চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ, ২০২৫

সর্বশেষ:

ঝুঁকিতে হাতির আবাসস্থল

কবির হোসেন, কাপ্তাই

১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ | ১:০৫ অপরাহ্ণ

পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের আওতাধীন কাপ্তাই-কর্ণফুলী রেঞ্জে হাতি মানুষ দ্ব›দ্ব ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। হাতির আক্রমণে গত দশ বছরে কাপ্তাইয়ে মৃত্যু হয়েছে দশজনের। দক্ষিণ বন বিভাগ কাপ্তাই-কর্ণফুলী রেঞ্জ কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানের অন্তর্ভুক্ত এবং সংরক্ষিত বনাঞ্চল বন্য হাতির নিরাপদ আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত। কিন্ত দিনদিন তা সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে।

 

দীর্ঘদিন যাবত কাপ্তাই বনাঞ্চল থেকে হাতি লোকালয়ে এসে তাণ্ডব করে চলছে। ফলে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির মত ঘটনা ঘটছে। যার কারণে হাতি মানুষের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হচ্ছে। বনাঞ্চলে বিগত অনেক বছর ধরে নিরাপদে বিচরণ করে আসছে বন্যহাতি। বর্তমানে বনাঞ্চলে হাতির খাদ্য সংকট, চলাচলে করিডর স্থানে অবকাঠামো, জনবসতি বৃদ্ধি ও বিবিধ পরিবেশগত কারণে বন্যহাতি প্রায় সময়ই লোকালয়ে চলে আসে এবং জানমালের ক্ষয়ক্ষতি সাধন করে।

 

কাপ্তাই রেঞ্জ অফিসারের তথ্য অনুযায়ী, সাধারণত অক্টোবর থেকে এপ্রিল মাস পযন্ত বনাঞ্চলে খাদ্য সংকটকালীন। এবং ধান পাকার সময় পাহাড় ও বনাঞ্চল হতে হাতির দল লোকালয়ে প্রবেশের প্রবণতা দেখা যায়। লোকালয়ের লোকজন তাদের ফসল রক্ষায় গুলি, বৈদ্যুতিক ফাঁদসহ বিভিন্ন ধরনের ফাঁদ পেতে হাতি হত্যার ঘটনা ঘটিয়ে থাকে।

 

হাতি দ্বারা ক্ষয়ক্ষতি রোধে কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে বন বিভাগ প্রশ্নে দক্ষিণ রাঙামাটি বন বিভাগের কাপ্তাই সহকারী বন সংরক্ষক মাসুম আলম পূর্বকোণকে জানান, বনাঞ্চলে হাতি-মানুষ দ্ব›দ্ব হওয়ার একমাত্র কারণ হল, হাতির খাদ্য সংকট, চলাচলে করিডর স্থানে অবকাঠামো, জনবসতি বৃদ্ধি ও বিবিধ কারণে হাতি লোকালয়ে এসে তাণ্ডব চালানোর ফলে হাতি-মানুষের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হচ্ছে। হাতি মানুষ দ্ব›দ্ব নিরসনে বন বিভাগ কর্তৃক ২০০২১-২২ সনে কাপ্তাই রেঞ্জে ৮কিলোমিটার সোলার ফেন্সি লাইন স্থাপন করা হয়। হাতি মানুষ দ্ব›দ্ব নিরসনে কাপ্তাই ও কর্ণফুলী রেঞ্জের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় ৪টি এ্যালিফেন্ট রেসপন্স টিম (ইআরটি) গঠন করা হয়েছে।

 

তিনি আরও জানান বর্তমানে হাতি বাংলাদেশ মহাবিপদাপন্ন প্রজাতির প্রাণী। বণ্যপ্রাণী (সংরক্ষন ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ মোতাবেক হাতি হত্যায় সর্বনিম্ন ২ বছর এবং সর্বোচ্চ ৭ বছর পযন্ত কারাদণ্ড এবং সর্বনিম্ন ১ লাখ টাকা হতে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পযন্ত অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। এছাড়া হাতি মানুষ দ্বন্দ্ব নিরসনে সরকার বন্যপ্রাণী দ্বারা আক্রান্ত জানমালের ক্ষতিপূরণ বিধিমালা ২০০২১ প্রণয়ন করেন। বিধিমালা অনুযায়ী বন্যহাতি দ্বারা লোকালয়ে কোন ব্যক্তির মৃত্যু সরকারের পক্ষ থেকে ৩ লাখ, আহত হলে ১ লাখ ও সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হলে ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণের বিধান রয়েছে বলে জানান।

 

জনসাধারণের নিরাপত্তা ও সচেতনতামূলক কার্যক্রমের বিষয়ে কাপ্তাই রেঞ্জ কর্মকর্তা এএসএম মহিউদ্দিন চৌধুরী জানান, হাতি মানুষ দ্বন্দ্ব নিরসনে ইআরটি টিম গঠন, ৮কিলোমিটার সোলার ফেন্সি স্থাপন, কর্ণফুলী রেঞ্জের বিউবো এলাকায় আরো ৪ কিলোমিটার সোলার ফেন্সি স্থাপন পরিকল্পনা, হাতি সংরক্ষণে মাইকিংসহ ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা, সচেতনতামূলক সভা ও পশু খাদ্য বাগানসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

 

বন কর্মকর্তারা মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী (প্রধান বন সংরক্ষক (চলতি দায়িত্ব) বরাত দিয়ে জানান, হাতি মানুষ দ্বন্দ্ব নিরসনে তিনি বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন সেগুলো হল, ২০১২ মোতাবেক শাস্তির বিধান এবং হাতি রক্ষায় মাঠ পর্যায়ে স্থানীয় জনগণ ও জনপ্রতিধিদেরকে সম্পৃক্ত করে হাতি সংরক্ষণে বিভিন্ন সচেতনতামূলক সভা করা। হাতি হত্যার কোন ঘটনা ঘটলে তা অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে দ্রুতসময়ে পোস্টমর্টেমের পাশাপাশি তদন্ত করা। আসামিদের শনাক্ত করে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা। হাতি হত্যায় মামলা দায়ের নয় আসামিদের গ্রেপ্তার করে আদালতে শাস্তির ব্যবস্থা করাসহ বন বিভাগ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানান।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট