চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

উন্নয়ন-অর্জন-বিসর্জনের চট্টগ্রাম

ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী

১৬ ডিসেম্বর, ২০২১ | ১:০২ অপরাহ্ণ

দেশবাসীসহ পুরোবিশ্ব সম্যক অবগত আছেন; স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুক্তির মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর চন্দ্রাতপ আচ্ছাদনে বিজয় ২০২১ বাঙালির হৃদয়ে নবতর উদ্দীপনা ছন্দানুগামী হয়েছে। প্রাসঙ্গিকতায় সৌভাগ্যের বিষয় হলো; দেশের আঞ্চলিক পত্রিকার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী চট্টগ্রামের দৈনিক পূর্বকোণ নানামুখী উন্নয়ন-অর্জনের মাঙ্গলিক হালখাতায় দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় বিশাল ইতিহাসবৃত্ত থেকে স্বল্পপরিসরে কিছু বিষয় আলোকপাত করার উদ্দেশে নিবন্ধের উপস্থাপন।

পাহাড়, সমুদ্র এবং উপত্যকায় শোভিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে প্রাচ্যের রাণীখ্যাত চট্টগ্রাম বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম, এশিয়ার সপ্তম এবং বিশ্বের দশম দ্রুততম ক্রমবর্ধমান শহর। দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে প্রধান বন্দরনগরী-বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে চট্টগ্রামের ভূমিকা অপরিসীম। ২৬ নভেম্বর ২০২১ গণমাধ্যম সূত্রমতে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৬তম বৈঠকের ৪০তম প্লেনারি সভায় আনুষ্ঠানিক অনুমোদনের মধ্য দিয়ে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে এখন বাংলাদেশের চূড়ান্তভাবে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটল। এই উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় চট্টগ্রামের অবদান অনিস্বীকার্য।

সংশ্লিষ্টদের ধারণা মতে; শিল্পপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ, অবকাঠামোগত ও যোগাযোগ খাতের উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও গবেষণায় অগ্রগতিসহ নানা খাতে চট্টগ্রামের অবস্থান ভিন্ন বৈশিষ্ট্যে অত্যধিক সমাদৃত। এই ধারাকে অক্ষুণ্ন রাখতে চট্টগ্রামের প্রকৃত স্বরূপ উন্মোচনে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, বন্দর, ওয়াসা, রেলওয়ে, সিডিএ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে সরকার ইতিমধ্যে হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন অব্যাহত রেখেছে।

ফলে বাণিজ্যিক রাজধানী হওয়ার পথে অবকাঠামোগত সংকট নিরসন-কর্মসংস্থানের আশাব্যঞ্জক আলোকরশ্মিতে চট্টগ্রামবাসী অনেকটুকু প্রমুদিত। চলমান ও পরিকল্পিত এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হলে চট্টগ্রামের দৃশপটে আমূল পরিবর্তন সাধিত হওয়ার বিশ্বাস নিরন্তর সুদৃঢ় হচ্ছে। আগামীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরী, বঙ্গবন্ধু টানেল, আউটার রিং রোড, বে-টার্মিনাল, পতেঙ্গা টার্মিনাল, চট্টগ্রাম-ধুমধুম রেললাইন ও অ্যালিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বাস্তবায়ন হলে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অধিকতর বেগবান হবে নিঃসন্দেহে তা বলা যায়।

গণমাধ্যমের বিশেষ সংখ্যায় প্রকাশিত তথ্যসূত্র মতে, সুপ্রাচীন ইতিহাস সমৃদ্ধ চট্টগ্রামের বিগত ৫০ বছরের মধ্যে সংঘটিত উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলোর মধ্যে রয়েছে- ১৯৭১ সালের ২৩-২৪ মার্চ পাকিস্তানি রণতরী সোয়াত থেকে অস্ত্র নামানোর বিরুদ্ধে শ্রমিক-জনতার রক্তক্ষয়ী প্রতিরোধ আন্দোলন, ২৬ মার্চ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র চালু, ১৯৭২ সালের ২৯ মার্চ স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর প্রথম চট্টগ্রাম সফর, ১৯৭৪ সালের ১০ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চট্টগ্রামের নৌ-ঘাঁটিতে বাহিনীকে নিশান প্রদান, ১৯৭৪ সালে ভাটিয়ারিতে বাংলাদেশ সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর অফিসার ক্যাডেটদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি প্রতিষ্ঠা, ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন চট্টগ্রামের বেতবুনিয়ায় বঙ্গবন্ধু কর্তৃক দেশের প্রথম উপগ্রহ ভূ-কেন্দ্র উদ্বোধন, ১৯৭৯ সালে চট্টগ্রাম শিশু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা, ১৯৮০ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশন পরিচালিত ইসলামিক পাঠাগার স্থাপন, ১৯৮৩ সালে দেশের প্রথম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামের লালদিঘি ময়দানে শেখ হাসিনার জনসভায় পুলিশের গুলিতে ২৪ জন নেতা-কর্মী নিহত, ১৯৮৮ সালের ২রা জুন কর্ণফুলী নদীর মুখে পরিপূর্ণভাবে নেভাল একাডেমির কার্যক্রম শুরু, ১৯৮৯ সাল ফেব্রুয়ারি ২৮ চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা চালু, ১৯৮৯ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের প্রথম বিজয়মেলার সূচনা, ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার উপকূলীয়-দ্বীপাঞ্চলে প্রায় ১ লক্ষ ৩৮ হাজার মানুষের মৃত্যু এবং কয়েক শত কোটি টাকার সম্পদ হানি, ১৯৯৪ সালের ২৯ নভেম্বর চট্টগ্রাম শিশুপার্ক উদ্বোধন, ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে শাহ আমানত বিমান বন্দরের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ ইত্যাদি।

চট্টগ্রাম জেলার প্রশাসনিক কাঠামো বিশ্লেষণেও দেখা যায় বিগত কয়েক বছরে এর উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। ১৯৯১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী সমগ্র চট্টগ্রাম জেলার লোকসংখ্যা ছিল ৫২,৯৬,১২৭ জন। তন্মধ্যে পুরুষ ২৮,১৯,২১৫ জন এবং ২৪,৭৬,৯১২ জন মহিলা। জনসংখ্যার ঘনত্ব ছিল ১,০০২। জরিপ অনুসারে চট্টগ্রামের উত্তর-দক্ষিণ ও শহর অঞ্চলে মোট ২০টি থানা, ১৯৬টি ইউনিয়ন, ৯৮৫টি মৌজা, ১৩৭৪টি গ্রাম এবং ২টি পৌরসভা, ৪৫টি ওয়ার্ড ও ১২৬টি মহল্লা থাকলেও সময়ের পরিক্রমায় প্রশাসনিকভাবে বর্তমানে চট্টগ্রাম জেলা ৪১ ওয়ার্ড বিশিষ্ট ১টি সিটি কর্পোরেশন, ১৫টি উপজেলা, ৩৩টি থানা (উপজেলায় ১৭টি ও ১৬টি মেট্রোপলিটন থানা), ১৫টি পৌরসভা, ১৯০টি ইউনিয়ন, ৮৯০টি মৌজা, ১২৬৭টি গ্রাম ও ১৬টি সংসদীয় আসন নিয়ে গঠিত। সর্বশেষ ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ৩৮,৩৮,৮৫৪ জন পুরুষ ও ৩৭,৭৭,৪৯৮ জন মহিলা মিলে চট্টগ্রামের মোট জনসংখ্যা ৭৬,১৬,৩৫২ জন।

এটি সর্বজনবিদিত যে, কৃষি প্রধান বাংলাদেশের কৃষি-অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র ছিল ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল জুড়ে থাকা অর্ধলক্ষাধিক গ্রাম। কিন্তু কৃষি উৎপাদনে চট্টগ্রাম ছিল অনন্য। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে বৃহত্তর চট্টগ্রামে প্রায় ৬৫ হাজার একর জমিতে ধানের চাষ করা হতো। ধানের পাশাপাশি আরও চাষ হতো বিভিন্ন ধরনের শাক সবজি, ফলমূল, তামাক, লবণ ইত্যাদি। ১৯৮৩ সালে কক্সবাজারসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামে মোট চাষ আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ছিল ১০,১০,৬৩০ একর। চট্টগ্রাম জেলার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর এক বিরাট অংশ ও জেলে সম্প্রদায় দীর্ঘকাল ধরে মৎস্য আহরণ, মৎস্য চাষ, পরিচর্যা ও মৎস্য ব্যবসায়ে নিয়োজিত ছিল।

ষাটের দশকেই চট্টগ্রামে মৎস্য চাষ, মৎস্য উন্নয়ন ও মৎস্য এলাকা চিহ্নিতকরণের কাজ শুরু হয়। ওই সময়ে মৎস্য এলাকা নির্ধারিত হয়েছিল প্রায় ৬ লক্ষ ৪০ হাজার একর সামুদ্রিক জল অঞ্চল এবং ১৫৩ বর্গমাইল নদী ও খাল এলাকা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ১৯৮১ সালের প্রতিবেদনে দেখা যায়, বৃহত্তর চট্টগ্রামে দিঘি-বিল ও হাওড়ের সংখ্যা ৫৬৮ এবং পুকুর-ডোবার সংখ্যা ৯৫,৯৪১। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে মৎস্য রপ্তানির মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের তালিকায় এক গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অধিষ্ঠিত। মৎস্য রপ্তানির বিনিময়ে অর্জিত বিদেশি মুদ্রার প্রায় ৭০ শতাংশ চট্টগ্রামের অবদান। ইতিমধ্যে বিপুল অর্জনের আনুষ্ঠানিক পরিসংখ্যান প্রাপ্তির অভাবে তা লিপিবদ্ধ করা গেল না।

মূলত ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দীতে ইউরোপীয় বাণিজ্যতন্ত্রের স্বর্ণযুগে চট্টগ্রামও ব্যবসা বাণিজ্যের আন্তর্জাতিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠে। ষাটের দশকে যে ক’জন মুষ্টিমেয় বাঙালি উদ্যোক্তা ও শিল্পপতি প্রতিষ্ঠা লাভ করতে সক্ষম হয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে এ কে খান, মীর্জা আবু ও এম আর সিদ্দিকী ছিলেন চট্টগ্রামেরই বাসিন্দা। স্বাধীনতা উত্তরকালে জাতীয় অর্থনীতিতে চট্টগ্রামের গুরুত্ব উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ বোর্ডের উদ্যোগে জাপান সরকারের জাইকার সহায়তায় আগস্ট ১৯৯৪ থেকে জুন ১৯৯৫ সময়কালে পরিচালিত চট্টগ্রাম শিল্পোন্নয়ন বিষয়ক সমীক্ষার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, চট্টগ্রাম জেলার শিল্প-কারখানার সংখ্যা প্রায় ২৩০০ যা বাংলাদেশের মোট শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ৯ দশমিক ২ শতাংশ। এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় সাড়ে চার লক্ষ মানুষের যা বাংলাদেশের মোট শিল্প কর্মসংস্থানের প্রায় ২৩ শতাংশ। চট্টগ্রামে ঐতিহ্যবাহী শিল্পের মধ্যে রয়েছে- চা ও চা বাগান, পাটকল, তাঁত, বস্ত্রশিল্প, চর্মশিল্প, সিগারেট, ভোজ্য তেল, বেকারি, সাবান, কাচ, লবণ, কীটনাশক ও সার কারখানা, ঔষধ, কোমল পানীয়, ম্যাচ কারখানা, গ্যাস, ইস্পাত, ইট ও সিরামিক, প্লাইউড, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, মুদ্রণ শিল্প, গার্মেন্টস শিল্প, জাহাজ নির্মাণ শিল্প ইত্যাদি।

আমাদের সকলেরই জানা যে, দেশের ৯৩ শতাংশ পণ্য আমদানি-রপ্তানি এবং ৬৫ শতাংশ রাজস্ব আহরিত হয় চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর-কাস্টমসের মাধ্যমে। সমুদ্রপথে কনটেইনারে পণ্য আমদানি-রপ্তানির ৯৮ শতাংশ হয় এই বন্দর দিয়ে। আমদানি-রপ্তানি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সাথে সামঞ্জস্য রেখে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বর্তমান সরকারের গৃহীত মেঘা প্রকল্পের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি), গভীর সমুদ্র বন্দর, পতেঙ্গা-হালিশহর উপকূলে বে-টার্মিনাল নির্মাণ ইত্যাদি। এছাড়াও স্বয়ংক্রিয় কনটেইনার অপারেশন পদ্ধতি সিটিএসএস, বন্দরে নিরাপদে জাহাজ যাতায়াত ও বহিঃনোঙ্গরে অবস্থানকালে জাহাজগুলোকে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করার জন্য আধুনিক ভিটিএমআইএস চালু এবং সামগ্রিক কার্যক্রম ডিজিটাল করার ফলে বন্দরের সক্ষমতা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

২০১৮ সালে ১৩১তম বন্দর দিবস উপলক্ষে দেয়া বাণীতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দর শিল্প-বাণিজ্যের প্রসারের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। শুধু ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নয়, এ অঞ্চলে সভ্যতার ক্রমবিকাশে বন্দরটির বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। সরকারের রূপকল্প ২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে চট্টগ্রাম বন্দর আরো কার্যকর ভূমিকা রাখবে।’

শিপিং-বিষয়ক প্রাচীনতম জার্নাল লয়েড’স লিস্ট ২০২০ সালে প্রকাশিত সংস্করণের তথ্যানুসারে, বিশ্বের ১০০ ব্যস্ততম বন্দরের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান ৫৮। জার্নালটির মতে, চট্টগ্রাম বন্দর ২০১৯ সালে ৩০ লাখ ৮৮ হাজার ১৮৭টিইইউ (২০ ফুট দীর্ঘ) কনটেইনার পরিচালনা করেছে। ২০১৮ সালে যার পরিমাণ ছিল ২৯ লাখ ৩ হাজার ৯৯৬ টিইইউ। ২০১৮ সালের ২০১৯ সালে বন্দরের কনটেইনার পরিবহনের বার্ষিক হার ৬ দশমিক ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০১৮ সালের অবস্থান থেকে ৬ ধাপ এগিয়েছিল। ২০১৭, ২০১৬, ২০১৫ ও ২০১৪ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান ছিল যথাক্রমে ৭০, ৭১, ৭৬ ও ৭৮। ৪৩ দশমিক ৩০ মিলিয়ন টিইইউ নিয়ে শীর্ষে রয়েছে চীনের সাংহাই বন্দর। শ্রীলংকার কলম্বো বন্দর ২৪, ভারতের জওহরলাল নেহরু বন্দর ৩৩ ও মুন্ড্রা ৩৭তম এবং পাকিস্তানের করাচি বন্দরের অবস্থান ৮৫তম।

চট্টগ্রামের সাধারণ-কারিগরি শিক্ষা এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বিগত কয়েক বছরের মধ্যে বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ একাডেমি (১৯৭৩), ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (১৯৮৯), চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিমেল সায়েন্সস বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৯৫), আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৯৫), সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (২০০১), বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ (২০০১), বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজ (২০০২), প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় (২০০২), চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজ (২০০৫), সাউদার্ন মেডিকেল কলেজ (২০০৬), ইস্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয় (২০০৬), এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন (২০০৮), চট্টগ্রাম ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল টেকনোলজি (২০১২), পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (২০১২), চট্টগ্রাম ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি (২০১৩), আর্মি মেডিকেল কলেজ (২০১৫) ইত্যাদি।

চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক বিকাশের ধারায় রাজনৈতিক তৎপরতা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড একসাথে পরিচালিত হয়েছে। কখনো সাংস্কৃতিক কর্মকা- পরিচালিত হয়েছে আসন্ন রাজনৈতিক সংকটের পূর্বলক্ষণ দেখে, কখনও বা রাজনৈতিক আন্দোলনের সহযোগী শক্তি হিসেবে। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের পর অসহযোগ খেলাফত আন্দোলন কালেও চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক তৎপরতা স্তিমিত না হয়ে জোরদার হয়েছিল। বিশ-এর দশকে সুরেন্দ্রলাল দাসের নেতৃত্বে আর্যসংগীতের শিল্পী দলের নিখিল বঙ্গ কংগ্রেস সম্মেলনে যোগদান এই সময়ে চট্টগ্রাম সাংস্কৃতিক অঙ্গনের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা।

চট্টগ্রামে যুব বিদ্রোহের প্রস্তুতি হিসেবে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও বিপ্লবী আন্দোলনকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম শহরে ও গ্রামে-গঞ্জে-পাড়ায়-পাড়ায় বিভিন্ন ক্লাব, পাঠাগার, ব্যায়ামাগার গড়ে ওঠে। মহাত্মা গান্ধী, মওলানা শওকত আলী, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন, নেতাজী সুভাষচন্দ্র, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, কাজী নজরুল ইসলাম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চট্টগ্রাম আগমন বরাবরই চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে প্রেরণা যুগিয়েছে। ষাটের দশকে প্রগতিশীল ছাত্র সমাজ ঔপনিবেশিক শাসকদের সাংস্কৃতিক নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে পরিচালিত সংগ্রামের অংশ হিসেবে ছাত্র-ছাত্রীরা বাংলা প্রচলন, বাঙালি সংস্কৃতির বহিরঙ্গ রূপকে জনসমক্ষে তুলে ধরা, লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশ, চারুকলা চর্চাসহ বিভিন্ন কাজে নিজেদের আত্মনিয়োগ করেন।

চট্টগ্রামে সংস্কৃতি কর্মীরা ১৯৭১ সালের ১৫ মার্চের সংগীতানুষ্ঠান ও মমতাজ উদ্দীন আহমদের নাটক ‘এবারের সংগ্রাম’ এবং ১৬ তারিখ থেকে ট্রাকযোগে রাস্তার মোড়ে মোড়ে অনুষ্ঠান পরিবেশন করে মুক্তিযুদ্ধে জনগণকে অংশ গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে। ২৪ মার্চ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী সমিতির উদ্যোগে প্যারেড ময়দানে অভিনীত হয় মমতাজ উদ্দীন আহমদ রচিত আরেক নাটক ‘স্বাধীনতার সংগ্রাম’। স্বাধীনতা পরবর্তী বাঙালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিতে চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক কর্মীরা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট গঠনের মাধ্যমে ১৯৭২ সালে দেশের মধ্যে চট্টগ্রামে প্রথম অভিনীত হয়েছিল পথনাটক।

বাংলাদেশের অন্যান্য স্থানের মত প্রাচীনকাল থেকে চট্টগ্রামেও বিভিন্ন দেশীয় খেলাধুলার প্রচলন ছিল। আধুনিক খেলাধুলার প্রচলনের পর থেকে চট্টগ্রাম ফুটবল, ক্রিকেট, হ্যান্ডবল, শ্যুটিং, অ্যাথলেট, বিলিয়ার্ড, স্নুকার ও দাবা খেলায় যথেষ্ট এগিয়ে রয়েছে। উল্লেখ্য খেলায় বিভিন্ন ক্রীড়াবিদ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অংশগ্রহণ করে চট্টগ্রামের সুনাম অক্ষুণ্ন রেখেছেন। পূর্বে কলেজিয়েট স্কুল মাঠ, পলোগ্রাউন্ড ও জাম্বুরি মাঠ ছিল ফুটবল-ক্রিকেটসহ অন্যান্য খেলার স্থান। বর্তমানে চট্টগ্রামের খেলাধুলার প্রাণকেন্দ্র এমএ আজিজ স্টেডিয়াম প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭৭ সালে। এটি একটি আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম যেখানে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ক্রিকেট ও ফুটবলের পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ের ক্রিকেট ও ফুটবল খেলা নিয়মিত অনুষ্ঠিত হচ্ছে। চট্টগ্রামের তথা দেশের ক্রিকেট খেলাকে আরও বেশি উন্নত করার লক্ষ্যে আলাদা করে ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় ২০,০০০ ধারণক্ষমতা সম্পন্ন জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়াম।

৩১ ডিসেম্বর ২০২০ সালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর তথ্যানুসারে বাংলাদেশে অনলাইন গণমাধ্যম ব্যতীত নিবন্ধিত পত্র-পত্রিকার সংখ্যা ছিল ৩২১০টি। যার মধ্যে ১৩৫৭ টি ঢাকা এবং ১৮৫৩ টি অন্যান্য জেলা থেকে প্রকাশিত হয়। পত্রিকাগুলোর মধ্যে দৈনিক পত্রিকা ১৩০৯টি, অর্ধ-সাপ্তাহিক ১২১৪টি, পাক্ষিক ২১৬টি, মাসিক ৪২৫টি, দ্বি-মাসিক ৮টি, ত্রৈ-মাসিক ৩০টি, চতুর্থমাসিক ১টি, ষান্মাসিক ২টি এবং বার্ষিক পত্রিকা রয়েছে ২টি। চট্টগ্রামের উল্লেখযোগ্য পত্রিকাগুলোর মধ্যে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পত্রিকা দৈনিক আজাদী (১৯৬০), দৈনিক পূর্বকোণ (১৯৮৬), দৈনিক বীর চট্টগ্রাম মঞ্চ (১৯৯৭), দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ (২০০৩) এবং দৈনিক পূর্বদেশ (২০১২)  প্রিন্ট ও অনলাইন উভয় সংস্করণে প্রকাশিত হচ্ছে। অনলাইন ভিত্তিক পত্রিকার মধ্যে রয়েছে নিউজ চিটাগং ২৪, সিটিজি নিউজ ডট কম, সিটিজি বার্তা ২৪ ডট কম, সিটিজি ট্রিবিউন, চিটাগাং ডেইলি, সিটিজি টাইমস ডট কম ইত্যাদি।

কালের পরিক্রমায় পরবর্তীতে যুগের চাহিদায় সংবাদপত্রের সাথে নতুন সংযোজন ঘটে টেলিভিশন, বেতার ও চলচ্চিত্রসহ নানা ইলেকট্রনিক মিডিয়ার। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ইতিহাস বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর সাদা-কালো সম্প্রচারের মাধ্যমে বাংলাদেশ টিলিভিশনের যাত্রা শুরু হয়, যেটি ঐসময়ে পাকিস্তান টেলিভিশন নামে পরিচিত ছিল। ১৯৮০ সালে এটির রঙিন সম্প্রচার করা হলেও মূলত স্যাটেলাইট টেলিভিশনের যাত্রা শুরু ১৯৯২ সালে। শুধু ১ ঘণ্টার অনুষ্ঠান সম্প্রচারের মাধ্যমে ১৯৯৬ সালের ১৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে ৩ ঘণ্টা, ৬ ঘণ্টা এবং বর্তমানে ১২ ঘণ্টা সম্প্রচারের ফলে চট্টগ্রামের শিল্পীসমাজ এবং সংস্কৃতসেবীরা বিপুলভাবে উপকৃত হচ্ছেন।

গণমাধ্যমের অন্যতম বাহন রেডিও যাত্রা শুরু করে ১৯৩৯ সালে অল ইন্ডিয়া রেডিও ঢাকা কেন্দ্র চালুর মধ্য দিয়ে। চট্টগ্রামের শাখা কেন্দ্রটি ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের উষালগ্নে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র নামে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা প্রচারের মাধ্যমে বাংলাদেশের ইতিহাসে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রথম যাত্রা শুরুর গৌরব অর্জন করে। ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধী বহুকাল পূর্বেই বলেছিলেন, ‘চট্টগ্রাম সর্বাগ্রে’। ভারতের প্রখ্যাত নগর-শহর-জনপদকে ছাড়িয়ে চট্টগ্রামের নাম উল্লেখ করার পিছনে যে যুক্তিটি কার্যকর ছিল তার বিশ্লেষণ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। যুব বিদ্রোহের অগ্রগণ্য নেতা মাস্টার দা সূর্যসেন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারসহ ব্রিটিশ বিরোধী-পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে চট্টগ্রামের ভূমিকা ছিল অসাধারণ। ধর্মীয় দাঙ্গা-হাঙ্গামা-বিরোধ-বিচ্ছেদ ইত্যাদির উৎপাটনে চট্টগ্রামের সর্বস্তরের নেতৃবৃন্দের অবদান, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তির মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রাক্কালে ৬ দফা পেশ ও তার অনুকূলে জনমত গঠন এবং ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার প্রচারভূমি রূপে চট্টগ্রামকে শুধু বাংলাদেশ নয়; বিশ্ব ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অধ্যায়ে সংযুক্ত করেছে।

চট্টগ্রামের যানজট নিরসন, জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানে সিডিএ ও সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। সিডিএ নগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় যানজট নিরসনকল্পে ফ্লাইওভার নির্মাণ করেছে। নির্মিত ফ্লাইওভারগুলো হচ্ছে- ১০৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ১ দশমিক ৩৩ কিলোমিটার দীর্ঘ চট্টগ্রামের প্রথম ফ্লাইওভার বহদ্দারহাট এম এ মান্নান ফ্লাইওভার, ২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ২ হাজার ১৩২ ফুট লম্বা এবং ২৮ ফুট প্রস্থ দেওয়ানহাট ফ্লাইওভার, ৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ১ দশমিক ১ কিলোমিটার দৈর্ঘের কদমতলী ফ্লাইওভার এবং ৬৯৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকায় র‌্যাম্পসহ ৬ দশমিক ৮ কিলোমিটারের চট্টগ্রামের এ যাবতকালের বৃহৎ আখতারুজ্জামন চৌধুরী ফ্লাইওভার এবং ফৌজদারহাট থেকে বায়েজিদ বোস্তামি পর্যন্ত চিটাগাং বাইপাস সড়ক। নির্মাণাধীন রয়েছে ৩ হাজার ২৫০ কোটি ৮৪ লাখ টাকার ১৬ দশমিক ৫ কিলোমিটারের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত সাগরপাড়ে প্রায় ১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ আউটার রিং রোড (সড়ক কাম বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্প), চাক্তাই-কালুরঘাট আউটার রিং রোডসহ ছোট-বড় অনেক প্রকল্প। চট্টগ্রামের বহুল আলোচিত সমস্যা জলাবদ্ধতা নিরসনে ৯ আগস্ট ২০১৭ একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন প্রদান করেন। শহরের জলাবদ্ধতা দূর করা, খাল পুনরুদ্ধার এবং অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ, খালের পারে রাস্তা নির্মাণ, খাল পরিষ্কার রাখার স্থায়ী ব্যবস্থা, শক্তিশালী ড্রেনেজ ব্যবস্থার লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বাক্ষরিত সমঝোতা চুক্তি মোতাবেক ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে।

বৃহত্তর চট্টগ্রামে বিনিয়োগ, শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানের নতুন দিগন্ত সৃষ্টির লক্ষ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে মিরসরাইয়ে প্রায় ৩১ হাজার একর জমিতে নির্মিত হচ্ছে উপমহাদেশের বৃহত্তম বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরী এবং আনোয়ারায় হচ্ছে দুটি চীনা অর্থনৈতিক জোন। ২০১৪ সালের নভেম্বরে বেপজা দেশের বৃহত্তম অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন কাজ শুরু করে। এখানে ১০০ একর ভূমিতে নির্মিত হবে ‘শেখ হাসিনা সরোবর’। আরও থাকবে নান্দনিক পর্যটন কেন্দ্র, দৃষ্টিনন্দন ফোয়ারা, আন্তর্জাতিক মানের পাঁচ তারকা হোটেল ও রিসোর্ট, গার্মেন্ট পল্লী, শিল্প প্লট, ২৫টি আলাদা জোন, ছোট-বড় নানা অবকাঠামো, ভাঙন-প্রতিরোধী বেড়িবাঁধ, পিচঢালা পথ ইত্যাদি।

প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ২০৩০ সালের মধ্যে কর্মসংস্থান হবে প্রায় ১৫ থেকে ২০ লাখ মানুষের। চায়না অর্থনৈতিক জোনটি শতভাগ চীনের বিনিয়োগে ১৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। ৭ ডিসেম্বর ২০২১ প্রকাশিত গণমাধ্যম সূত্রে, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত সম্মানিত চসিক মেয়রের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে বলেন, ‘চট্টগ্রাম প্রাকৃতিকভাবে সুন্দর একটি নগরী। চট্টগ্রামকে ঘিরে বাংলাদেশের যে উন্নয়ন হচ্ছে তাতে ভবিষ্যতে চট্টগ্রাম হবে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়নের হাব।’

সরকারের গৃহীত ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার অর্থনৈতিক করিডোর বাস্তবায়ন, কর্ণফুলী নদীর ওপারে গড়ে ওঠা অর্থনৈতিক জোন ও সমৃদ্ধ আরেক মহানগরী, দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সাথে চট্টগ্রাম ও ঢাকার দূরত্ব কমিয়ে আনা, প্রস্তাবিত সোনাদিয়া সমুদ্রবন্দরের সাথে যোগাযোগ স্থাপনসহ নানামুখী উদ্দেশে ১৪ অক্টোবর ২০১৬ সালে চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্নের কর্ণফুলী টানেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়। চট্টগ্রামকে পরিপূর্ণভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার হাব হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনায় কর্ণফুলী নদীর দুই তীরের কর্মযজ্ঞ বিবেচনায় নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।

২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি টানেলের নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে এর মধ্যে ৭৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ কাজের অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। চুক্তি মোতাবেক আগামী বছরের ডিসেম্বরে প্রকল্পটি শেষ হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দাবি করছেন। সামাজিক-রাজনৈতিক- পেশাজীবী-সুশীল সমাজের অনেক বিষয়-ব্যক্তিত্বচরিতের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ এই পর্যায়ে সংকুলান করা গেল না বলে আন্তরিকভাবে দুঃখিত। উল্লেখিত উন্নয়ন-অগ্রগতির অর্জন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধসহ নানা গণতান্ত্রিক-অসাম্প্রদায়িক আন্দোলন-সংগ্রামে অকুতোভয় চট্টগ্রামবাসীর ত্যাগ-তিতিক্ষা ইতিহাসে চিরঞ্জীব অধ্যায় হিসেবে পরিগণিত হবেই।

লেখক : শিক্ষাবিদ, সাবেক উপাচার্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট