চট্টগ্রাম রবিবার, ০২ এপ্রিল, ২০২৩

১৬ জুন, ২০১৯ | ১:২৫ পূর্বাহ্ণ

এটিএম বুথে জালিয়াতি অনিরাপদ ব্যাংকিং খাত

দেশে অটোমেটেড টেলার মেশিনের (এটিএম) বুথে জালিয়াতির ঘটনা নতুন নয়। প্রায়ই পত্রিকায় এ সংক্রান্ত খবর আসে। জালিয়াতি প্রতিরোধে নানা পদক্ষেপের কথাও শোনা যায়। সাধারণত স্কিমিং ডিভাইসের সাহায্যে গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করে বানানো ক্লোন কার্ড ব্যবহার করেই প্রতারকচক্র এটিএম বুথ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়। তবে ঈদের আগে অভিনব কায়দায় একটি ব্যাংকের এটিএম বুথে জালিয়াতির যে ঘটনা ঘটেছে তা ব্যাংকিং খাতের নতুন ঝুঁকির ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটিএম বুথ থেকে টাকা তোলা হলেও এর কোনো রেকর্ড ব্যাংকের সার্ভারে না থাকা, একইসঙ্গে কোনো গ্রাহকের হিসেব থেকেও টাকা কমে না যাওয়ার বিষয়টি জালিয়াতচক্রের উচ্চতর অভিনব প্রযুক্তিকৌশল আয়ত্তের বার্তা দিচ্ছে। এটি খুবই উদ্বেগকর। এতে দেশের বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাইবার ঝুঁকি মোকাবিলার সক্ষমতা নিয়ে নতুন প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে।
গণমাধ্যমের খবর বলছে, ৩১ মে শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে একটি ব্যাংকের দুটি এটিএম বুথ থেকে দুই বিদেশি নাগরিক বিভিন্ন কার্ড ব্যবহার করে একাধিকবার টাকা উত্তোলন করেন। বুথ থেকে একজন বের হয়ে আবারও টাকা তোলেন। এ সময় বুথে নিরাপত্তাকর্মীর উপস্থিতিও ছিল। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, টাকা উত্তোলনের সময় মাস্ক দিয়ে মুখ ঢাকার চেষ্টা করেছেন জালিয়াতকারীরা। তাদের চোখে ছিল সানগ্লাস, মাথায় ছিল টুপি। কিন্তু কোনো রেকর্ড ব্যাংকের সার্ভারে নেই। এমনকি কোনো গ্রাহকের হিসেব থেকেও টাকা কমে যায়নি। অথচ এর আগে যতোবারই এটিএম থেকে টাকা চুরি হয়েছে, প্রতিবারই গ্রাহকের কার্ডের তথ্য চুরি করে ক্লোন কার্ড তৈরি করেছিলেন প্রতারকচক্র। ফলে প্রতিবারই গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এবারের ঘটনায় পুরো এটিএম বুথের নিয়ন্ত্রণ নেন জড়িত বিদেশিরা। ছয় বিদেশিকে আটক করা হলেও প্রতারণায় জড়িতরা কীভাবে বুথ থেকে টাকা চুরি করলেন, তার কোনো কূলকিনারা করতে পারেননি সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও পুলিশের কর্মকর্তারা। অভিনব কায়দায় এ ধরনের জালিয়াতির ঘটনা দেশের এটিএম সেবার নিরাপত্তার পাশাপাশি পুরো ব্যাংকিং খাতের নিরাপত্তার বিষয়টিকেও নতুন করে প্রশ্নের সম্মুখীন করেছে।
উল্লেখ্য, বর্তমান সময়ে বড় অঙ্কের না হলে চেক কেটে ব্যাংকের নির্দিষ্ট লাইনে দাঁড়িয়ে প্রয়োজনীয় টাকা তোলার সময় ব্যয় ও বিড়ম্বনায় যুক্ত হতে চান না কেউই। তাছাড়া ব্যাংক আওয়ারের পরে প্রয়োজনে টাকা উত্তোলনও সম্ভব নয়। ফলে গ্রাহকরা এটিএম বুথের শরণাপন্ন হন। বুথে গিয়ে এটিএমে কার্ড ঢুকিয়ে বোতাম টিপে এক মিনিটের কম সময়ের মধ্যেই প্রয়োজন অনুসারে টাকা তোলা সম্ভব। আবার চাহিদার দিকে খেয়াল রেখে বিভিন্ন ব্যাংক নগরীর বিভিন্ন স্থানে, এমনকি গ্রামাঞ্চলেও এটিএম বুথ স্থাপন করেছে। অর্থ উত্তোলনে এই সুবিধার কারণে সাধারণ গ্রাহকরা এটিএম বুথের দিকে ঝুঁকে পড়ছে দিনদিন। কিন্তু এভাবে অভিনব কায়দায় জালিয়াতির ঘটনা ঘটতে থাকলে এটিএম বুথের প্রতি মানুষ আস্থাহীন হয়ে পড়বেন। শুধু তাই নয়, ব্যাংকগুলোও দুর্বৃত্তচক্রগুলোর সহজ শিকার পরিণত হবে।
সংগতকারণে বিষয়টি আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প থাকতে পারে না। উল্লেখ্য, গেল বছর বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর আর্থিকখাত সাইবার ঝুঁকির মুখে থাকার বিষয়ে সতর্ক করেছিল। দেশের ২৮ শতাংশ ব্যাংকের সাইবার ঝুঁকি মোকাবিলার প্রস্তুতি না থাকার বিষয়টি উঠে এসেছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের গবেষণায়ও। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাইবার নিরাপত্তা জোরদার ও শক্তিশালী সফটওয়্যার ব্যবহারের ব্যাপারে মনোযোগী হতে এবং প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছিল এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপও (এপিজি)। এসব সতর্কবার্তা ও পরামর্শ আমলে নিয়ে দেশের আর্থিকখাতগুলোর নিরাপত্তা নিñিদ্র করতে কতটুকু তৎপরতা আছে জানা নেই। তবে এটিএম বুথ থেকে সর্বশেষ অভিনব কায়দায় টাকা চুরির ঘটনা চোখে আঙ্গুল দিয়ে বলে দিচ্ছে এখনো ব্যাংকসহ আর্থিকখাতগুলো কাক্সিক্ষতভাবে নিরাপদ নয়। আমরা মনে করি, এ বিষয়ে খামখেয়ালির সুযোগ নেই। সামগ্রিক পরিস্থিতির চুলচেরা বিশ্লেষণ করে অধিকতর সুরক্ষায় যথোপযুক্ত পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট