চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

পদুয়ার হর্দ্দার মাঠ ক্রীড়ামোদী দর্শকের পদচারণায় আজো মুখরিত

এম. এম. আহমদ মনির হ লোহাগাড়া

১৯ জানুয়ারি, ২০২০ | ৪:০১ পূর্বাহ্ণ

ফুটবল খেলার বহুল আলোচিত পদুয়ার হর্দ্দার মাঠ আজো টিকে আছে কালের সাক্ষী হয়ে। পাশে রয়েছে হর্দ্দারের জমিদার বাড়ি এবং মাঠ সংযুক্ত রয়েছে হেদাকারের হর্দ্দার দিঘি। এছাড়া পাশাপাশি রয়েছে পদুয়া তেওয়ারীহাট। পরবর্তীতে গড়ে উঠে পদুয়া এ.সি.এম উচ্চ বিদ্যালয়, এসআই চৌধুরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও ওয়ার্ড বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই কারণে মাঠের গুরুত্ব বর্তমানে অনেক বেশি।
উল্লেখ্য, ফুটবল খেলার অন্যতম স্থান পদুয়ার হর্দ্দার মাঠ। প্রাচীনকাল থেকে এর পরিচিতি ও প্রচার সুদূরপ্রসারী। আনুমানিক ১৮০০ সালের প্রথমার্ধে গুপ্ত বাড়ির অন্যতম জমিদার রামমোহন গুপ্তের পুত্র শরৎ চন্দ্র গুপ্ত ও কৃষ্ণ চন্দ্র গুপ্তের পৃষ্ঠপোষকতায় এ খেলার মাঠ নির্মিত হয়।
সূত্রে জানা যায়, গুপ্ত বাড়ির হিন্দুস্তানী দারোয়ান ওইসময় জনগণের অভাব দূরীকরণে মাঠ সংলগ্ন খোলা জায়গায় প্রতি রবিবার ও বুধবারে সাপ্তাহিক হাট বসতো। উক্ত দারোয়ানের নাম তেওয়ারী। তার নামানুসারে উক্ত হাটের নামকরণ হয় তেওয়ারী হাট। হাট বসানোর পর দূর-দূরান্তের ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম ঘটে প্রচুর এবং গড়ে উঠে স্থায়ী দোকানপাট। এ কারণে তীব্রভাবে পানি সঙ্কট দেখা দেয়। পানির অভাব নিরসনে দিঘি খননের উদ্যোগ গ্রহণ করেন উল্লেখিত জমিদার বাড়ির দু’সহোদর শরৎ চন্দ্র গুপ্ত ও কৃষ্ণ চন্দ্র গুপ্ত। শত শত মাটি কাটার শ্রমিক নিয়োগ করেন দিঘি খনন কাজে। ৫/৬ মাসের মধ্যে বিশাল আকারের দিঘি খনন কাজ শেষ হয়। পরে এ বিশাল দিঘি হর্দ্দার দিঘি নামে পরিচিতি লাভ করে। একই সময় খননকৃত দিঘির মাটি দিয়ে ভরাট করে তেওয়ারীহাট বাজার চত্বর এবং দিঘির পূর্বপাড় সংলগ্ন খোলা নিচু জায়গা ভরাট করে উঁচু সমতল জায়গায় পরিণত করা হয়। যেহেতু, দিঘি খননের এতগুলো মাটি স্বাভাবিকভাবে ফেলে দেয়ার কোন সুযোগ ছিল না। তাই ভরাট করা এক জায়গায় বসে হাট এবং হেদাকারের হর্দ্দার দিঘির সমতল জায়গাটি খেলার মাঠে পরিণত হয়। এরপর তৎকালীন অবিভক্ত সাতকানিয়া থানার ক্রীড়াঙ্গনে সৃষ্টি হয় নতুন আলোড়ন পদুয়ার হর্দ্দার মাঠ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে সর্বত্র। উল্লেখ্য, তৎকালীন পাকিস্তান আমলে টুর্নামেন্ট খেলার পাশাপাশি রাজনৈতিক জনসভাও অনুষ্ঠিত হতো। ক্রীড়াজগতে আলোড়ন সৃষ্টি করেন তৎকালীন ফুটবল খেলোয়াড় মারী, মেকোয়া, শান্ত লাল, কবির তহশীলদার, সুপ্রকাশ গুপ্ত, চন্দনসহ আরো অনেক কৃতি ফুটবল খেলোয়াড়। খেলা ও জনসভা এই হর্দ্দার মাঠের পরিচিতি বহুলাংশে বৃদ্ধি করে। বিশেষ করে তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান প্রয়াত কালী শংকর খেলাধুলা ও জনহিতকর কাজে প্রচুর অবদান রাখেন বলে স্থানীয় প্রবীণ লোকেরা জানান। ১৯৬৩ সালে দিঘির দক্ষিণপাড়ে প্রতিষ্ঠিত হয় পদুয়া এসিএম উচ্চ বিদ্যালয়। মাঠ ও দিঘীর দক্ষিণ-পশ্চিমাংশ গুপ্ত বাড়ির জমিদারগণ বিনামূল্যে বিদ্যালয়কে দান করেন। প্রতিবছরের মাঘ মাসে মাঠে অনুষ্ঠিত হয় মাঘী পূর্ণিমা। এ উপলক্ষে সূর্যব্রত খেলা এবং বছরের বিভিন্ন সময় অনুষ্ঠিত হয় ফুটবল টুর্নামেন্ট। স্থানীয় জনগণ মাঠটি সংস্কারের জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট