টি ছক্কা মেরেছিল থ্রি লায়ন্সরা। মরগান বাহিনী তা-বের এদিনটা ছিল আফগান অফ-স্পিনার রশিদ খানের কাছে ছিল ভয়ংকর। ৯ ওভারে হাত ঘুরিয়ে ১১০ রান খরচ করেন বিশ্বের নম্বর ওয়ান অফ-স্পিনার। সেই সঙ্গে বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ বোলিংয়ের নজির গড়লেন রশিদ।
বিশ্বকাপের মঞ্চ যে কত কঠিন, সেটি হারে হারেই টের পেল আফগানিস্তান। বড় দলগুলোকে হারিয়ে দেয়ার হুঙ্কার ছেড়ে বিশ্বকাপে আসা আফগানরা এখন পর্যন্ত একটি ম্যাচেও লড়াই করতে পারেনি। ম্যানচেস্টারে হট ফেবারিট ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বল করতে নেমে বাস্তবতা টের পেলেন রশিদ খান, মোহাম্মদ নবীরা। টস জিতে তাদের নিয়ে রীতিমত ছেলেখেলা শুরু করেছেন ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা। দলীয় ৪৪ রানে জেমস ভিন্সকে হারায় ইংল্যান্ড। দৌলত জাদরানের বলে মুজিব উর রহমানের তালুবন্দী হওয়ার আগে ৩১ বলে ৩ চারে ২৬ রান করেন এ ওপেনার। ভিন্সের বিদায়ের পর শুরু জনি বেয়ারস্টো ও জো রুটের ব্যাটিং আগ্রাসন। একটুর জন্য সেঞ্চুরি পাননি বেয়ারস্টো। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ১২০ রান সংগ্রহের পর ৯৯ বলে ৮ বাউন্ডারি আর ৩ ছক্কায় ইংলিশ ওপেনার আউট হন ৯০ রানে। এরপর শুরু হয় মরগান ঝড়। রুটকে সাথে নিয়ে আফগান বোলাদের নিয়ে রীতিমত ছেলেখেলা করেছেন এ ইংল্যান্ড দলপতি। ৪৭তম ওভারে দলীয় ৩৫৩ রানে রুটকে ফিরিয়ে এ জুটি ভাঙেন আফগান দলপতি গুলবাদিন নায়েব। রহমতশাহকে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে রুট খেলেন ৮২ বলে ৫টি চার ও ১টি ছক্কায় ৮৮ রানের ইনিংস। একই ওভারে শেষ বলে একইভাবে আউট হন ইয়ান মরগানও। শেষ দিকে মঈন আলীর ঝড়ো ইনিংসের সুবাদে ৩৯৭ রানে শেষ হয় ইংল্যান্ডের ইনিংস। মাত্র ৯ বলে ১টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৩১ রানে অপরাজিত ছিলেন মঈন। আফগানদের হয়ে দৌলত জাদরান ও গুলবাদিন নায়েব ৩টি করে উইকেট নেন।
পাহাড়সম লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতে নুর আলী জাদরানকে হারায় আফগানিস্তান। রানের খাতা খুলতেই পারেননি আর্চারের বলে ফিরে যাওয়া এ ওপেনার। এরপর রহমত শাহকে নিয়ে ৫১ রানের জুটি গড়েন গুলবাদিন নায়েব। মার্ক উডের বলে বাটলারের তালুবন্দী হয়ে ২৮ বলে ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩৭ রান করে ফেরেন আফগান দলপতি। এরপর রানের গতি শ্লথ হয়ে যায় আফগানিস্তানের। ২৫তম ওভারে আফগান দলীয় ১০৪ রানে বেয়ারস্টোর সহায়তায় রহমত শাহকে ফেরান আদিল রশিদ। ফেরার আগে ৭৪ বলে ৩টি চার ও একমাত্র ছক্কায় ৪৬ রান করেন রহমত। এরপর আসগর আফগানকে নিয়ে ৯৪ রানের জুটি গড়েন হাসমত উল্লাহ শাহিদি। ১৯৮ রানের মাথায় আদিল রশিদের বলে জো রুটের তালুবন্দী হয়ে ফেরার আগে ৪৮ বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪৪ রান করেন আসগর। ক্রিজে এসে থিুত হওয়ার আগে রশিদের তৃতীয় শিকারে পরিণত হন নবী। স্টোকসের হাতে ধরা পড়ার আগে ৭ বলে একমাত্র ছক্কায় ৯ রান করেন তিনি। দলীয় ২৩৪ রানে আর্চারের বলে ফিরনে আফগানদের হয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হাসমত উল্লাহ শাহিদি। ১০০ বলে ৫টি চার ও ২টি ছক্কায় ৭৬ রান করেন তিনি। শেষ দিকে নাজিবুল্লাহ জাদরানের ১৫ এবং রশিদ খানের ৮ রানে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২৪৭ রানে শেষ হয় আফগান ইনিংস। ইংল্যান্ডের পক্ষে আর্চার ও আদিল রশিদ ৩টি করে এবং মার্ক উড ২টি উইকেট নেন।
ইংল্যান্ড : ৩৯৭/৬ (৫০ ওভার)

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট