চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

পাহাড় চূড়ায় মেঘের দেশে

আরিফ মাঈন উদ্দীন হ পটিয়া

৫ জানুয়ারি, ২০২০ | ২:৪৯ পূর্বাহ্ণ

মেঘের চাদরে মোড়ানো পাহাড়, সাদা কুয়াশায় ঢেকে আছে ধবধবে সবুজ বৃক্ষরাজি। বর্তমান সময়ে ভ্রমণ-পিপাসু মানুষের সবচেয়ে জনপ্রিয় গন্তব্য সাজেক। চারপাশে মনোরম সারিসারি পাহাড়, সাদা তুলোর মতো মেঘপুঞ্জি আমাদেরকে মুগ্ধ করেছে। গত ৮ ডিসেম্বর সিদ্ধান্ত হয় সাজেক যাওয়ার। এরপর থেকে শুরু হয় প্রস্তুতি, আমরা ‘হিকমা’ পরিবারের পক্ষ থেকে গত ২৯ ডিসেম্বর সকাল ৬টা ২০ মিনিটে পটিয়া থেকে সাজেকের উদ্দেশ্যে রওনা হই। মাঝপথে চট্টগ্রাম শহর থেকে আরো ৩ জন যুক্ত হয়। খাগড়াছড়ি স্টেশনে পৌঁছতে দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে লাগে। সেখানে দুপুরের খাবার গ্রহণ করে ৯ জনের দুইটি গ্রুপে নিয়ে ২টি জীপ গাড়ি নিয়ে সাজেক পৌঁছতে সময় লাগে সন্ধ্যা ৫টা।

নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সামরিক প্রশাসন বাঘাইহাট থেকে সাজেকের রুইলুই পর্যন্ত সেনাবাহিনী ও পুলিশ স্কট নিয়ে আসা-যাওয়া বাধ্যতামূলক রয়েছে। গাড়ি থেকে নেমে হোটেলে যাই, সেখানে কয়েক মিনিট বিরতি দিয়ে বিকালের হ্যালিপ্যাড থেকে সূর্যাস্তের রঙিন রূপ আমাদেরকে বিমোহিত করেছে। সূর্যাস্ত দেখে হোটেলে ফিরে এসে মাগরিবের নামাজ পড়ে নাস্তা করি, নাস্তা শেষ করে আবার বাহির হই, রিসোর্ট এলাকায় হেঁটে হেঁটে গান করতে করতে চলে আসি সেই হ্যালিপ্যাডে, সেখানে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে ফিরে আসি হোটেলে। সেখানে রাতযাপন করে সকালে আমরা খুব ভোরে উঠে চলে যাই হ্যালিপ্যাডে, সেখান থেকেই সবচেয়ে সুন্দর সূর্যোদয় উপভোগ করি। সবাই যার যার মতো শুরু করে দলগত ও ব্যক্তিগত ফটোসেশন, চলে মোবাইল ও ব্যক্তিগত ক্যামেরায় ক্লিকবাজি। সাজেকে অবশ্যই সকালের ভোরের সময়টা অসাধারণ। সেখান থেকে কংলাক পাহাড়ে যাই।

সেখানে কিছুক্ষণ অতিবাহিত করে আবার হোটেলে গিয়ে নাস্তাকরে একসাথে আলুটিলা গুহার উদ্দেশ্য রওনা হই। গুহাটি খুবই অন্ধকার সুড়ঙ্গ, কিছুসময় সেখানে সৌন্দর্য উপভোগ করে, জেলা প্রশাসনের র্পাকে গিয়ে সবাই ঝুলন্ত ব্রিজে, লেকে নৌকা চালিয়ে আনন্দ উপভোগ করি। সেখান থেকে গন্তব্য স্থলের দিকে রওনা হই। আমাদের দুদিন ১ রাতের প্রতিটি মুহূর্তেই ছিল উপভোগ্য। প্রতিটি মুহূর্তেই ছিল ভাল লাগা। আমরা যারা দূর থেকে সাজেকে যাই, আমাদের পরিকল্পনা কেবল সাজেকের লাল-নীলরঙে নিমার্ণ করা উঁচু-উঁচু রিসোর্ট, কটেজ দেখে ফিরে আসা নয়। সাজেক যাওয়ার উদ্দেশ্যই হলো দিঘিনালা থেকে সাজেক পর্যটন পর্যন্ত যেসব প্রাকৃতিক দৃশ্য রয়েছে, সেগুলো ভালোভাবে উপভোগ করা। সাজেক যেতে যেতে দীর্ঘ রাস্তার মধ্যে কোথাও গাড়ি থামিয়ে কোনকিছুর ছবি তোলা, চা পান করা ছিল অন্যরকম। সাজেকে দুই-তিন ঘন্টা আগে খাবারের জন্যে আমাদেরকে রেস্টুরেন্টে অর্ডার দিয়ে রাখতে হয়। আসলে সাজেকের রূপের তুলনা হয় না। পাহাড়ি মানুষজন সহজ-সরল। পর্যটন এলাকায় একটি গির্জা, একটি শিব মন্দির। সাজেকের পুরোটাই পাহাড়ে মোড়ানো পথ এটা দেখতে এত সুন্দর যে, চোখ এড়িয়ে চলা সহজসাধ্য নয়। তারপরও সময়ের সল্পতার কারণে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সবশেষ করতে হয়। আমাদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিল মুমিনুল হক। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, খাগড়াছড়ি শহর থেকে সাজেক যাওয়া-আসার সময় গাড়িতে কণ্ঠশিল্পী ওসমান ভাইয়ের কন্ঠ ধ্বনিতে আনন্দে মুগ্ধ ছিলাম এবং ভাইয়ের সাথে একই কন্ঠে সুর দিয়ে পরিবেশটা জমিয়ে তুললাম। আমি, মানিক, শাহাবুদ্দিন ও ওসমান ভাইয়ের আনন্দটা ছিল ভিন্ন। তাছাড়া, আমাদের মুগ্ধ করেছে পাহাড়ি উপজাতি ছোট্ট সন্তানরা হাত নেড়ে অভিবাদন জানানোকে। সাজেক এমনই আশ্চর্যজনক জায়গা যেখানে একই দিনে প্রকৃতির তিনরকম রূপের সান্নিধ্যে আমরা চমৎকারভাবে উপভোগ করেছি। সফরটি ছিল অন্যরকম কেননা, সাথে ছিল অনেকগুলো প্রিয়মুখ।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট