চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

গ্রীষ্মকালীন শিম চাষ বেড়েছে দ্বিগুণ

ভালো ফলনের সাথে ন্যায্য দাম কৃষককে উৎসাহিত করছে

সৌমিত্র চক্রবর্তী হ সীতাকু-

২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১:১৩ পূর্বাহ্ণ

সীতাকু-ে গ্রীষ্মকালীন শিম চাষ দিন দিন বাড়ছে। এই শিমে কৃষকরা লাভবান হওয়ায় গত একবছরে এখানে চাষ বেড়েছে দ্বিগুন। একইহারে বেড়েছে চাষীর সংখ্যাও। এ কারণে উচ্ছ্বসিত কৃষক-কৃষি বিভাগ উভয়েই। যা স্থানীয় কৃষিকে আরো বেশি সমৃদ্ধ করছে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শিম চাষে সীতাকু-ের ঐতিহ্য দীর্ঘকালের। তবে এখানে বরাবরই শীতকালীন শিম চাষ হতো। কিন্তু এখানে শীতের মতোই গ্রীষ্ম কিংবা বর্ষার মৌসুমেও যে শিম চাষ সম্ভব তা কৃষি বিভাগের মাধ্যমে এলাকার কৃষকরা জেনেছে ২০১০ সালে। সেবার কৃষি বিভাগ পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকজন কৃষককে গ্রীষ্মকালীন শিমের বীজ প্রদান করে। সেসব কৃষক কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী চাষাবাদ করে সাফল্য পেলেও উৎসাহ বাড়তে থাকে। এভাবে গতবছর অর্থাৎ ২০১৮ সালে এখানে ১০৫ জন কৃষক শিম চাষ করেন ১৫ হেক্টর জমিতে। কিন্তু কৃষকদের ব্যাপক লাভ দেখে এবার ২০১৯ সালে ২৪৫ জন কৃষক চাষ করেছেন ৩০ হেক্টর অর্থাৎ ৭৫ একর জমিতে। উপজেলার উপ-কৃষি ও উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা সুভাস চন্দ্র নাথ জানান, এখানে শীতকালে বিভিন্নরকম শিম চাষ হলেও গ্রীষ্মকালের জন্য উপযুক্ত হচ্ছে রূপবান জাতের শিম। এই শিম গ্রীষ্ম ও বর্ষার আবাহাওয়া সহিষ্ণু। মূলত এই শিম চাষেই এখানে সফলতা এসেছে। বর্তমানে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এই শিম চাষ হলেও সবচেয়ে বেশি চাষ হচ্ছে বারৈয়াঢালা ইউনিয়নে। এছাড়া পৌরসদর, মুরাদপুরসহ অন্য স্থানেও কমবেশি চাষ হচ্ছে গ্রীষ্মকালীন শিম।

সরেজমিনে পরিদর্শনকালে ২ নং বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের টেরিয়াইল ব্লকে প্রচুর শিমের চাষ দেখা গেছে।
স্থানীয় কৃষক রবিউল হোসেন বলেন, কৃষি অফিসের পরামর্শেই প্রথম গ্রীষ্মকালীন রূপবান শিম চাষ শুরু করেছিলাম। সফলতা আসায় এখন চাষ বাড়িয়েছি। এবার ৮০ শতক জমিতে চাষ করেছি। এবার প্রথম দিকে ১২০ টাকা কেজি শিম বিক্রি করেছি। এখনো ৮০/৯০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আশ্বিন মাস পর্যন্ত শিম বিক্রি হবে। এ সময়ে আড়াই লক্ষ টাকার শিম বিক্রি করতে পারবেন বলে ধারণা করছেন। একই ব্লকের কৃষক নুরনবী বলেন, ৩০ শতক জমিতে গ্রীষ্মকালীন রূপবান শিমের আবাদ করেছি আমি। বীজ, বাঁশের কঞ্চি ও শ্রমিক মুজুরিসহ খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। ইতিমধ্যে ৫০ হাজার টাকার শিম বিক্রি হয়েছে। সব ঠিক থাকলে ৮০/৯০ হাজার টাকার শিম বিক্রি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

এ ব্লকে দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পিপাস কান্তি চৌধুরী বলেন, আগে এখানকার উঁচু জমিগুলোতে কৃষকরা ধানসহ নানারকম সবজির আবাদ করতেন। আমাদের পরামর্শে বর্তমানে এ জমিগুলোতে তারা লাভজনক সবজি গ্রীষ্মকালীন রুপবান শিমের আবাদ করেছেন। ভালো চাষের জন্য আমি সবসময় তাদেরকে কিভাবে চাষ করবে সে পরামর্শ দিয়ে থাকি। এ ব্লকে ১০ হেক্টর জমিতে প্রায় ১০০ জন কৃষক গ্রীষ্মকালীন শিম চাষ করেছেন। সবার ক্ষেতেই ভালো ফলন হয়েছে। তারা দামও পেয়েছেন বেশ ভালো। ফলে আগামীবার চাষ আরো বাড়বে বলে ধারণা করছেন তিনি।

সীতাকু- উপজেলা কৃষি অফিসার সাফকাত রিয়াদ বলেন, ২০১০ সালে বগুড়া থেকে আনা গ্রীষ্মকালীন রূপবান শিম এ উপজেলায় চাষ শুরু হয়েছিল। সফলতা আসায় এরপর থেকে প্রতিবছর চাষ পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। এবার এখন কৃষকের সংখ্যা হচ্ছে ২৪৫ জন। এবার আমরা হেক্টর প্রতি ৪০০ মেট্টিক টন উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করেছি। সর্বত্র ভালো ফলন হয়েছে। কৃষকরা দামও পাচ্ছেন ভালো। আর এখন পর্যন্ত এ শিমে রোগ বালাই দেখা যায়নি। ভবিষ্যতে চাষ আরো বাড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনিও।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট