চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

৬’শ মানুষ নামাজ আদায় করবে একসঙ্গে রাউজানের প্রত্যন্তে বিদেশি আদলে

দৃষ্টিনন্দন জামে মসজিদ

জাহেদুল আলম, রাউজান

১২ জানুয়ারি, ২০২০ | ৪:৫০ পূর্বাহ্ণ

রাউজানের অঁজপাড়া গায়ে বিদেশী আদলে দৃষ্টিনন্দন একটি মসজিদ গড়ে উঠেছে। এ মসজিদ এলাকার সাধারণ মানুষের দৃষ্টি কেড়েছে। উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের গর্জনীয়া এলাকায় এ মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে। বিশাল আকারে মফস্বল এলাকায় এ মসজিদটি চোখে পড়ার মতো। রাউজান সদর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার উত্তরে হলদিয়া ভিলেজ সড়কের পাশে গর্জনীয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন জায়গায় মসজিদটি নতুন আঙ্গিকে পুনরায় নির্মাণ করা হয়। প্রায় দু’শ বছর আগে ওই জায়গার পুরাতন মসজিদটি সংস্কার করে আধুনিকভাবে পুনর্নির্মাণ করা হয়। ইতিমধ্যে মসজিদটির পুরো কাজ শেষ হওয়ায় গত ৩১ ডিসেম্বর এটি উদ্বোধন করা হয়েছে।
সরেজমিন গিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওইস্থানে ২’শ বছরের প্রাচীনতম ঝুঁকিপূর্ণ মসজিদটি ভেঙে বিদেশি আদলে করার প্রথম উদ্যোগটি নেন স্থানীয় মরহুম হাজী ইদ্রিস মিয়া মিস্ত্রির ছেলে দুবাই প্রবাসী মাওলানা ওসমান তালুকদারসহ স্থানীয়রা। ৬০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৫০ ফুট প্রস্থের বিশাল মসজিদটিতে একসাথে ৬’শ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। মসজিদের ভিতরে মারবেল পাথর দিয়ে টাইলস, অর্ধশতাধিক বৈদ্যুতিক পাকা, আধুনিক প্রযুক্তির আলোক বাতি, শীততাপ নিয়ন্ত্রিত দরজা জানালা, বিশাল গম্বুজ, প্রায় ৫০ ফুট উচ্চতার মিনার তৈরি করা হয়েছে। আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া গত মাহে রমজান শুরুর কয়েকদিন আগে মুসল্লিদের নামাজের জন্য মসজিদটি উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। তবে গত ৩১ ডিসেম্বর এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন দানবীর একেএম মনির চৌধুরী।
এদিকে ২০১৭ সালে ডিসম্বরের প্রথম সপ্তাহে মসজিদটি বিদেশি আদলে নির্মাণ করার লক্ষ্যে নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। আবুধাবী প্রবাসী মাওলানা ওসমান তালুকদার মসজিদটি নতুন আদলে নির্মাণে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য এলাকাবাসীর সাথে মতবিনিময় করেন বেশ কয়েকবার। এলাকার মুসল্লিদের নিয়ে একটি নির্মাণ কমিটি করে দেয়া হয়। পরে ওসমান তালুকদার দুবাইতে এলাকায় একটি মসজিদের বেশি প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে প্রবাসী একেএম মুনির চৌধুরীর সাথে আলাপ আলোচনা করেন। আর মুনির চৌধুরী এতে মসজিদ করার পক্ষে সাই দেন। ওসমান তালুকদার, মাওলানা আলী রেজাসহ আরো বেশ ক’জন প্রবাসী মিলে মুনির চৌধুরীর সাথে বৈঠক করে দিনক্ষণ ঠিক করে দেশে এসে মসজিদটির জায়গা পরিদর্শন করেন। এরপর তারা বিদেশি আদলে তৈরী করেন বেশ কয়েকটি আধুনিক নকশা।
এলাকার মুসল্লিদের থেকে নেয়া হয় নকশার মতামত। এরপর পছন্দের নকশাটি দিয়ে মসজিদ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। শুরু হয় কর্মযজ্ঞ। মসজিদটি নির্মাণে আর্থিক সহযোগিতার দ্বার উন্মুক্ত রাখা হয় যাতে ছোট, বড়, গরীব সবাই সহযোগিতা করতে পারেন। শুরু হয় প্রাচীনতম এ মসজিদটির নতুন শৈলির কাজ।
উত্তর চট্টগ্রামের পীরে কামেল, রাউজান হলদিয়া গর্জনীয়া রহমানিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা হযরত শাহসুফি সৈয়দ আবদুল গফুর মাস্টার শাহ (রহ.) স্মৃতি বিজরিত এ মসজিদটিতে তিনি নিজেই ইমামতি করেছেন দীর্ঘ ৭০ বছর কাল। হারিকেন নিয়ে ইমামতি করা এ বুজুর্গ ব্যক্তি বলতেন, ‘এ মসজিদে উলামায়ে কেরামগণ নামাজ পড়তে আসতেন রাতের বেলায়। যাদেরকে (রেজাউল গায়েব বলা হয়)। বর্তমান হুজুরের সুযোগ্য উত্তরসূরি গর্জনীয়া ফাজিল মাদ্রাসার সাবেক প্রিন্সিপাল আল্লামা শাহজাদা সৈয়দ আহছান হাবিব (মা.জি.আ) এ মসজিদে খতিবের দায়িত্বে নিয়োজিত থেকে মানুষকে হেদায়েত প্রদান করছেন দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে।
এ মসজিদটি নির্মাণে অবদান রাখেন রাউজান উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান একেএম এহেছানুল হায়দার বাবুলের ছোট ভাই প্রবাসী একেএম মুনির চৌধুরী। মুনির চৌধুরী, মাওলানা ওসমান তালুকদার, মাওলানা আলী রেজাসহ অনেকে মসজিদটি নির্মাণে প্রবাস থেকে আর্থিক যোগান দিয়েছেন। স্থানীয় মুসল্লিদের মতে, বিশাল এ মসজিদটি রক্ষণাবেক্ষণসহ প্রতিনিয়ত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে কমপক্ষে দুজন কর্মচারী নিয়োগের প্রয়োজন। প্রতিদিন মসজিদ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা না হলে মসজিদের সৌন্দর্যে কমে যাবে। মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর সিকদার বলেন, ‘সমগ্র রাউজান এলাকায় এ ধরনের আধুনিক পদ্ধতি ও বিদেশি আদলে মসজিদ নির্মাণ হয়নি। তবে কথা হচ্ছে মসজিদের খোরাক হচ্ছে মুসল্লি।’
এদিকে এক তলাবিশিষ্ট মসজিদটি নির্মাণে অর্ধ শতাধিক রাজমিস্ত্রি রাত-দিন কাজ করেছেন দীর্ঘ দেড়বছর। তাদের কাজ তদারকি করেছেন ব্যাংকার মকসদুল করিমও একজন ইঞ্জিনিয়ার। সবমিলিয়ে নতুন মসজিদে মুসল্লিগণ ওয়াক্ত মতো নামাজ আদায় করলেই শ্রম সার্থক হবে উদ্যোক্তাদের বলেন স্থানীয়রা।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট