চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

পুটিবিলায় মুক্তিযুদ্ধের দৃষ্টিনন্দন স্মৃতি ফলক ও কালচার গ্যালারি

এম.এম আহমদ মনির হ লোহাগাড়া

১ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ১:৪৪ পূর্বাহ্ণ

১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার এক অম্লান স্মৃতি পুটিবিলা ইউনিয়নের জোড় পুকুর এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটি। ওইস্থানে রয়েছে পুটিবিলা উচ্চ বিদ্যালয় ও ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় ভবন। অদূরে রয়েছে ঝোঁপ-জঙ্গলবেষ্টিত টিলাকারের বনভূমি। বিচ্ছিন্নভাবে রয়েছে লোকালয়। জনবসতির লোক সংখ্যা কম। যাতায়াত ব্যবস্থা ছিল ওইসময় খুবই কষ্টসাধ্য। এলাকার খেটে খাওয়া মানুষগুলো কোনমতে কালযাপন করতেন। কিছুদূর ব্যবধানে রয়েছে দুর্গম পাহাড়ি এলাকার গভীর অরণ্য। গড়ে ওঠেছে ছোট-বড় বৃক্ষের বাগান। তাই ভৌগোলিক অবস্থান ও নিরাপত্তার কারণে উল্লেখিত স্থানে গড়ে ওঠেছিল মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটি।

১৯৭১ সালে পাকহানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর অতর্কিত হামলার জবাব দিতে মুক্তিযোদ্ধারা নিরাপদ জায়গা দেখে ঘাঁটি স্থাপন করেন। ওইখান থেকে তারা কৌশলে যুদ্ধ করে শত্রুবাহিনীকে পরাস্ত করেন। দেশের অন্য এলাকার মতো লোহাগাড়ায়ও মুক্তিযোদ্ধারা পৃথক দু’জায়গায় ঘাঁটি স্থাপন করেন। প্রথম ঘাঁটি হল পদুয়ার হানিফার চর এবং দ্বিতীয় ঘাঁটি হল পুটিবিলার জোড় পুকুর এলাকায়। হানিফার চরের ঘাঁটিতে ভারতীয় হেলিকপ্টারের সাহায্যে তৎকালীন এমএনএ আবু ছালেহ ও শফিউর রহমান সওদাগর অন্য মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। যুদ্ধ চলাকালীন মধ্যবর্তী সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অপর একটি গ্রুপ পুটিবিলার জোড় পুকুর এলাকায় ঘাঁটি স্থাপন করেন। ওইসময় বটতলী মোটর স্টেশনে রাজাকার ও আল বদরের ক্যাম্প ছিল। পাক হানাদার বাহিনী তাদের সহায়তায় পুরো এলাকায় হত্যা, নারী নির্যাতন, অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন তা-ব চালায়। এমনকি এপ্রিলে স্টেশনে বিমান হামলা চালিয়ে মানুষ হত্যা করে পাকহানাদার বাহিনী। পুটিবিলার মুক্তিযোদ্ধার ঘাঁটির ইনচার্জ ছিলেন জনৈক সামশুল ইসলাম। নেপথ্যে সহযোগিতায় ছিলেন আ.লীগ নেতা অধ্যাপক নাজিম উদ্দিন, কলাউজান ইউনিয়নের সামশুল হকসহ অন্যরা। বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধ হচ্ছে পাকহানাদার ও তাদের দোসরদের সহিত মুক্তিযোদ্ধাদের। পাকবাহিনীর পক্ষে সহায়তা দেয় স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েকজন ব্যক্তি। আবার কেউ কেউ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে বাঁচাতে পাকবাহিনীর পক্ষ হয়ে অভিনয়ও করেছিলেন।

মুক্তিযোদ্ধাদের রণদক্ষতার কাছে পাকবাহিনী কাবু হতে থাকার খবর প্রচার হতে নভেম্বরের দিকে। এ সুবাদে পুটিবিলা ঘাঁটির মুক্তিযোদ্ধারা নভেম্বরের মাঝখানে রাতে মোটর স্টেশনে রাজাকার ও আল বদর ক্যাম্প আক্রমণ করেন। উভয়পক্ষের মধ্যে প্রচ- গুলিবিনিময় হয়। এক পর্যায়ে কিছু রাজাকার পালিয়ে গেলেও মুক্তিযোদ্ধারা ৭/৮ জন রাজাকারসহ আল বদর বাহিনীর পরিচালককে জীবিত আটক করে ঘাঁটিতে নিয়ে তাদের হত্যা করেন। অপর এক অভিযানে আজিজনগর শিল্প এলাকা থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় কয়েকজন বিহারীকে আটক করে ঘাঁটিতে নিয়ে তাদেরকেও হত্যা করা হয়। রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণকালে মুক্তিযোদ্ধা জালাল মেম্বারের একটি চোখ রাজাকারের গুলিতে নষ্ট হয়ে যায়।

উল্লেখ্য, পুটিবিলার জোড় পুকুর এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের এ ঘাঁটি বর্তমান প্রজন্মদের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০১৩ সালের একই স্থানে নির্মিত হয় মুক্তিযোদ্ধা ঘাঁটি স্মৃতি ফলক। স্থানটি আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে সামান্য ব্যবধানে ২০১৮ সালে নির্মিত হয় দৃষ্টিনন্দন শাহজাহান কালচার গ্যালারি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট