চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে অপূর্ব সৌন্দর্যম-িত সোনাদিয়া দ্বীপ

আরফাতুল মজিদ হ কক্সবাজার

১ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ১:৪৪ পূর্বাহ্ণ

সৃষ্টি শৈল্পিক আদলে গড়া কক্সবাজার জেলার পর্যটন শিল্পের আরেক সম্ভাবনাময় সৈকতের নাম সোনাদিয়া। এখানে রয়েছে বালিয়াড়ি, লাল কাঁকড়া, কাছিম প্রজনন ব্যবস্থা, চামচ ঠোঁটের বাটন পাখি, ঝাউবন এবং অতিথি পাখির অভয়ারণ্য।

বঙ্গোপসাগরের কূল ঘেঁষে অপূর্ব সৌন্দর্য বেষ্টিত মহেশখালী কুতুবজোম ইউনিয়নের একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ সোনাদিয়া। পরিকল্পিত উন্নয়ন ও প্রচারের অভাবে দ্বীপটির সৌন্দর্য সম্পর্কে ধারণা নেই অনেকের। এই দ্বীপটিতে রয়েছে উপকূল ভিত্তিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার অপার সম্ভাবনা। এরই দাবি তুলেছেন দ্বীপবাসী।

দ্বীপবাসীর তথ্যমতে, এখানে শুটকি মহাল রয়েছে বেশ কয়েকটি, চিংড়ি চাষ যোগ্য জমিও রয়েছে। রয়েছে প্রাকৃতিক বনায়ন ও বালুময় চরাঞ্চল। দূষণ ও কোলাহলমুক্ত সৈকত, লাল কাঁকড়ার মিলন মেলা, বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক কাছিম, পূর্ব পাড়ার হযরত মারহা আউলিয়ার মাজার ও তার আদি ইতিহাস, জেলেদের সাগরের মাছ ধরার দৃশ্য, সৃর্য অস্তের দৃশ্য, প্যারাবন বেষ্টিত আঁকাবাঁকা পানিপথে নৌকা ভ্রমণ।

যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকার সত্ত্বেও এ দ্বীপে সরকারি বা বেসরকারিভাবে যথাযথ উদ্যোগ ও পরিকল্পনার অভাবে এ পর্যন্ত পর্যটন আকর্ষণের আধুনিক কোন পদক্ষেপ বলতে গেলে নেয়া হয়নি। সঠিক পরিকল্পনা পূর্বক তা বাস্তবায়ন করা গেলে এ দ্বীপটি পর্যটন বিকাশে অন্যতম স্থান হতে পারে। যা দেশের তথা কক্সবাজারের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি দ্বীপবাসীর জন্য বিকল্প আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এই দ্বীপে দ্বীপবাসীর সম্পৃক্ততায় কমিউনিটি ভিত্তিক ইকো ট্যুরিজম ও কোস্টাল ট্যুরিজম অর্থাৎ উপকূলীয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। যা দ্বীপবাসীর বিকল্প আয়ের ব্যবস্থাসহ অন্যান্য অর্থনৈতিক উন্নয়ন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।
মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, সোনাদিয়া দ্বীপের নামকরণের সঠিক কোন ঐতিহাসিক তথ্য না থাকলেও সোনাদিয়ার দ্বীপকে ঘিরে আদিকাল হতে সোনা সমতুল্য দামীপণ্য মৎস্যসম্পদ আহরিত হতো বলে এই দ্বীপ সোনার দ্বীপ বা সোনাদিয়া বলে পরিচিত। তাই ঐতিহাসিকভাবে না হলেও লোকমুখে উচ্চারিত সোনাদিয়ার কথা বিবর্তনে সোনাদিয়ায় রূপান্তিত হয়। দ্বীপটি সোনাদিয়া হিসাবে বর্তমানে প্রজন্মের কাছে ও বই পুস্তকে স্থান পাচ্ছে।

মৎস্য বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা যায়, সোনাদিয়া দ্বীপের মোহনা, চর ও বন ভূমিতে ঊনিশ প্রজাতির চিংড়ি, চৌদ্দ প্রজাতির শামুক-ঝিনুকসহ নানা ধরনের কাঁকড়া, প্রায় আশি প্রজাতির সাদা মাছ, পঁয়ষট্টি প্রজাতির স্থানীয় ও যাযাবর পাখি এবং কমপক্ষে তিন প্রজাতির ডলফিন বিচরণ করে থাকে এই দ্বীপে। বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ মাছের মধ্যে কোরাল, বোল, বাটা, তাইল্যা, দাতিনা, কাউন (কনর মাছ) ও প্যারাবন সমৃদ্ধ এলাকায় অন্য মাছও পাওয়া যায়। সরকারিভাবে পর্যটনের ব্যবস্থা করলে দ্বীপের অবহেলিত মানুষের কর্মসংস্থান হবে এবং সরকারিখাতে প্রচুর রাজস্ব আয় হবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।

কক্সবাজার শহর থেকে স্পিডবোটে দ্বীপে যেতে সময় লাগে মাত্র ২০ মিনিট। যাতায়াতে কম সময় লাগায় পর্যটকরা দ্বীপটির সৌন্দর্য উপভোগ করে দিনে গিয়ে দিনেই শহরে ফিরে আসতে পারে। এতে করে খুব কম সময় ব্যয় করে ভ্রমণ পিপাসুরা দেখে আসতে পারে নীল জলরাশির এই দ্বীপটি। তবে দ্বীপটিতে পর্যটকদের আগমন বাড়াতে যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নয়ন, জেটিঘাট স্থাপন, পাবলিক টয়লেট স্থাপন, বসার স্থান, মানসম্মত দোকানের ব্যবস্থাসহ বেশকিছু সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির দাবি তুলেছেন দ্বীপবাসী।

পরিকল্পিত কক্সবাজার’র প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল আলীম নোবেল বলেন, বেশ কয়েকবার ঘুরে দেখা গেছে দ্বীপটি খুবই চমৎকার। সৌন্দর্য উপভোগ করতে অনেক পর্যটক দ্বীপে যায়। কিন্তু পর্যটকদের জন্য তেমন সুযোগ-সুবিধা নেই। সেখানে নেই ট্যুরিস্ট পুলিশের অবস্থানও। তবে পর্যটকদের বিশেষ চাহিদার ভিত্তিতে নিরাপত্তা বিবেচনা করে কক্সবাজার থেকে পুলিশ পাঠানো হয় ওখানে।

দ্বীপটির উন্নয়ন সম্পর্কে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন বলেন, কক্সবাজারের পর্যটন উন্নয়নে সরকারের মহাপরিকল্পনার মধ্যে সোনাদিয়া দ্বীপও রয়েছে। এই দ্বীপটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে সরকারের পরিকল্পনা আছে। উন্নয়নের কাজ শুরু হলেই সোনাদিয়া আর অবহেলিত থাকবে না। উন্নয়নের কাজ আজ না হলে কাল হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট