চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

আঁধার পেরিয়ে আলোর সন্ধানে অসচ্ছল, অনগ্রসর সন্দ্বীপ পাড়া

মোহাম্মদ রুহুল আমীন হ হাটহাজারী

১ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ১:৪৪ পূর্বাহ্ণ

হাটহাজারী সদর থেকে সোয়া তিন কিলোমিটার দূরে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কের পশ্চিমের এলাকাটির নাম পশ্চিম দেওয়ান নগর সন্দ্বীপ পাড়া। এলাকাটি হাটহাজারী পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডে। এখানে পরিবারের সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজারেরও বেশি। বেশিরভাগ পরিবার আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল। শিশুদের পড়াশোনার জন্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খেলার মাঠ কিংবা বিনোদনের কোন ব্যবস্থা নেই। এই এলাকার নিকটবর্তী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির দূরত্ব প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূরে। অর্থব্যয়ে বিদ্যালয়ে ভর্তি করে সন্তানদের স্কুলে পাঠানোর সামর্থ্য অধিকাংশ পরিবারের নেই। তাই পড়ালেখার পরিবর্তে অভিভাবকরা সন্তানদের উপার্জনের নানাকাজে সম্পৃক্ত করতেই বেশি আগ্রহী।

এই এলাকার শিশুদের শিক্ষার জন্য ১৯৯৭ সালে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা প্রাইমারি স্কুল প্রতিষ্ঠা করে। অর্থাভাবে বিদ্যালয়টি ক্রমাগত জীর্ণ থেকে জীর্ণতর হতে থাকে। চলতি বছরের প্রথমদিকে বিদ্যালয়টি হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসনের নজরে আসে। খবর পাওয়ার অল্পসময়ের মধ্যেই পরিদর্শনে গিয়ে বিদ্যালয়ের নাজুক অবস্থা অবলোকন করে বিস্মিত হয় প্রশাসন। স্থানীয় জনসাধারণ, সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসকসহ সবাইকে সম্পৃক্ত করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের উদ্যোগে জরাজীর্ণ ও প্রায় ভঙ্গুর বিদ্যালয়টি ভেঙে নতুন করে নির্মাণ করা হয়। মেয়ে শিক্ষার্থীদের অনেকে বিদ্যালয়মুখী হতে চাইতো না কেবল শৌচাগার না থাকার কারণে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের খাবার পানির জন্য নির্ভর করতে হতো আশেপাশে অবস্থিত বাড়ির টিউবয়েলের ওপর। এখন এ সমস্যা দূর করতে বিদ্যালয়ের সীমানার মধ্যেই স্থাপনা করা হয় গভীর নলকূপ। শিক্ষকদের বেতন দেয়ার মতো সামর্থ্য ছিল না বিদ্যালয়টির। এখন সাময়িক সময়ের জন্য শিক্ষকদের প্রতিমাসে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেয়া হচ্ছে প্রতীকী সম্মানী।

নতুন অবকাঠামো নির্মাণ, আসবাবপত্র সরবরাহ, সুপেয় পানির ব্যবস্থা, স্যানিটেশন সমস্যা দূরীকরণের পর শিক্ষার্থীদের স্কুলের প্রতি আগ্রহী করতে উদ্যোগী হয় উপজেলা প্রশাসন। এই জনপদের শিশুদের জন্য খেলার মাঠ না থাকায় তারা বঞ্চিত ছিল খেলাধুলা ও বিনোদন থেকে। অথচ খেলাধুলায় শিশুদের প্রবল আগ্রহ থাকে। শিশুদের বিদ্যালয়মুখী করতে স্কুলের সামনের জঙ্গল, খানা-খন্দ এবং পরিত্যক্ত স্থাপনা ভেঙে প্রশস্ত একটি খেলার মাঠ তৈরি করা হয়। ফুটবল এবং ক্রিকেটসহ নানা ক্রীড়াসামগ্রী শিক্ষার্থীদের উপহার দেয়া হয়। মেয়েদের ক্রীড়াসামগ্রীর ব্যবস্থা করা হয়। খেলাধুলা নির্বিঘœ করতে সীমানা দেয়াল নির্মাণ করে সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্কুলে বিনামূল্যে ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়। বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজনের উদ্যোগ নেয়া হয়। বাচ্চাদের আকৃষ্ট করতে শিশুপার্কের ন্যায় কিছু রাইডও দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আশার কথা হলো, মাত্র দুই-তিন মাসের মধ্যেই এসব উদ্যোগের অভাবনীয় ফল পাওয়া যায়। তিন মাসের ব্যবধানে নতুন ভর্তি হয় ৭৬ জন শিক্ষার্থী। বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি। যেখানে মাত্র কয়েকমাস আগেও ১০ থেকে ১২ জন শিক্ষার্থী নিয়ে পাঠদান চলছিল, সেখানে এখন স্থান সংকুলান হচ্ছে না। প্রতিদিন ক্লাশ শুরু হওয়ার আগেই বিদ্যালয়ে চলে আসছে শিক্ষার্থীরা। এখন বাচ্চারা কেউ স্কুল ফেলে কাজে যেতে চায় না। বরং এখন শিক্ষার্থীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু সন্দ্বীপপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়। আগামী নতুন বছরের প্রথম মাসেই এই শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছাড়িয়ে যাবে প্রত্যাশারও বাইরে। আঁধারের পাড়ায় জ্বলে উঠুক শিক্ষার আলো। আলোর রেখা বিচ্ছুরিত হোক সর্বত্র। শিক্ষার আলোয় উদ্ভাসিত হোক আগামী প্রজন্ম।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট