পার্বত্যাঞ্চলে মিষ্টি পানের চাষাবাদ বেড়েছে। এখানকার সমতল ভূমিতে মিষ্টি পানের চাষ করে সাফল্য পেতে শুরু করেছে কৃষকরা। পুষ্টিমান ভালো ও সুস্বাদু হওয়ায় পাইকারদের মাধ্যমে স্থানীয় মিষ্টি পান ইতিমধ্যে জেলার বাইরেও যাচ্ছে।
স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে এই মিষ্টি পান পাইকাররা সমতল ভূমির জেলায় নিয়ে যাচ্ছে। জেলার দিঘিনালা ও পানছড়ির মাইনী ও চেঙ্গী নদীর অববাহিকায় সমতল ভূমিতে পান চাষ করে সফলতা পেয়েছে চাষীরা। দিঘিনালা, পানছড়ি, বাবুছড়াতে পান চাষ হচ্ছে ব্যাপক আকারে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দিঘিনালার তেভাংছড়া নৌকাছড়া এলাকায় বিক্রির জন্য পানের বিড়া (২০ গ-া) সুন্দর করে গেঁথে সাজাচ্ছেন চাষীরা।
কর্মব্যস্ত পানচাষী সমন্ত চাকমা জানান, ‘এখন পান বিক্রি করার জন্য বাজারে নিতে হয় না। গ্রামে এসে বেপারিরা পান কিনে নিয়ে যায়। গ্রামের চারপাশে সারি-সারি পানের বরজ। বেশিরভাগ গ্রামবাসী পান চাষের সাথে জড়িত।
চাষীরা জানান, বিশ শতকের একটি বাগানে পান চাষ করতে খরচ হয় ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। একটি সুস্থ ও পরিপক্ব পান গাছে ভালো ফলন হলে ৮০ থেকে ১৪০টি পর্যন্ত পানপাতা হয়। মুনাফা বেশি হওয়ায় চাষীদের মধ্যে পান চাষে আগ্রহ বাড়ছে দিন দিন। প্রতি বিড়া পান মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৪০ টাকায়। ভালো ফলন ও বাজারে দাম ভালো থাকলে বিশ শতক জমিতে ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করা যায়। সাপ্তাহিক হাটের দিন সাধারণত চাষীরা পান তুলত আগে। এখন পাইকারি ব্যবসায়ীরা প্রতিদিনই পান কিনতে আসায় পানচাষীদের ব্যস্ত সময় কাটে। মৌসুমের পৌষ মাস পর্যন্ত পান সংগ্রহ চলবে।
সম্ভাবনাময় এই কৃষিজ শিল্প টিকিয়ে রাখতে কৃষি বিভাগের কোন সহযোগিতা পান না বলে অভিযোগ করেছে চাষীরা। পান চাষে নানা রোগ-বালাইয়ের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কোন প্রতিকার পাচ্ছে না কৃষকরা। এছাড়া পান চাষে সরকারিভাবে কোন প্রণোদনাও নেই। জমিতে টিএসপি, এসওবি, এমওপি, জিপসাম এবং প্রচুর পরিমাণে জৈবসার দিতে হয়। নিয়মিত কীটনাশক প্রয়োগ না করলে বরজ নানা রোগে আক্রান্ত হয়।
সার এবং কীটনাশক বাবদ চাষের খরচ বেড়েছে। গাছের গোড়ায় পচন ও পাতা ছিদ্র হয়ে যাওয়া রোগেও আক্রান্ত হয় ক্ষেত। সরকারি সহযোগিতা পেলে পান চাষ আরো সম্প্রসারণ করা যেত বলে কৃষকদের ধারণা।
সমতল জেলা থেকে আসা পানের পাইকারি ব্যবসায়ী সুমন দে জানান, দিঘিনালা, নৌকাছড়া, তোভাংছড়া, বাবুছড়া, নুনছড়ি পাহাড়ি পাড়ায় গিয়ে মিষ্টি পান সংগ্রহ করি। একসময় চট্টগ্রামের মহেশখালী, বাঁশখালীর পানের ওপর নির্ভর করতে হতো। কিন্তু বর্তমানে পাহাড়ে পানের উৎপাদন বাড়ায় ও এখানকার পান সুস্বাদু হওয়ায় এ পানের কদর সমতল জেলায় খুব বেশি।
খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মর্ত্তুজ আলী জানান, ‘পাহাড়ের মাটি ও আবহাওয়া পান চাষের উপযোগী। পান খুবই সংবেদনশীল ফসল। পানের সবচেয়ে মারাত্মক রোগ পাতায় মড়ক। মড়ক দেখা দিলে চাষীরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়। সঠিক পরিচর্যা করতে পারলে পান চাষে কৃষকরা আরো অধিক পরিমাণে সফলতা পাবে।