চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

পাকিস্তানের দুর্দান্ত জয়

জোড়া শতকেও হারল স্বাগতিক ইংল্যান্ড

স্পোর্টস ডেস্ক

৪ জুন, ২০১৯ | ২:৪৫ পূর্বাহ্ণ

বিশ^কাপে দুর্দান্ত এক জয়ে ঘুরে দাঁড়াল পাকিস্তান। নটিংহ্যামে গতকাল টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেবারিট শিরোপা প্রত্যাশী ইংল্যান্ডকে ১৪ রানে হারিয়ে জয়ে ফিরল সরফরাজ বাহিনী। জোড়া শতকেও লাভ হল না ইংল্যান্ডের। দ্বিতীয় ম্যাচেই থমকে গেল স্বাগতিকদের জয়যাত্রা। প্রথম ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে হওয়া ব্যাটিং বিপর্যয়ের শোধ যেন ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধেই পুষিয়ে নিল পাকিস্তান। প্রমাণ করল, বিশ্বকাপে কেন তাদের ব্যাটিং লাইন আপকে অন্যতম সম্ভাবনাময় হিসেবে ধরছিলেন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা। গতি আর বাউন্সে পাকবাহিনীকে পরাস্ত করতে টস জিতে ফিল্ডিং নিয়েছিলেন ইংল্যান্ড দলপতি মরগান। কিন্তু কোন কাজে এল না তাঁর সে পরিকল্পনা। দুর্দান্ত উদ্বোধনী জুটির পর বাবর আজম, হাফিজ ও সরফরাজের অর্ধশতকে ইংল্যান্ড বোলারদের তুলোধুনো করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ৩৪৮ রান সংগ্রহ করে পাকিস্তান। যেটা বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। টানা দ্বিতীয় জয় পেতে হলে মরগানের দলকে গড়তে হতো বিশ্বকাপে লক্ষ্য তাড়ার রেকর্ড। সে পথে জস বাটলার ও জো রুটের দুর্দান্ত শতকে ভালোই জবাব দিতে শুরু করেছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু বড় রানের পাহাড় টপকানো শেষ পর্যন্ত আর হয়ে উঠেনি স্বাগতিকদের। শেষ পর্যন্ত ৯ উইকেট হারিয়ে ৩৩৪ রানের বেশি সংগ্রহ করতে পারেনি ইংল্যান্ড। জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুতে জেসন রয়ের উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। ৮রানে থাকা এ ইংল্যান্ড ওপেনারকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন সাদাব খান। দলীয় ৬০ রানে ওয়াহাব রিয়াজ ফিরিয়ে দেন অপর ওপেনার জনি বেয়ারস্ট্রকে। ৩১ বলে ৩২ রান করেন তিনি। ক্রিজে এসে থিতু হওয়ার আগে হাফিজের দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে মাত্র ৯ রানে ফেরেন দলপতি ইয়ান মরগান। দলীয় ১১৮ রানে বেন স্টোকস ফিরে গেলে ৪ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে স্বাগতিকরা। স্টোকস ১৮ বলে ১৩ রান করেন। এরপর অবশ্য জস বাটলারকে সাথে নিয়ে দুর্দান্ত জুটি গড়ে দলকে জয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন জো রুট। ১৩০ রানের এ জুটি ভাঙেন সাদাব খান। তবে তাঁর আগে অনবদ্য এক শতক তুলে নেন জো রুট। ১০৪ বলে ১০টি চার ও ১টি ছক্কায় ১০৭ রান করেন রুট। পরে শতকের দেখা পান বাটলারও। মাথায় আমিরের বলে ওয়াহাব রিয়াজের তালুবন্দী হওয়ার আগে ৭৬ বলে ৯টি চার ও ২টি ছক্কায় ১০৩ রান করেন বাটলার। বাটলার ফিরতেই ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে ইংল্যান্ড। স্বাগতিকদের ২৮৮ রানে এই ষষ্ঠ উইকেট পতনের পর ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ অনেকটা পাকিস্তানের হাতেই চল আসে। তবে মঈন আলী ও ক্রিস ওকস ম্যাচে ফিরতে লড়াই করলেও পাক বোলাররা তাদের সে আশা ব্যর্থ করে দেন। ওকস ২১ এবং মঈনের ১৯ রানে পরাজয়ের ব্যবধান কমায় ইংল্যান্ড। ৯ উইকেটে ৩৩৪ রানেই শেষ হয় ইংল্যান্ডের ইনিংস। পাকিস্তানের পক্ষে ওয়াহাব রিয়াজ ৩টি, সাদাব ও আমির ২টি করে এবং হাফিজ ও মালিক ১টি করে উইকেট নেন।
এর আগে গতকাল ট্রেন্ট ব্রিজে ইমাম-উল-হক ও ফখর জামানের ৮২ রানের উদ্বোধনী জুটিতে শুরুটা ভালো করে পাকিস্তান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো ইংল্যান্ডও শর্ট বলে ঘায়েল করতে চেয়েছিল তাদের। তবে এবার ভেঙে পড়েনি পাকিস্তানের ব্যাটিং। যথারীতি আক্রমণাত্মক ছিলেন ফখর। দেখেশুনে খেলছিলেন ইমাম। কঠিন সময় পার করে দিয়ে অফ স্পিনার মইন আলির বলে ফিরেন তারা। শুরু থেকে সাবলীল ছিলেন বাবর। একটু নড়বড়ে ছিলেন হাফিজ। ১৪ রানে ক্যাচও দিয়েছিলেন তিনি। জেসন রয়ের ব্যর্থতায় বেঁচে যাওয়ার পর ধীরে ধীরে ফিরে পান নিজেকে। জমে উঠে তৃতীয় উইকেট জুটি। পঞ্চাশ ছোঁয়ার পর রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টায় ছিলেন বাবর। চারটি চার ও একটি ছক্কায় ৬৩ রান করা টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে নিজের তৃতীয় উইকেট নেন মঈন।
সরফরাজের সঙ্গে আরেকটি ভালো জুটিতে দলকে এগিয়ে নেন হাফিজ। পাকিস্তান পায় বড় সংগ্রহের ভিত। আট চার ও দুই ছক্কায় ৮৪ রান করা হাফিজকে থামিয়ে বিপজ্জনক হয়ে উঠা জুটি ভাঙেন মার্ক উড। পঞ্চাশ ছোঁয়ার পর বেশিক্ষণ টিকেননি সরফরাজ। পাকিস্তান অধিনায়ক ৪৪ বলে ৫ চারে করেন ৫৫ রান। শেষের দিকে নিয়মিত উইকেট হারালেও সবার ছোট ছোট অবদানে ৩৪৮ পর্যন্ত যায় পাকিস্তান। বিশ্বকাপে এরচেয়ে বড় ইনিংস তাদের আছে আর একটি। ২০০৭ আসরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৩৪৯। চতুর্থ ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডেতে আউটফিল্ডে চারটি ক্যাচ নেন ক্রিস ওকস। ইংল্যান্ডের এই পেসার নেন তিনটি উইকেটও। বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এটাই সর্বোচ্চ রান। আগের সেরা ছিল গত আসরে মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়ার ৯ উইকেটে ৩৪২।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট