চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

মিয়ানমারের ক্রেতা আসছে বাংলাদেশে

১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ | ১:৪৮ অপরাহ্ণ

শাহাবউদ্দিন আহমেদ

বর্তমানে বাংলাদেশের গার্মেন্টস সেক্টরের জন্য বড় সুযোগ রয়েছে। একটা সময়ে বাংলাদেশ থেকে গার্মেন্টস সেক্টরের অর্ডার কমে যায় মিয়ানমারের কারণে। মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক সরকার আসার পর বাংলাদেশ থেকে অনেক বায়ার (ক্রেতা) সেদেশে চলে যায়। আবার মার্শাল ল আসায়, মিয়ানমার থেকে বায়াররা বাংলাদেশের দিকে আসছে। এ সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রামকেও ব্যবহার করতে হবে। এরজন্য সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে। এই সুযোগ বাংলাদেশকে স্থায়ীভাবে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা করতে হবে। মার্শাল ল যতদিন মিয়ানমারে আছে, ততদিন কোনো বায়ার সেখানে যাবে না। ওই বায়ারগুলো বাংলাদেশে আসছে, আর না হয় ভিয়েতনামে চলে যাবে।
লকডাউনের কারণে শ্রমিকদের যাতায়াতের সমস্যা হয়। সরকারের সব নির্দেশনা মানতে গেলে কাজের গতি ও উৎপাদন কমে যায়। বায়ার তো আমাদের একটি নির্ধারিত সময় বেঁধে দেয়। ওই সময়ের মধ্যে আমাদের উৎপাদন শেষ করতে হয়। সবকিছু মিলে গার্মেন্টস সেক্টরের উৎপাদনে গিয়ে সমস্যা হয়। উৎপাদন যথা সময়ে করতে না করলে বায়ারের সাথে সমস্যা হয়। বায়াররা তখন ডিসকাউন্ট চায় এবং অনেক সময় অর্ডারও বাতিল করতে চায়। এসব কারণে একটি ফ্যাক্টরি ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।
চট্টগ্রাম থেকে গার্মেন্টস সেক্টর কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে— ঢাকায় গার্মেন্টস এরিয়া ভিক্তিক বা জায়গা বরাদ্দ রয়েছে। ঢাকার আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জে চট্টগ্রামের তুলনায় অনেক কম দামে জায়গা পাওয়া যায়। সে কারণে চট্টগ্রামে সেভাবে গার্মেন্টস সেক্টর গড়ে উঠেনি। অন্যদিকে, যোগাযোগ ব্যবস্থা বিবেচনায় চট্টগ্রামের তুলনায় ঢাকায় যাতায়াতের সুযোগ—সুবিধা অনেক বেশি।
অধিকাংশ বায়ার ঢাকা কেন্দ্রিক। বায়াররা চট্টগ্রামে আসতে চায় না। আসলেও প্রয়োজনে তাৎক্ষণিক যেতে পারবে কিনা যে আতঙ্কে থাকেন। ঢাকা সেন্ট্রাল হওয়াতে যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো। এসব কারণে চট্টগ্রামে কাস্টম ও বন্দর থাকার পরও বায়াররা ঢাকা কেন্দ্রিক। বায়ারদের চট্টগ্রামে আনা—নেয়ার জন্য যে যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রয়োজন তা চট্টগ্রামে নেই। ঢাকা থেকে প্রয়োজনে যে কোনো সময়, যে কোনো দেশে ফ্লাই করতে পারে।
যথাসময়ে শিপমেন্ট দিতে না পারাসহ বিভিন্ন কারণে আমাদের কারখানা রুগ্ন হচ্ছে। বিজিএমইএ’র সাথে বসে আমাদের রুগ্ন হয়ে যাওয়া ফ্যাক্টরিগুলো কিভাবে পুনোরায় উৎপাদনে আনা যায়, তা একটি সিদ্ধান্ত আসতে পারে। অন্যদিকে, চট্টগ্রামে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা বেশি। ঢাকা থেকে যেভাবে অর্ডার নিয়ে শিপমেন্ট করতে পারে, চট্টগ্রাম থেকে সেভাবে পারে না। এখন কমলাপুরে আইসিটি হয়ে গেছে। ফলে ঢাকার এক্সপোর্টাররা বন্দরেও পাঠাতে পারছে, আবার পাশাপাশি কমলাপুর পর্যন্ত পাঠিয়ে দিলে, সেখানে আইসিটি থেকে ট্রেনের মাধ্যমে মালামাল চলে আসতে পারছে। এছাড়াও, আরো কিছু সমস্যার কারণে চট্টগ্রাম পিছিয়ে রয়েছে।
ব্যাংকের সাপোর্টও আমাদের প্রচুর প্রয়োজন। শুধুমাত্র গার্মেন্টস সেক্টর নয়, অন্যান্য শিল্প কারখানাগুলোরও ব্যাংকের সাপোর্টের প্রয়োজন রয়েছে। চট্টগ্রামের শিল্প কারখানা যেভাবে ব্যাংকের সার্পোট ফিল করে ঢাকায় সেটা হয় না। সবগুলোর হেড অফিস ঢাকায় হওয়াতে, ঢাকা যেভাবে ব্যাংকিং সাপোর্ট পায় চট্টগ্রাম সেভাবে পায় না। কারণ চট্টগ্রামের ব্যাংকগুলো ঢাকামুখী হয়ে বসে থাকতে হয়। ডিসিশন কখন আসবে বা ডিসিশনে কি হবে, এসবের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এসবের কারণে অনেক সময় ক্ষেপণ হয়। তাই বিজিএমইএকে সাথে নিয়ে কিভাবে এসব সিদ্ধান্ত আরো সহজ করা যায় তা ভাবতে হবে।
চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধানী বলা হচ্ছে। কিন্তু এখানে কোনো ব্যাংকের হেড অফিস নেই। জোনাল অফিসগুলো অনেকটা ব্র্যাঞ্চ অফিসের মত। হেড অফিস থাকলে যে কাজগুলো দ্রুত হতো, হেড অফিস না থাকায় তা দ্রুত হচ্ছে না। তাই যে কোনো কিছুর জন্য হেড অফিস কি বলবে তার জন্য চেয়ে থাকতে হয়। যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে কিভাবে কিছু ব্যাংকের হেড অফিস করা যায়। তাহলে যে কোনো সিদ্ধান্তগুলো খুব দ্রুত হবে এবং তা জানা যাবে।
চট্টগ্রামের কালুরঘাটে একটি গার্মেন্টস পল্লী হওয়ার কথা ছিল কিন্তু পরবর্তীতে সেটা হয়নি। সেটি না হওয়ার পিছনে অনেকগুলো কারণ আছে, যারমধ্যে জায়গার মূল্য বেশি হওয়া অন্যতম কারণ। সেখানে যে পরিমাণ জায়গার দাম ছিল। সে পরিমাণ টাকা দিয়ে জায়গা কিনে ফ্যাক্টরি করার সুযোগ নেই।
বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরী সম্পর্কে তিনি বলেন, শিল্প নগরীতে বিভিন্ন রকম এবং বিভিন্ন ফ্যাক্টরি হবে। ইপিজেডের কোনো ফ্যাক্টরি রুগ্ন হয়নি বা বসেও যায়নি। কারণ ইপিজেড অথোরিটি হচ্ছে বাইরের থেকে আলাদা। ইমপোর্ট—এক্সপোর্ট সব হয় ইপিজেডের নিজস্ব গতিতে। সেখানকার ফ্যাক্টরিগুলো সুন্দরভাবে সাপোর্ট পায়। বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরীর ক্ষেত্রে একই রকম হবে আশা করছি।

লেখক : সাবেক প্রথম সহ সভাপতি, বিজিএমইএ

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট