চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

খাগড়াছড়ির হাট-বাজারে মৌসুমী ফলের সমারোহ

নিজাম উদ্দিন লাভলু , রামগড়

১৯ মে, ২০১৯ | ১:৪৬ পূর্বাহ্ণ

খাগড়াছড়ির বিভিন্ন উপজেলার হাট-বাজারগুলোতে এখন রসালো ফলের সমারোহ। কাঁঠাল, লিচু, আনারসহ নানা মৌসুমী ফলের মৌ মৌ গন্ধ এ পাহাড়ি জনপদের হাট-বাজারজুড়ে। এবার দামও ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে। স্থানীয় চাহিদা পূরণ শেষে এখান থেকে ফলের চালান চলে যাচ্ছে সমতলের বিভিন্ন স্থানে।
পাহাড়ের সুমিষ্ট আম আ¤্রপালি বাজারে আসতে আরো কিছুদিন দেরি হলেও ইতিমধ্যে বাজার দখল করে নিয়েছে লিচু, আনারস, কাঁঠাল, কলা প্রভৃতি মৌসুমী ফল। রমজানের শুরুতেই লিচু বাজারে আসতে শুরু করে। রসে ঠাসা চায়না থ্রি লিচুর চাহিদা বরাবরের মতোই আকাশচুম্বী। দামের দিকটা নয়, স্বাদের প্রতিই ক্রেতাদের দৃষ্টি থাকে। স্থানীয় বাজারে ১শ’ চায়না থ্রি লিচু বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ । অন্যদিকে চায়না-টু বা দেশি লিচু বিক্রি হচ্ছে হতে একশ হতে দুইশ টাকায় আড়াইশ টাকায়। রামগড়ের লিচু স্থান করে নিয়েছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। চায়না থ্রি বা চায়না টু সম্পূর্ণ পরিপক্ক হতে আরও সপ্তাহ ২-১ লাগার কথা থাকলেও বেশি দামের আশায় বাগানিরা এখনই বিক্রি শুরু করেছে। তবে বাগানিরা জানায়, বানর, বাঁদুড়, কাঠবিড়ালির আক্রমণের কারণে তাড়াতাড়ি করে বিক্রি করতে হচ্ছে। লিচুর চেয়ে শতগুণ বেশি যাচ্ছে কাঁঠাল। রমজান হওয়ায় এবার কাঁঠালের দাম গতবারের চেয়ে অনেক কম। একশ কাঁঠাল বিক্রি হচ্ছে আড়াই হাজার হতে ৬ হাজার টাকায়।
খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে এবার প্রচুর ফলন হয়েছে হানিকুইন নামের রসালো মিষ্টি আনারস। স্থানীয়ভাবে জলেডুবা আনারস নামে পরিচিত এ আনারসের কদর সর্বত্রই। স্থানীয় বাজারে প্রতি জোড়া আনারস বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে। স্থানীয় খুচরা বিক্রেতাদের হাত ধরে এসব আনারস স্থানীয় বাজারে আসে। আবার অনেক ক্ষেত্রে পাইকারী বিক্রেতারা বাগান থেকেই আনারস ক্রয় করে নিয়ে যান সমতল জেলায়। স্থানীয় বিভিন্ন জাতের আমও প্রচুর উঠছে হাটবাজারে। ঈদের পরই বাজারে আসতে শুরু করবে পাহাড়ের সুমিষ্ট আম আ¤্রপালি। এবার আ¤্রপালি ফলন কম হয়েছে। পাহাড়ের এ সুমিষ্ট আমের প্রতি আকর্ষণ রয়েছে দেশের সর্বত্রই। বাগান মালিকরা জানান, ঈদের পরই তারা ফল সংগ্রহ শুরু করবেন।
খাগড়াছড়ির সবচেয়ে বড় মৌসুমী ফলের বাজার হিসেবে পরিচিত গুইমারা বাজার ঘুরে দেখা যায়, আনারস, কলা ও কাঁঠালে সয়লাব। যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই কোথাও। ক্রেতা-বিক্রেতাদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে এ বাজারটি। পানছড়ি, মাটিরাঙ্গা, মানিকছড়ি ও মহালছড়িসহ আশেপাশের এলাকা থেকে ভোরের সূর্য উঠার পর থেকেই বাজারে আসতে শুরু করেছে আনারস, কলা ও কাঁঠাল। একদিন আগেই বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা এ বাজারে চলে আসেন। পাইকারদের হাত ধরে ট্রাকভর্তি আনারস, কলা ও কাঁঠাল যাচ্ছে সমতলের বিভিন্ন জেলায়। একই দৃশ্য দেখা যায় মাটিরাঙ্গা বাজারেও। সমতল জেলার পাশাপাশি হওয়ায় বিশেষ করে রামগড়, মানিকছড়ি, গুইমারা ও মাটিরাঙ্গার হাটবাজারে ফল ফলাদির আমদানী ও বিকিকিনি সবচেয়ে বেশি।
নোয়াখালী থেকে আসা পাইকার দুলাল মিয়া বলেন, পাহাড়ের ফল ফরমালিনমুক্ত নিরাপদ বলেই সমতলে এ চাহিদা ব্যাপক। এখানকার ফলের প্রতি সমতলের মানুষের আগ্রহ বরাবরই অন্যরকম। বিগত ৪/৫ বছর ধরে স্থানীয় বাজারের খুচরা ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে আনারস, কলা, লিচু ও কাঠাল সংগ্রহ করে নিয়ে যান বলেও জানান তিনি। স্থানীয় চাষীদের মতে উৎপাদন খরচের তুলনায় বাজার মূল্য অনেক কম। তারা আর্থিকভাবে তেমন লাভবান হচ্ছেন না। কাঁঠাল নিয়ে আসা স্থানীয় পাইকার অংলাপ্রু মারমা মনে করেন সমতল থেকে আসা ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ও রমজানের কারণে তারা ভালো দাম পাচ্ছেন না।
খাগড়াছড়িতে সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে হিমাগার প্রতিষ্ঠা করা গেলে স্থানীয় চাষীরা তাদের উৎপাদিত ফলের ভালো দাম পেতো বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতনমহল। তাদের মতে, হিমাগার না থাকায় এখানে উৎপাদিত ফল-ফলাদি সংরক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছেনা। অনেকটা বাধ্য হয়েই কম মূল্যে বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে করে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এখানকার চাষীরা।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট