চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

পরিচ্ছন্ন রাউজান গড়তে সপ্তাহে একদিন ওরা পরিচ্ছন্নকর্মী

বোরহান উদ্দিন, রাউজান

৮ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৪:৪৫ পূর্বাহ্ণ

মাথায় ক্যাপ, মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাভস। কারো হাতে ঝাড়ু, কারো হাতে ঝুড়ি, আবার কারো হাতে পলিথিন, কারো হাতে বেলচা। সড়কের পাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ময়লা পরিষ্কার করছেন তাড়াতাড়ি। দূর থেকে মনে হবে তাদের পরিচ্ছন্নকর্মী। তবে তারা পেশাদার পরিচ্ছন্নকর্মী নয়। সড়ক কিংবা দোকানের আশেপাশে কোণায় জমে থাকা ময়লা ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করছেন কয়েকজন তরুণ শিক্ষার্থী। বাকি কয়েকজন শিক্ষার্থী সেই ময়লা ঝুড়িতে ভরে নির্দিষ্টস্থানে স্তুপ করছেন। এভাবে বাজারে অলিতে গলিতে নর্দমা থেকে ময়লা হাতে নিয়ে ঝুড়িতে কিংবা পলিথিনে স্তুপ করছেন তারা। এ দৃশ্য দেখে বাজারে থাকা পথচারী, ব্যবসায়ীরা সবাই অবাক ! ঘটনা কি ? সবাই কৌতূহল জানার জন্যে। তবে জানতে সময় লাগেনি বেশিক্ষণ। অল্পক্ষণে সবাই জানতে পারল একদল স্বপ্নবাজ তরুণের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযানের কথা। উচ্চবিত্ত কিংবা মধ্যবিত্ত পরিবারের এসব তরুণ শিক্ষার্থী ‘বিডি-ক্লিন রাউজান’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্য। তারা বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। একাডেমিক পড়ালেখার পাশাপাশি একদিন তারা ‘পরিচ্ছন্নকর্মী’। এ সংগঠনের উদ্যোগে গত ২৭ সেপ্টেম্বর সকালে রাউজান উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের আমিরহাট বাজারে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভিযানে আসে এ তরুণরা। এ সময় মাত্র ৩-৪ ঘন্টার ব্যবধানে যত্রতত্র ফেলা সব ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করে পুরো আমিরহাট বাজারের অলি-গলি চকচকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নরূপে পরিবর্তন করে দেয় তরুণ শিক্ষার্থীরা। এ পরিবর্তন ও তাদের কার্যক্রম দেখে বাজারে আসা পথচারী ও দোকানীরা বেশ খুশি। তাদের এ মহতি কর্মকা- দেখে ছুটে এসেছেন এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম। তিনি তরুণদের ব্যতিক্রমী কার্যক্রমের প্রশংসা করে তাদের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান।

এ বিষয়ে আমিরহাট বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি এসএম বাবর বলেন, তরুণদের এই কার্যক্রম দেখে সত্যিই আমি অভিভূত। সরকারি-বেসরকারি ও বিভিন্ন সেবামূলক সংগঠনের এভাবে পরিচ্ছন্নতার কাজ চালালে একদিন পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ ঘোষণা করাও সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি। স্বেচ্ছাসেবী তরুণরা জানান, প্রতি সপ্তাহেই সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন স্থান পরিচ্ছন্ন করে যাচ্ছে একদল স্বপ্নবাজ তরুণেরা। তারই ধারাবাহিকতায় পরিচ্ছন্ন কর্মসূচি পালন করেন রাউজান উপজেলা বিডি ক্লিনের সদস্যরা। পরিষ্কার অভিযানে আমিরহাট বাজার ছিল তাদের রাউজানে প্রথম কর্মসূচি। এতে অংশগ্রহণ করে তাদের ১৫ জন স্বেচ্ছাসেবী তরুণ শিক্ষার্থী। তাদের দ্বিতীয় কর্মসূচি পালিত হয় গত ১১ অক্টোবর বিকালে উপজেলার রমজান আলীহাটে। গত ২৫ অক্টোবর বিকালে উপজেলার পাহাড়তলী বাজারে তৃতীয় ইভেন্টসহ এ পর্যন্ত ৫টি ইভেন্ট সম্পন্ন করেছে তারা। তাদের ৩য় ইভেন্টে বিডি ক্লিন রাউজান উপজেলার ১৭ জন স্বেচ্ছাসেবী তরুণের একটি টিম অংশগ্রহণ করেন। তাদের প্রতিটি ইভেন্টেই পাঠ করা হয় শপথ বাক্য।

এর আগে ২০২১ সালের মধ্যে পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ উপহার দেয়ার প্রত্যয়ে সারাদেশের মতো বিডি ক্লিন রাউজানের যাত্রা শুরু হয় গত ২০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার। সেদিন রাউজান সূর্যসেন চত্বরে এক পরিচিতি সভার মাধ্যমে এ যাত্রা শুরু করে তারা। প্রায় অর্ধশত তরুণ-তরুণী পরিচ্ছন্ন রাউজান উপজেলা গড়ার একটি সুন্দর স্বপ্ন বাস্তবায়নে বিডি ক্লিন রাউজানের সঙ্গে যুক্ত আছেন। পরিচ্ছন্ন উপজেলা হিসেবে বাংলাদেশের বুকে রাউজানকে তুলে ধরতে এখন পর্যন্ত ৩টি ইভেন্ট পরিচালনা করেছে তারা। প্রতি শুক্রবার ও সরকারি ছুটির দিনে তারা উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযানে নামেন। পরিষ্কার করেন স্থানটি পরিচ্ছন্ন না হওয়া পর্যন্ত। তাদের লক্ষ্য ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত রাখা।

এ কার্যক্রম সম্পর্কে বিডি-ক্লিন চট্টগ্রাম উত্তর ও রাউজান উপজেলার সমন্বয়ক সাইমুর রহমান ফরহাদ বলেন, কার্যক্রম নিয়ে বিডি ক্লিনের কোন মতামত নেই, আছে শুধু লক্ষ্য। বিডি ক্লিনের লক্ষ্য হচ্ছে ২০২১ সালে মুক্তিযুদ্ধের স্বাধীনতার ৫০ বছরের সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশকে একটি পরিচ্ছন্ন দেশ হিসাবে উপহার দেয়া, তাই বিডি ক্লিনের প্রত্যেক তরুণ-তরুণী সপ্তাহের শুক্রবার বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে ময়লা কুড়িয়ে মানুষকে দেখিয়ে সচেতন করে দিচ্ছে যেখানে সেখানে যততত্র ময়লা আবর্জনা না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলার জন্য। তাই আসুন আজ থেকে আমরা যেখানে সেখানে ময়লা ফেলার বদ অভ্যাস পরিহার করি এবং বাংলাদেশকে একটি পরিচ্ছন্ন দেশ হিসাবে গড়ে তুলি।
বিডি ক্লিন রাউজানের সদস্যদের পরিচ্ছন্ন অভিযান দেখে তরুণ ব্যবসায়ী কপিল উদ্দিন বলেন, জানি না এরা কারা হয়তো আমার মতো কোন মায়ের সন্তান। আমাদের হলদিয়া আমির হাট বাজারে তাদের আজ ময়লা কুড়াতে দেখে খুব অবাক হলাম। কিছুটা লজ্জাও পেলাম আমাদের ময়লাগুলো তারা পরিষ্কার করছে। যেগুলো আমাদের পরিষ্কার করা উচিত ছিল। তাদের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। আমরা সচেতন না হলেই বদলাবে না কিছুই।

ঔষধ ফার্মেসী ব্যবসায়ী সুজন সেন বলেন, এ দেশের প্রত্যেক মানুষকে রোগ জীবাণুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করে সুস্থভাবে বাঁচাতে আসুন পরিচ্ছন্ন মানসিকতা গড়ে তুলি, পরিহার করি যত্রতত্র ময়লা ফেলার নোংরা অভ্যাস, গড়ে তুলি পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত সোনার বাংলাদেশ।

ব্যবসায়ী এ.আর স্বপন ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন, দৃষ্টিভঙ্গি বদলান জীবন বদলে যাবে। আশ্চর্য হলেও সত্য আমির হাট বাজারে স্কুল-কলেজে লেখাপড়া করে এমন ১৫ জন শিক্ষার্থী বাজারের শুরু হতে শেষ পর্যন্ত সম্পুর্ণ পরিষ্কার করে ফেলেছে ! তাদের উক্তি, ‘সঠিক জায়গায় ময়লা ফেলবো, দূষণমুক্ত দেশ গড়ব’ চলুন আমরাও তাদের অনুসরণ করি। প্রবাসী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, তরুণদের এ মহৎ উদ্যোগ ও শ্রম তখনই স্বার্থক হবে যদি আমাদের বিবেকবোধ কিছুটা হলেও জাগ্রত হয়।

উল্লেখ্য, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন উপজেলা গড়তে ‘বিডি ক্লিন রাউজান’র জামশেদুল আলম, জমিদুল হক, জামশেদ মাহমুদসহ কাজ করছেন একঝাঁক তরুণেরা।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট