চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

বিশ^কাপে সাকিবের প্রথম শতক

বড় ব্যবধানে হারল বাংলাদেশ

স্পোর্টস ডেস্ক

৯ জুন, ২০১৯ | ১:৫০ পূর্বাহ্ণ

ইংল্যান্ড বধের স্বপ্ন পূরণ হল না টাইগারদের। কার্ডিফে মহাকাব্য গাঁথা হল না বাংলাদেশের। জেসন রয়ের দুর্দান্ত শতকের পর পাল্টা শতক হাঁকিয়েছেন বিশ^সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। কিন্তু বিশাল রানের নীচে চাপা পড়া টাইগাররা শেষ পর্যন্ত ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। প্রথমে ব্যাট করে রয়ের শতকে ৬ উইকেটে ৩৮৬ রানের পাহাড় গড়ে ইংল্যান্ড। জবাবে সাকিবের শতকে ৪৮.৫ ওভারে ২৮০ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস। ১০৬ রানের বড় পরাজয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে মাশরাফিরা। টাইগারদের বিভীষিকাময় বোলিংয়ের বিপরীতে এ ম্যাচে একমাত্র পাওনা বিশ^সেরা অলরাউন্ডার সাকিবের শতক। বিশ^কাপের স্বপ্ন যাত্রায় এ নিয়ে টানা দ্বিতীয় ম্যাচে হার টাইগারদের। এর আগে নিজেদের প্রথম ম্যাচে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে জয় দিয়ে শুরু করলেও দ্বিতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পরাজিত হয়েছিল বাংলাদেশ। অন্যদিকে ইংল্যান্ডের এটি দ্বিতীয় জয়। প্রথম ম্যাচে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে জয়ের পর পাকিস্তানের বিপক্ষে পরাজিত হয়েছিল ইংলিশরা।
গতকাল টাইগারদের বোলিংয়ে না ছিল ধার, না দেখা গেল দিশা। গ্রাউন্ড ফিল্ডিং আরও বাজে। এমন বেহাল বোলিং ও ফিল্ডিং পেলে তুমুল বিধ্বংসী ব্যাটিং লাইন আপের যা করার কথা, করল সেটিই। বাংলাদেশের বোলিং গুঁড়িয়ে ইংল্যান্ড উঠল রেকর্ড রানের পাহাড়ে। বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ এটিই, অনেক পেছনে পড়ে গেছে ২০১১ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ৩৩৮।
বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডেতে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোর, ওপরে আছে কেবল ২০০৫ সালে ইংলিশদেরই গড়া ৩৯১। ১২১ বলে ১৫৩ রানের দুর্দান্ত ইনিংসে ইংল্যান্ডের রান উৎসব জমিয়ে দিয়েছেন জেসন রয়। জনি বেয়ারস্টো সঙ্গ দিয়ে গড়েছেন দারুণ শুরুর জুটি, জস বাটলার ছেলেখেলা করেছেন বোলিং নিয়ে। সামর্থ্য অনুযায়ী নিজেদের কাজটুকু করতে পারেননি বাংলাদেশের বোলাররা। ম্যাচ জুড়ে ফিল্ডিং ছিল ভীষণ হতাশার।
বিশাল রানের পাহাড়ের বিপরীতে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ছন্দপতন। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা সৌম্য সরকারকে ফিরিয়ে দেন আর্চার। চেনা ছন্দে ফিরতে পারছেন না তামিমও। ব্যক্তিগত ১৯ রানে উডের বলে মরগানের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন এ ওপেনার। ৬৩ রানে দুই উইকেট হারানোর পর সাকিব ও মুশফিক জুটিতে এগুতে থাকে বাংলাদেশ। এ জুটিতে ১০৬ রান সংগ্রহ করলে প্লাংকেটের বলে রয়ের তালুবন্দী হন মুশফিক। ৫০ বলে ৪৪ রান করেন তিনি। রানের খাতা খুলতেই পারেননি মিথুন। রশিদের বলে বেয়ারস্ট্রর তালুবন্দী হলে ১৭০ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তবে একপ্রান্ত আগলে রেখে দলকে ম্যাচে ফেরানোর লড়াই চালিয়ে গেছেন সাকিব। ৩৩তম ওভারে মাত্র ৯৫ বলে বিশ^কাপে বাংলাদেশের হয়ে দ্বিতীয় এবং দ্রুততম শতক তুলে নেন সাকিব। বিশ^কাপের আগের শতকটি ছিল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। ওয়ানডেতে এটি সাকিবের ৮ম শতক। ২০১৭ সালে এ মাঠেই কিউইদের বিপক্ষে সর্বশেষ শতক পেয়েছিলেন সাকিব। ৪০তম ওভারে বেন স্টোকস ফিরিয়ে দিলে ১২১ রানে থামেন সাকিব। ১১৯ বলে ১ ছক্কা ও ৯টি চারে তিনি এ রান সংগ্রহ করেন। তবে ততক্ষণে রানরেটে হাতের নাগালের বাইরে চলে যায় ম্যাচ। শেষ ১০ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ১৬৩ রানের। ৪৪তম ওভারের প্রথম বলে ২৬ রানে থাকা মোসাদ্দেককে ফিরিয়ে দেন স্টোকস। বেশি দূর যেতে পারেননি মাহমুদউল্লাহও। ব্যক্তিগত ২৮ রানে তাকে থামান মার্ক উড। ২৬১ রানে ৭ম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এরপর ১২ রানে ফেরেন মেহেদী মিরাজ। শেষ পর্যন্ত ৭ বল আগেই অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ।
এর আগে কার্ডিফে টস জিতেছিলেন মাশরাফি মুর্তজা। তবে আগে বোলিংয়ের কাক্সিক্ষত সুযোগটি কাজে লাগাতে পারেনি দল। স্পিন দিয়ে আক্রমণ শুরু করে টাইগাররা। সাকিব আল হাসানের ঘূর্ণিতে শুরুতে কিছুটা কোণঠাসা অবস্থায় ছিল ইংলিশরা। প্রথম ৫ ওভারে ইংল্যান্ড তুলতে পেরেছিল মাত্র ১৫ রান। কিন্তু পরে সুদে-আসলে সেটা পুষিয়ে দিয়েছেন দুই ওপেনার জেসন রয় আর জনি বেয়ারস্টো। তেড়েফুড়ে ব্যাটিং করছিলেন তারা। তাদের দারুণ ব্যাটিংয়ে ১৫ ওভারে ইংল্যান্ড পেরিয়ে যায় একশ। ১৯ ওভারে ১২৮ রান তুলে ফেলা জুটি ভাঙেন দ্বিতীয় স্পেলে ফেরা মাশরাফি। তার বাড়তি বাউন্সে আউট হন ৫১ বলে ৫০ রান করা বেয়ারস্ট্রো, শর্ট কাভারে দারুণ ক্যাচ নেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ততক্ষণে রয়ের ব্যাট অপ্রতিরোধ্য হতে শুরু করেছে। জো রুটকে নিয়ে জুটিতে দলকে এগিয়ে নেন অনায়াসেই। ৭৭ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে রুটের অবদান ছিল ২১। ৯২ বলে রয় স্পর্শ করেন তিন অঙ্ক, ৭৯ ওয়ানডেতে তার নবম সেঞ্চুরি। মাইলফলকের পর বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন আরও। সাকিবকে টানা তিন বলে মারেন দুই চার এক ছক্কা, মিরাজকে টানা তিন ছক্কায় দেড়শ পেরিয়ে যান ১২০ বলে। টানা চতুর্থ ছক্কার চেষ্টায় শেষ পর্যন্ত মিরাজকেই উইকেট দিয়ে আসেন রয়। তবে ইংল্যান্ডের রানের গতি ধরে রাখেন বাটলার। ব্যাটিং অর্ডারে চারে প্রমোশন পেয়ে তোলেন ঝড়। চতুর্থ উইকেটে বাটলার ও ইয়ান মরগান জুটিতে ৯৫ রান আসে ৬৫ বলে। ৪৪ বলে ৬৪ করে বাটলার সাইফ উদ্দিনের বলে সীমানায় ধরা পড়েছেন সৌম্য সরকারের হাতে। মিরাজের বলে সৌম্যই নিয়েছেন ৩৩ বলে ৩৫ করা মরগানের ক্যাচ। এই দুজনের বিদায়ে একটু ভাটার টান এসেছিল রানের গতিতে। শেষ দিকে আবার তা-ব চালান ক্রিস ওকস ও লিয়াম প্লাংকেট। মাত্র ১৭ বলে ৪৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন দুজন। ৯ বলে ২৭ রানে অপরাজিত থাকেন প্লাংকেট, ৮ বলে ১৮ ওকস।
ইংল্যান্ড ইনিংস
ব্যাটিং : ৫০ ওভারে ৩৮৬/৬
জেসন রয়-কট মাশরাফি বল মিরাজ -১৫৩
জনি বেয়ারস্ট্র-কট মিরাজ বল মাশরাফি-৫১
জো রুট- বোল্ড সাইফুদ্দিন-২১
জস বাটলার-কট সৌম্য বল সাইফুদ্দিন-৬৪
ইয়ান মরগান-কট সৌম্য বল মিরাজ-৩৫
বেন স্টোকস-কট মাশরাফি বল মুস্তাফিজ-৬
ক্রিস ওয়াকস- অপরাজিত ১৮
লিয়াম প্লানকেট-অপরাজিত -২৭
বোলিং
বোলার-ওভার-রান-উইকেট
সাকিব-১০-৭১-০
মাশরাফি-১০-৬৮-১
সাইফুদ্দিন-৯-৭৮-২
মুস্তাফিজ-৯-৭৫-১
মিরাজ-১০-৬৭-২
মোসাদ্দেক-২-২৪-০।
বাংলাদেশ ইনিংস
ব্যাটিং : ৪৮.৫ ওভারে ২৮০/১০
তামিম-কট মরগান বল উড-১৯
সৌম্য- বোল্ড আর্চার-২
সাকিব- বোল্ড স্টোকস-১২১
মুশফিক-কট রয় বল প্লানকেট-৪৪
মো. মিথুন-কট বেয়ারস্ট্র বল রশিদ-০
মাহমুদউল্লাহ-কট বেয়ারস্ট্র বল উড-২৮
মোসাদ্দেক-কট আর্চার বল স্টোকস-২৬
সাইফুদ্দিন- বোল্ড স্টোকস-৫
মেহেদী মিরাজ-কট বেয়ারস্ট্র বল আর্চার-১২
মাশরাফি-অপরাজিত-৪
মুস্তাফিজ- কট বেয়ারস্ট্র বল আর্চার-০
বোলিং
বোলার-ওভার-রান-উইকেট
ওয়াকস-৮-৬৭-০
আর্চার-৮.৫-২৯-৩
প্লানকেট-৮-৩৬-১
মার্ক উড-৮-৫২-২
আদিল রশিদ-১০-৬৪-১
বেন স্টোকস-৬-২৩-৩।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট