চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

বোয়ালখালী নারী শিক্ষা প্রসারে অগ্রণী ভূমিকায় কধুরখীল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়

বিকাশ নাথ হ বোয়ালখালী

২২ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৪:৩৩ পূর্বাহ্ণ

বোয়ালখালী উপজেলায় অবস্থিত কধুরখীল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টি প্রথমত সীতা সুন্দরী বালিকা বিদ্যালয়, এর পরবর্তী কধুরখীল এম.ই. গার্লস স্কুল এবং সর্বশেষে কধুরখীল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় রূপে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। সীতা সুন্দরী বালিকা বিদ্যালয় নামে ১৯০৮ সালে সূচনা হয়। কিন্তু এটি বিভিন্ন সংকটে পড়ে। পরে ১৯১৯ সালে পুনরায় এম.ই. গার্লস স্কুল নামে আত্মপ্রকাশ করে। সর্বশেষ ১৯৬০ সালে পরিপূর্ণরূপে কার্যক্রম শুরু করে অদ্যাবধি এলাকায় নারীশিক্ষা বিস্তারে অনন্য ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। শতবর্ষী বিদ্যালয়টি স্থাপনে যারা শ্রম দিয়েছেন তারা হলেনÑ প্রফুল্ল রঞ্জন চৌধুরী, মহেন্দ্র লাল বিশ^াস, মনিন্দ্র লাল চৌধুরী, হেমচন্দ্র চৌধুরী, বিনয় ভূষণ চৌধুরী, ললিত চন্দ্র চৌধুরী, শুধাংশু বিমল দাশগুপ্ত ও বিধুভূষণ চৌধুরী।

উল্লেখযোগ্য প্রধান শিক্ষকরা হলেনÑ চিত্তরঞ্জন চৌধুরী, বাদল দত্তগুপ্ত, ননী গোপাল চৌধুরী ও প্রধান শিক্ষিকা অমিয়া দাশগুপ্তা। দুর্ভাগ্যর বিষয় ১৯৭১ সালে বিদ্যালয়টি পাক-হানাদার বাহিনী কর্তৃক আক্রান্ত হয়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। তৎকালীন সময়ের এলাকার দানশীল ব্যাক্তি ও শুভানুধ্যায়ীরা বিদ্যালয় পুনর্গঠনে মনোনিবেশ করেন। তৎপরবর্তী সময়ে বিদ্যালয় বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এলাকার শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের অদম্য সাহসিকতায় বিদ্যালয়টি রক্ষা পায়।

বর্তমানে বিদ্যালয়টি এলাকায় নারীশিক্ষা বিস্তারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। ১৯৯৮ সাল থেকে পরবর্তী সময়ে বিদ্যালয়ে অভূতপূর্ব কাজ সম্পাদিত হয়। তৎকালীন সময়ে বিদ্যালয় পরিচালনার দায়িত্বে যারা ছিলেন তাদের অবদান অনস্বীকার্য। ওইসময়ে বিদ্যালয়ের মাঠ তৈরি, নিজস্ব রাস্তা তৈরি, বিদ্যুতায়ন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, আসবাবপত্র তৈরি, বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণের যোগান দিয়ে বিদ্যালয়কে আধুনিকায়নে ভূূমিকা রাখে। ২০১০ সাল থেকে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বৃদ্ধি, শিক্ষার মানোন্নয়ন, সহ-পাঠক্রমিক কার্যাবলির বিস্তার ও প্রসারে বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদ যথাযথ ভূমিকা পালন করায় বর্তমানে কধুরখীল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি স¦-মহিমায় সমুজ্জল। বর্তমান স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ১ নং কধুরখীল ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান শফিউল আজম শেফুর দক্ষ পরিচালনায় এবং সদস্যদের সহযোগিতায় বিদ্যালয় এখন গতিশীল। বিদ্যালয়ের নিরলস প্রচেষ্টায় ২০১৫, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে শতভাগ ফলাফল অর্জন করতে সক্ষম হয়। এই বিদ্যালয় বিভিন্ন সময়ে পেয়েছে উপজেলা, জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পুরস্কার। বিদ্যালয়ের কৃতী শিক্ষার্থী ড. কাঞ্চন চৌধুরী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান। এছাড়া আমেরিকা লন্ডন ও দেশের বিভিন্ন দপ্তরে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। বিদ্যালয়ে বর্তমান ১০ জন শিক্ষক ও চারজন কর্মচারী রয়েছে। বর্তমানে এ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা তিন শতাধিক। বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষের অপ্রতুলতা পাঠদানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। বিদ্যালয়ে বিভিন্ন সহপাঠ ক্রমিক কার্যাবলীর যথাযথ বাস্তবায়ন হয়ে থাকে। জাতীয় দিবসসহ রবীন্দ্র-নজরুল-সুকান্ত জন্মজয়ন্তী, আন্তশ্রেণি বিতর্ক, আন্তশ্রেণি ক্রিকেট, বাংলা নববর্ষ, বিভিন্ন সাহিত্যিক দার্শনিক, বিজ্ঞানীদের স্মরণানুষ্ঠান যথাযথভাবে উদযাপন হয়ে থাকে। বিদ্যালয়ে গরীব মেধাবী শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন মেধাবৃত্তি প্রদান করা হয়।

বিদ্যালয়ে বর্তমানে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন বাবুল কান্তি দাশ। সহকারী প্রধান শিক্ষক উবাইদুল হক, সহকারী শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন অমরনাথ চক্রবর্তী, দেবী দত্ত, তনুশ্রী বিশ্বাস, শুভাশীষ নাথ, লিপি রানী শীল, মিজানুর রহমান, দীল আফরোজ হীরা ও প্রকাশ কুমার ঘোষ। প্রাচ্য ও প্রতীচ্য শিক্ষার মিলন- আধ্যত্মিক ও বিজ্ঞান সাধনার সমন¦য়ে বিদ্যালয়কে এগিয়ে নেয়ার প্রচেষ্টায় কর্মরত বিদ্যালয়ের একদল দক্ষ ও যোগ্য নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক। বর্তমান পরিচালনা পরিষদের সভাপতিসহ তার পরিষদের আন্তরিক প্রচেষ্টা, কার্যকরী নির্দেশনা বিদ্যালয়ের মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদানে যোগ্য ও আদর্শ দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে শিক্ষার্থীদের গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের ও অভিভাবকদের আবেদন বিদ্যালয়টি সরকারিকরণ করা হলে নারীশিক্ষা প্রসারে কধুরখীল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। যা বর্তমানে সময়ের দাবি মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। নারীশিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে বিদ্যালয়টি সরকারিকরণ করা জরুরি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট