চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ‘শাহ সুজা’ থেকে ‘আরকান’

মো. দেলোয়ার হোসেন, চন্দনাইশ

১৫ মে, ২০১৯ | ১:২২ পূর্বাহ্ণ

দক্ষিণ চট্টগ্রামের সীমানা পেরিয়ে টেকনাফের সীমান্তবর্তী পর্যন্ত সড়কটি এককালে পরিচিত ছিল শাহ সুজা সড়ক নামে। এই শাহ সুজা সড়ক পর্যায়ক্রমে পরিচিতি পায় আরকান সড়ক এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক নামে।
দিল্লীশ্বর শাহজাহানের মৃত্যুর পর মসনদ লাভে ভ্রাতৃযুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর সর্বশেষ ১৫৫৯ সালের কাওয়ার যুদ্ধে হেরে যায় বাংলার এককালের ২৪ বছরের শাসনকারী সুবেদার শাহ সুজা। প্রাণরক্ষার্থে শাহ সুজা তখন বাংলার দিকে আসতে থাকে। পথে সংবাদ পান আওরঙ্গজেবের বিশ্বস্ত ও দুর্ধর্ষ সেনাপতি মীর জুমলা আওরঙ্গজেবের নির্দেশে তাকে গ্রেপ্তারের জন্য তীরবেগে এগিয়ে আসছে। প্রাণভয়ে ভীত শাহ সুজা সত্বর মুর্শিদাবাদ গৌর অতিক্রম করে। কয়েকদিন ত্রিপুরা রাজ্যের অধীনস্থ কুমিল্লায় যাত্রাবিরতি করেন। ইতোমধ্যে ত্রিপুরার রাজা অমর মানিকা আওরঙ্গজেবের সেনাপতি মীর জুমলার নিকট থেকে চিঠি পান শাহ সুজাকে হস্তান্তর করার জন্য। নাহলে মীর জুমলা ত্রিপুরা আক্রমণ করবে। ত্রিপুরার রাজা অমর মানিকা চিঠি পেয়ে আশ্রিত শাহ সুজাকে সাথে নিয়ে আরকান রাজ শাহ সান্দু সুদর্মার চট্টগ্রামের শাসনকর্তার নিকট দেয়াঙ্গের চাটিখার দুর্গে পৌঁছান ১৬৬০ সালের ৩ জুন।
সিদ্ধান্ত হয়েছিল শাহ সুজাকে মক্কাগামী জাহাজে তুলে দেয়া হবে, যাতে তিনি প্রাণে রক্ষা পান। কিন্তু তখন ছিল বর্ষাকাল। সমুদ্র উত্তাল, তাই কোন জাহাজ না পেয়ে শাহ সুজাকে আরকানের রাজধানীতে পৌঁছানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে তার পরিবার-পরিজন, অনুগামী সৈন্যবাহিনী ও সৈন্যদলসহ চট্টগ্রাম থেকে আরকান রওনা হন। তার যাত্রা পথটাই আজকের শাহ সুজা রোড বা আরকান রোড বা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক।
১৬ আগস্ট ১৬৬০ সাল শাহ সুজা মাত্র ২শ জন দেহরক্ষী ও তার পরিবার-পরিজন নিয়ে আরকানের রাজধানী রোসাঙ্গে পৌঁছেন।
অবশিষ্ট সৈন্যসামন্ত নিরুপায় হয়ে রামুতে নিজ উদ্যোগে থেকে যায়। তবে রোসাঙ্গে মাত্র ৬ মাসের মধ্যে শাহ সুজার অর্থসম্পদ শেষ হয়ে যায়। এর মধ্যেই সুজার অনিন্দ্য সুন্দরী মেয়ের প্রতি লোলুপ দৃষ্টিপাতের এক পর্যায়ে আরাকানিদের হাতে শাহ সুজা তার পরিবার ও দেহরক্ষীসহ রোসাঙ্গে নিহত হন। এরপর রামুতে সুজার সহযোদ্ধারা আরাকানি সেনাদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হওয়ার একপর্যায়ে তারা রামু হতে প্রায় ৬০ মাইল দূরে গহীন পর্বত এলাকায় পলায়ন করে। সেখানে তারা পাহাড়ে সুরঙ্গ কেটে প্রাকৃতিক দুর্গ তৈরি করে অবস্থান নেয়। যার ধ্বংসবিশেষ এখনো আলীর সুরঙ্গ নামে খ্যাত।
রামুতে অবস্থান নেয়া শাহ সুজার অনুসারীদের বিতাড়নে আরাকানি সৈন্যদের ধাওয়ার প্রেক্ষিতে সড়কটি পরবর্তীকালে আরকান সড়ক নামেও পরিচিতি পায়। পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এ সড়কের বিস্তৃতি ঘটে সড়কটি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক নামে অভিহিত হতে থাকে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট