চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

উদালিয়া চা বাগানে সবুজের হাতছানি

ক্ষতি কি, হারিয়ে যাই যদি ঐ দূর তেপান্তরে

নয়ন চৌধুরী, হাটহাজারী

১২ জানুয়ারি, ২০২০ | ৪:৫১ পূর্বাহ্ণ

নারী শ্রমিকরা কাঁধের ঝুড়িতে জমা করছেন চা পাতার কুঁড়ি। চারপাশে পাখির কলতান। লাল মাটির সবুজে ঢাকা ছোট ছোট পাহাড়ের মাঝে আঁকাবাঁকা পথ চলে গেছে দিগন্তের পানে। দৃষ্টিনন্দন মনোলোভা প্রাকৃতিক দৃশ্য। ভ্রমনের ভালো জায়গা বটে। ইচ্ছে করে হারিয়ে যাই সবুজের ঐ দূর তেপান্তরে।
চা বাগান মানেই সবাইভাবে এ চিত্র বুঝি সিলেটের। শুধু সিলেট নয়, চট্টগ্রামেও আছে চা বাগান। জেলার ফটিকছড়ি উপজেলায় চা বাগানের সংখ্যা মোট ১৭টি। চা শিল্পে সমৃদ্ধ ফটিকছড়ি। ফটিকছড়িতে কর্ণফুলী চা বাগান, উদালিয়া চা বাগানসহ বেশ কয়েকটি বড় চা বাগান আছে। প্রায় ২’শ বছরে আগে বৃটিশ শাসন আমলে এই এলাকায় গড়ে ওঠে চা বাগান। এসব চা বাগানকে কেন্দ্র করে উত্তর চট্টগ্রামের বাণিজ্য কেন্দ্র নাজিরহাট পর্যন্ত রেল লাইন গড়ে উঠেছিল। এছাড়াও উদালিয়া চা বাগানে রয়েছে বাংলাদেশ চা গবেষণা ইন্সটিটিউটের একটি কেন্দ্র। কর্ণফুলী চা বাগান ফটিকছড়ি থানা সদর থেকে ৫ কি.মি. পূর্বে লেলাং ইউনিয়নে। আর হাটহাজারী উপজেলার ১ নং ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের থেকে ৪ কি.মি. দূরে উদালিয়া চা বাগান। চা বাগান দেখতে তাই ঘুরে আসতে পারেন ঘরের কাছে নাজিরহাট-ফটিকছড়ি এলাকায়। এখানকার ছোট ছোট পাহাড়ি টিলায় উঁচু-নিচু সারি সারি সবুজ চা গাছ। সবুজ নিসর্গে হারিয়ে যেতে চায় মন। এসব চা বাগানে বন বিড়াল, বন মোরগ, খরগোশ, অজগর সাপসহ অনেক দুর্লভ প্রাণীরও দেখা মিলতে পারে।
প্রতিটি চা বাগানে রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ভিন্ন নিজস্ব রূপ। চিরাচরিত নিয়মে নারী চা শ্রমিকদের সবুজ চা সংগ্রহের মনোরম দৃশ্য আর তাদের ঘাম ঝরানো পরিশ্রম হৃদয়ব্যাকুল করে তোলে। উদালিয়া চা বাগানের সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে আপনার অবাক লাগবে। চট্টগ্রামের বড় ও উন্নয়নশীল চা বাগানগুলোর মধ্যে উদালিয়া চা বাগান একটি। এক সময়ের অবহেলিত এই চা বাগানটি ২০০৩ সালে দেশের নামকরা শিল্প প্রতিষ্ঠান মোস্তাফা গ্রুপ কিনে নেয়ার পর বহুমুখী উন্নয়ন পরিকল্পনার মাধ্যমে বাগানটি সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছেছে।
২ হাজার ৯৯৫ একর পাহাড়ি টিলা ও সমতল ভূমিতে গড়ে উঠা বাগানটিতে চা’র পাশাপাশি রাবার, ফলজ ও ঔষধি গাছের বাগান এবং মাছ চাষ করছে কর্তৃপক্ষ। ফলজ বৃক্ষের মধ্যে ড্রাগন, আম, লিচু, সফেদা, কমলা, বরই, কলা, পেঁপে, কাঁঠাল, লিচু, লেবুসহ দেশি-বিদেশি আরো বিভিন্ন ফলজ বৃক্ষ লাগানো হয়েছে। ওষুধি বৃক্ষের মধ্যে অর্জুন, নিম, বহেরা, নিশিন্দা, কারেঞ্জা, জাফরান, আশোক, হরতকী, আমলকী, আগর, চন্দনসহ নানা প্রজাতির গাছে গড়ে তোলা হয়েছে ওষধি বাগান। আগামী কয়েক বছরে ওষধি বৃক্ষের এ বাগান দেশের হারবাল চিকিৎসায় অবদান রাখবে বলে কর্তৃপক্ষ আশাবাদী। বাগানের প্রাকৃতিক লেক এবং অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকা সংস্কার করে মাছ চাষ করা হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, চা-পাতা তোলা শুরু করার আগেরদিন বাগানের ভেতর ফকির টিলায় ফকির বাবার আস্তানা শরীফে শ্রমিকরা পূজা দিচ্ছেন। জানতে চাইলে তারা জানান, আমাদের বিশ্বাস চা-পাতা তোলার আগে এ পূজা দিলে ভালো চা-পাতা পাওয়া যায় এবং সকলের মঙ্গল হয়। পরদিন নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে চা-পাতা উত্তোলন শুরু করেন শ্রমিকরা। চা বাগানের বাংলোগুলো সৌখিনভাবেই তৈরি করা হয়েছে। এগুলো দেখতে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রতিদিন অনেক পর্যটক ও দর্শনার্থী এখানে ঘুরতে আসে। তবে পর্যটক ১০-১২ জনের একটি দলে ঘুরতে আসা ভালো। কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে পর্যটকরা চা বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করেন।
যেভাবে যাবেন: চট্টগ্রাম শহরের নিউমার্কেট বা মুরাদপুর থেকে হাটহাজারীর দ্রুতযান বাস সার্ভিসে হাটহাজারী বাসস্ট্যান্ডে নেমে রিজার্ভ সিএনজি বা লোকাল বাসে করে নূর আলী মিয়ারহাট (নয়াহাট) নেমে সোজা পশ্চিমে অটোরিকশা বা ট্যাক্সিযোগে গেলেই উদালিয়া চা বাগান। ভাড়ার কার বা অন্য গাড়িতে করেও যাওয়া যাবে এই চা বাগানে। তবে উদালিয়া চা বাগানে নতুন রেল স্টেশন বা ষোলশহর রেল স্টেশন থেকে ডেমু ট্রেনে চড়েও যেতে পারবেন। চা বাগান ঘুরে আবার দিনে দিনেই ফিরতে পারবেন চট্টগ্রাম শহরে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট