চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

শ্রীপুর-খরণদ্বীপ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে অস্বস্তিকর পাঠদান

সেকান্দর আলম বাবর হ বোয়ালখালী

৩ নভেম্বর, ২০১৯ | ২:০৮ পূর্বাহ্ণ

বর্তমান সরকারের ১১ বছরে শ্রীপুর-খরণদ্বীপে প্রায় সোয়াশ কোটি টাকার উন্নয়ন হলেও, হয়নি শ্রীপুর-খরণদ্বীপ ইউনিয়নের পশ্চাৎপদ শ্রীপুর-খরণদ্বীপ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের। এ এলাকায় আসা আগন্তুকরা বিশ্বাসই করতে চায় না, উন্নয়নের রোডম্যাপে অগ্রসরমান শ্রীপুর-খরণদ্বীপে এ ধরনের একটি অনুন্নত স্কুল আছে! যেন চেরাগের তলে অন্ধকার ! তবে সরকারের একদশক পিছিয়ে পড়া স্কুলটি গত বছরের ১২ অক্টোবর স্কুল মাঠে ইউনিয়ন আ.লীগের নির্বাচনী জনসভায় এ এলাকার এমপি ড. হাছান মাহমুদ সরেজমিন দেখেন। তিনি ওইসময় একটি আধুনিক নতুন ভবন উপহার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

এ প্রসঙ্গে স্থানীয় চেয়ারম্যান মোকারম জানান, শ্রীপুর-খরণদ্বীপে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের নেতৃত্বে। এ স্কুলটি তার নজরে আছে। তিনি নিজেই স্কুলটি দেখেছেন এবং বিল্ডিংয়ের জন্য ডিও লেটার দিয়েছেন। ইনশাল্লাহ, এ স্কুলটিও পিছিয়ে থাকবে না। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে পরিষদ থেকে শহিদ মিনার, মাঠ ভরাট, টয়লেট নির্মাণসহ বিভিন্ন কর্মকা-ে একাধিক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা অতীতে কেউ করেননি।

সরেজমিনে দেখা যায়, বোয়ালখালী উপজেলার শ্রীপুর-খরণদ্বীপ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে পাঠদান।

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেকোন ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা মাথায় নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে দৈনিক কার্যক্রম। ১৯৭৩ সালে শ্রীপুর-খরণদ্বীপ গ্রামবাসীর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত উপজেলার নারী শিক্ষায় পিছিয়ে থাকা অনগ্রসর এ এলাকা বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হলেও- অবকাঠামো উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গত ৪৬ বছরে তেমন নজর পড়েনি। টিনশেডের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে কার্যক্রম। বিএনপি সরকারের আমলে ১৯৯৫ সালে ৩ কক্ষের একটি বিল্ডিং দেয়া হলেও নির্মাণে দুর্নীতি আর নিম্মমানের উপকরণ ইত্যাদি কারণে তা আজ প্রায় ভঙ্গুরদশা। দেখা যায়, ৮ম-১০ শ্রেণির ক্লাস চলছে জরাজীর্ণ সেমিপাকা টিনের ছাউনি দালানে। টিনের অধিকাংশ ফুটো হয়ে গেছে। বৃষ্টি হলেই পানিতে বয়ে যায় শ্রেণিকক্ষ। কক্ষ ছোট হওয়াতে গাঁদাগাদি করে বসেছে ছাত্রীরা। গরমে অস্থির ছাত্রীরা একবাক্যে নতুন শ্রেণিকক্ষ নির্মাণের দাবি জানান।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোরনের অন্যতম পুরোধা কল্পনা দত্তের বাড়ির দক্ষিণে স্থানীয় বিদ্যুৎসাহী কিছু ব্যক্তি নারী শিক্ষা বিস্তারে এ স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। স্থানীয় তাঁতঘর এলাকায় প্রায় ১ একর ১৬ শতক জমির ওপর এটি প্রতিষ্ঠিত। সেই সময়কার খুঁটি, টিন ও বেড়া দিয়ে তৈরি স্কুলটি হাঁটি হাঁটি পা পা করে দীর্ঘ ৪৬টি বছর পার করলেও সরকারি বড় অবকাঠামোর সুযোগ পায়নি বিদ্যালয়টি। ১৯৭৬ সালে স্কুলটি এমপিওভুক্ত হয়। বর্তমানে স্কুলে ৮ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা, ৪ জন কর্মচারী ও প্রায় ৩৫০ ছাত্রী রয়েছে। শিক্ষকের অভাব সর্বদা থাকছেই। কারণ জরাজীর্ণ এ স্কুলে কেউ পাঠদান করে স্বস্তি পাই না। তারা চলে যায়। ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এ বছরের এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হার শতকরা ৮৬.২১ ভাগ। গত ২০১৮ সালে জেএসসি পরীক্ষার পাশের হার শতকরা ৭৬.৬৭ ভাগ ছিল। শ্রীপুর-খরণদ্বীপ এলাকাটি নারী শিক্ষা বিস্তারে অনগ্রসর এলাকা হওয়া সত্ত্বেও এ বিদ্যালয়টি এলাকার শিক্ষা বিস্তারের সামগ্রিক চিত্র পাল্টে দিয়েছে। এতো কিছুর পরও উন্নয়নে যেন পিছিয়ে। তাছাড়া রয়েছে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা দপ্তরের তদারকির গাফেলতি। উপযুক্ত শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ বঞ্চিত হচ্ছে এলাকার নারীরা।

এ সরকারের আমলে বর্তমান কমিটি দায়িত্ব নেয়ার পর সামনে গেইটের সংস্কার, শহিদ মিনার, মাঠ ভরাট, টয়লেট ও শৌচাগার, বিল্ডিং-এর ভাঙা অংশ মেরামত করলেও-একটি নতুন বিল্ডিংয়ের প্রয়োজনীয়তা কোনভাবেই শেষ হচ্ছে না। কমিটির সভাপতি আবু বক্কর সওদাগর জানান, দায়িত্ব নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগে বারবার তাগাদা দিচ্ছি, কোন কাজ হচ্ছে না। ছাত্রীদের শ্রেণিকক্ষ সংকট কাটাতে কমিটির সকল সদস্য, কিছু বিদ্যুৎসাহী, স্কুল ফান্ড এবং স্থানীয় চেয়ারম্যানের বদান্যত্যে একটি তিন কক্ষের সেমিপাকা ঘর নির্মাণ করেছি। যা ক্ষণস্থায়ী।

এ প্রসঙ্গে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার শিউলি শর্মা জানান, একটা বিল্ডিং খুবই প্রয়োজন। ছাত্রী সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। শ্রেণিকক্ষে আসবাবপত্রেরও ঘাটতি রয়েছে। স্কুল কমিটি, স্থানীয় চেয়ারম্যান ও এমপি কথা দিয়েছেন। আশা করি, অবকাঠামো উন্নয়নে আর সমস্যা থাকবে না।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট