চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

অনন্য এক বিশ্বকাপের অপেক্ষা

হুমায়ুন কবির কিরণ

৩০ মে, ২০১৯ | ২:৪০ পূর্বাহ্ণ

গ্রুপ ভিত্তিক লড়াই ভালো নাকি লিগ পদ্ধতি? দুটোরই ভালো মন্দ আছে। তবে গ্রুপ ভিত্তিক বা টুর্নামেন্ট ফরম্যাটে অনেকসময় সেরা দলও অনিশ্চয়তায় পড়ে যায়। এই অনিশ্চয়তা প্রায় থাকে না লিগ পদ্ধতির আয়োজনে। আর এ জন্যই মানতে হবে, ইংল্যান্ডে আজ থেকে শুরু হতে যাওয়া ব্যাট বলের লড়াই হবে স্মরণকালের সবচেয়ে ব্যতিক্রমী ক্রিকেট রণ। ২০০৭ বা ২০১১ বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ড যেভাবে বিশ্বকে চমকে দিয়েছিল পাকিস্তান বা ইংল্যান্ডকে হারিয়ে, সেটা এবার আর দেখা যাবে না। ফরম্যাটের কারণে এবারের বিশ্বকাপ জমজমাট হবে। কারণ, প্রথমত, কোনো দুর্বল দল এই আসরে খেলার সুযোগ পায়নি। দ্বিতীয়ত, সব দলকে সবার সাথে খেলতে হবে। ১৯৭৫ সালে ৮টি দলকে নিয়ে শুরু হয়েছিল ওয়ানডে বিশ্বকাপ। এর মধ্যে ৬টি ছিল আইসিসির পূর্ন সদস্য এবং বাকি দুটি সহযোগী সদস্য দেশ। তখন ক্রিকেট খেলুড়ে দেশ এত কম ছিল যে, এটাই বেশ বড় আকারের টুর্নামেন্ট বলে বিবেচিত হয়েছিল। তা-ও কিন্তু সব দল সবার সাথে খেলেনি। ৮ দলকে দুই গ্রুপে ভাগ করে হয়েছিল আয়োজন। ১৯৭৯ সালে ঠিক একই ফরম্যাটে আয়োজিত হয় দ্বিতীয় আসর। সবার সাথে সবার দেখা হলো না। ১৯৮৩ সালের তৃতীয় আসরেও ৮টি দল দুই গ্রুপে ভাগ হয়ে খেলল। ১৯৮৭ সালের চতুর্থ আসরেও দেখা গেল একই ঘটনা। ১৯৯২ সালে এসে প্রথম বিশ্বকাপের ফরম্যাট বদলায়। ১৯৯২ বিশ্বকাপকে বলা যায় এবারের বিশ্বকাপের প্রকৃত পূর্বসুরী। সেবার বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছিল ৯টি দল। সবার সাথে সবার খেলা হলো। এরপর সেরা চারটি দল সরাসরি খেলল সেমিফাইনাল। সেই সময়ই একটা প্রস্তাবনা ছিল যে, ক্রিকেট যেহেতু কম দেশের খেলা, এই ফরম্যাটটাই ধরে রাখা হোক। কিন্তু ১৯৯৬ সালে আবার ফরম্যাটে পরিবর্তন এলো। ততদিনে জগমোহন ডালমিয়াদের কল্যাণে ক্রিকেটের গায়ে বিশ্বায়নের বাতাস লেগেছে। ফলে ক্রিকেটকে ছড়িয়ে দেওয়ার একটা মন্ত্র নিয়ে ১৯৯৬ সালে বিশ্বকাপের আসর বসলো দক্ষিণ এশিয়ার তিন টেস্ট খেলুড়ে দেশে। অংশগ্রহনকারী দেশের সংখ্যা এক লাফে বেড়ে হলো ১২। দুই গ্রুপে ৬টি করে দল খেললো। ফলে সবার সাথে সবার খেলার যে ধারা ১৯৯২ সালে দেখা গিয়েছিল, সেখান থেকে আবার সরে এলো বিশ্বকাপ। ১৯৯৬ ও ১৯৯৯ সালে ১২ দলকে নিয়ে দুই গ্রুপের খেলা হলো। এরপর ২০০৩ সালের বিশ্বকাপে দল বাড়লো আরো দুটো। ১৪ দল এবার দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে খেললো। ২০০৭ সালে একেবারে আনকোরা পদ্ধতির বিশ্বকাপ দেখলো ক্রিকেটবিশ্ব। ১৬ দলের টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হলো ওয়েস্ট ইন্ডিজে। এবার ৪টি গ্রুপে অনুষ্ঠিত হলো খেলা। প্রত্যেক গ্রুপের সেরা দুই দল গেল পরের রাউন্ডে, নাম দেওয়া হলো-সুপার এইট। এই ‘সুপার এইট’-এর সব দল সবার সাথে খেললো। এখান থেকে সেরা ৪ দল গেল সেমিফাইনালে। সেটা ছিল ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিশ্বকাপ। বিশ্বায়নের পর্বে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা বললেন, এটাই বিশ্বকাপের সেরা মডেল। কিন্তু এই মডেল থেকে সরে এলো আইসিসি। ২০১১ সালে আবারও সেই ২০০৩ সালের ফরম্যাটে ফিরে গেল উপমহাদেশের বিশ্বকাপ। ১৪ দল দুই গ্রুপে অংশ নিলো। তবে এবার বাড়তি হিসেবে যোগ হলো কোয়ার্টার ফাইনাল। ২০১৫ সালে, মানে সর্বশেষ আসরটিতেও হলো এই একই ধরনের বিশ্বকাপ। কিন্তু ২০১৯ সালের জন্য আইসিসি হঠাৎ করে দলসংখ্যা কমিয়ে একেবারে নব্বই দশকের শুরুতে চলে গেল। আর ফরম্যাটও করা হলো রবিন লিগ পদ্ধতির।

দরজায় কড়া নাড়ছে ক্রিকেট বিশ্বকাপ। আজ পর্দা উঠছে ক্রিকেটের সবচেয়ে এই বড় আসরের। এই আসরে কিছু বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন আইসিসি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) প্রধান নির্বাহী ডেভিড রিচার্ডসন সম্প্রতি বিবিসির কাছে এই উদ্বেগ প্রকাশও করেছেন। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমি শেষবার ১৯৯২ সালে এমন উত্তেজিত ছিলাম, কারণ সে সময় আমি নিজেই ক্রিকেট খেলতাম। যুক্তরাজ্য ও বৈশ্বিকভাবে টিকেটের প্রচুর চাহিদা এবারে, যা আমাদের আশাবাদী করছে। তবে কিছু বিষয় থাকে যা আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে না, সেসব নিয়েই মূলত আমাদের উদ্বেগ।’ আবহাওয়া: ইংল্যান্ডে প্রায় সব সময়ই এই রোদ, এই বৃষ্টি। এ নিয়ে রিচার্ডসন বলেন, ‘এমন আসরে কিছু জিনিস থাকে, যা কারো নিয়ন্ত্রণে থাকে না। যেমন আবহাওয়া, আমরা আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না।’ অর্থাৎ এবারের বিশ্বকাপে কিছু ম্যাচ যে খারাপ আবহাওয়ার খপ্পরে পড়তে পারে, তার আভাস তিনি আগেই দিয়ে রাখছেন। নিরাপত্তা: যেকোনো ইভেন্টে নিরাপত্তা নিয়ে একটা উদ্বেগ সব সময়েই থাকে আয়োজকদের। ২০০৯ সালে পাকিস্তানের মাটিতে শ্রীলঙ্কা দলের ওপর সরাসরি হামলা হওয়ার পর থেকে আইসিসি এই বিষয়ে বাড়তি নজরদারি করছে। চলতি বছরেই বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সফরের সময়, দলের খুব কাছেই, নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে একটি সন্ত্রাসী হামলা এবং সম্প্রতি শ্রীলঙ্কায় হয়ে যাওয়া বোমা হামলার ঘটনার পর এই উদ্বেগ হয়তো বেড়েছে। তবে আইসিসির প্রধান নির্বাহী জানাচ্ছেন, নিরাপত্তা নিয়ে সন্তোষজনক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এরই মধ্যে। তিনি বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে এটা নিয়ে আলোচনা হয় আমরা জানি। আমরা ঝুঁকি কমিয়ে আনছি।’ ম্যাচ পাতানো: ম্যাচ পাতানোর ইস্যুতে নিজেদের খুব শক্ত অবস্থানের কথা বলেছেন ডেভ রিচার্ডসন। -ইন্টারনেট

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট