চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

মন ভোলে রাঙামাটির পথে

মুহাম্মদ বোরহান উদ্দিন, রাউজান

১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১:১৯ পূর্বাহ্ণ

কবি গান লিখে গেছেন, গ্রামছাড়া ওই রাঙামাটির পথ, আমার মন ভোলায় রে…। আসলেই রাঙামাটিতে গেলে মন যে ভুলবেই। এবার গন্তব্য সেই মন ভোলানোর রাঙামাটিতে।

]লোকালয় ছেড়ে, ওই দূর পাহাড়ে, গাঢ় সবুজ রঙের পাহাড়ের ভেতরে চলে গেলাম রাঙামাটি। পৌঁছতে পৌঁছতে দেড়টা বেজে গেলো। দেরি না করে দুপুরের খাবার সেরে প্রথমে চলে গেলাম ঝুলন্ত ব্রিজ। এই ঝুলন্ত ব্রিজগুলো আরো কয়েক জায়গায় দেখেছি। সুন্দর। ব্রিজের দু’ পাড়েই সবুজের মিতালি পাহাড়ের সাথে। নদীর মাঝে দারুণ লাগে দেখতে। বাংলাদেশে যতগুলো মায়াময় দৃষ্টিনন্দন পর্যটন এলাকা রয়েছে রাঙামাটি তার মধ্যে অন্যতম। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের প্রাকৃতির লীলাভূমি পার্বত্য জেলা রাঙামাটি। রাঙামাটির উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা-মিজোরাম, দক্ষিণে বান্দরবান, পূর্বে মিজোরাম ও পশ্চিমে চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়ি। এ জেলা আয়তনের দিক থেকে দেশের সর্ববৃহৎ জেলা। নদী ও হ্রদ, উঁচু-নিচু পাহাড়ি আঁকাবাকা পথ, সবুজ পাহাড় বেষ্টিত রিকশাবিহীন পর্যটন এলাকা।

রাঙামাটি শহরের প্রধান আকর্ষণই ঝুলন্ত সেতু। সাধারণত রাঙামাটি গিয়ে এই ঝুলন্ত সেতুটি না দেখে কেউ ফেরত আসে না। রাঙামাটি শহরের শেষপ্রান্তে কাপ্তাই লেকের একাংশে ৩৩৫ ফুট লম্বা এই ব্রিজটি পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্পট। এ সেতুকে বলা হয় ‘সিম্বল অব রাঙামাটি’ নয়নাভিরাম বহুরঙা এই ঝুলন্ত সেতুটি দুটি বিচ্ছিন্ন পাহাড়ের মধ্যে গড়ে দিয়েছে হৃদয়ের সম্পর্ক। সেতুটি পারাপারের সময় সৃষ্ট কাঁপুনি এনে দেয় ভিন্ন দ্যোতনা। এখানে দাঁড়িয়েই কাপ্তাই হ্রদের মনোরম দৃশ্য অবলোকন করা যায়। কাপ্তাই হ্রদের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতে যে কেউ বাধ্য। ওপারেই রয়েছে আদিবাসী গ্রাম। ইচ্ছে হলেই দেখা যাবে আদিবাসী জীবনযাপনের ক্ষয়িষ্ণু চালচিত্র।
আসলেই ‘রাঙামাটি’ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি। এখানকার লেক, ঝরনা, বিস্তীর্ণ নীলাকাশ, পাহাড় সর্বোপরি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাধারণ সহজ-সরল জীবন সবাইকে বিমোহিত করবে। এখানে যেদিকে নজরে পড়বে কেবল পাহাড় আর কাপ্তাই লেকের পানি। বিশাল কাপ্তাই লেকের পুরোটাই যেন অপার মমতায় দুহাত দিয়ে ধরে রেখেছে পাহাড়গুলি। আকাশের মেঘ আর তার নীলাভ আভা খেলা করে লেকের জলে, দূরে পাহাড়ের আড়ালে হারিয়ে যায়, আবার যেন উকি দিয়ে দেখে নেয়, কেমন আছে লেক। হলফ করে বলা যায়, এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টান সবাইকে টানবেই।
ব্রিজের ওপারে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা নানারকম পসরার মেলা সাজিয়ে বসেছে। কি দারুন সব জিনিস। অনেক কালার ফুল। এদের মনে সম্ভবত অনেক রঙ। সেখানে অবস্থান করলাম আমরা। তাদের সাথে প্রায় ২০/২৫ মিনিট কথা বললাম। তাদের অনুরোধে কিছু চকলেটও খেলাম। ১৫ এপ্রিল তাদের একটি অনুষ্ঠানে দাওয়াতও পেলাম আমারা। সেখানে আমাদের পরিবেশনে করলাম একটি দেশাত্ববোধক গান ও উপজাতীয় ভাষায় তাদের একটি গানের কিছু অংশ বিশেষ।
এরপর অল্প কিছু দূরে গেলাম, সেখানে রয়েছে চায়ের দোকান। সেখানে গরুর দুধ দিয়ে চা খেলাম। প্রতি কাপ চায়ের দাম ১০ টাকা। সে চায়ের দোকানের মালিকের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া। বহুবছর যাবত রাঙামাটিতেই থাকে। কথা হল তার সাথেও। চায়ের দোকানের কিছদূর পর একটি বড় হস্ত শিল্পের দোকান আর খাওয়ার জায়গা। চমৎকার লাগলো সবকিছু। ফিরে এলাম সেখান থেকে। যাত্রা করলাম সোজা রাঙামাটির অরন্যক রিসোর্টে পথে।

আরণ্যক হলিডে রিসোর্ট:
রাঙামাটিতে ঘুরার যায়গার অভাব নাই, কিন্তু অনেকেই হয়ত আরণ্যক হলিডে রিসোর্টের কথা জানে না। দেশের অন্যতম পর্যটন শহর রাঙামাটির বিনোদন জগতে এবার সংযোজন হয়েছে ওয়াটার ওয়ার্ল্ড হ্যাপী আইল্যান্ড। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩০৫ বিগ্রেড’র উদ্যোগে এই প্রথম পাহাড়ি এই জেলায় স্থাপন করে দৃষ্টিনন্দন হ্যাপী আইল্যান্ড। শহরের ভেদভেদীস্থ সেনাবাহিনীর অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র আরণ্যক এর পাশেই কাপ্তাই হ্রদের মধ্যখানে অবস্থিত ৪৫ শতক জায়গার উপর স্থাপিত এই হ্যাপী আইল্যান্ড বিনোদন কেন্দ্রটি সম্প্রতি উদ্বোধন হয়। এই রিসোর্টে ওয়াটার পার্ক, রাইডার, লেকভিউর সাথে সুইমিং পুলের সুবিধা, বোট রাইড এবং দুর্দান্ত নির্মাণশৈলি সবার বিনোদনের জন্য নজর কাড়বে অনায়াসেই। বিশেষ করে শিশুদের খুব ভাল লাগবে।
সম্প্রতি মাত্র দুইবছর সময়ে রাঙামাটি সেনাবাহিনীর উদ্যোগে তাদেরই করিডরের মধ্যে সুসজ্জিত আরণ্যক হলিডে রিসোর্ট চালু করে। আরণ্যক রিসোর্ট আগত পর্যটকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া পড়ায় আরণ্যকের সাথেই লাগোয়া কাপ্তাই হ্রদের পানির মাঝখানে অবস্থিত নয়নাভিরাম দৃশ্যাবলিত একটি পাহাড়ে হ্যাপী আইল্যান্ড নামে ওয়াটার ওয়ার্ল্ড বিনোদন কেন্দ্রটি চালু করেছে

রাঙামাটি সেনা রিজিয়ন কর্তৃপক্ষ।

যেকোন দিন পুরা পরিবার নিয়ে ঘুরে আসার জন্য এই রিসোর্টি অসাধারণ। আর যদি সেটা কোন পূর্ণিমার রাত হয় তবে তো কথাই নেই। দিনের বেলায় যেমন সুন্দর তেমনি দুর্দান্ত তার রাতের পরিবেশও। এই রিসোর্ট আর্মিদের নিয়ন্ত্রণে থাকায় নিরাপত্তা নিয়েও কোন ঝুঁকি নেই। রাঙামাটির নতুন যুক্ত হওয়া এ রিসোর্টটিতে সেদিন পর্যটনে ভরপুর ছিল। একদিকে সেখানকার আর্মিদের প্রশিক্ষণ চলছে অন্যদিকে পর্যটকের ভিড়। খুবই চমৎকার লাগছিল তখনকার পরিবেশ। সবাই ছবি তুলছে মনের আনন্দে। সেখানকার ঘাসগুলো যেন সবুজ প্রকৃতির শোভা ছড়াচ্ছে পর্যটকদের। সেনাবাহিনীর নিজ হাতে গড়া এ অপরুপ সৌন্দর্যে রিসোর্টে আসা পর্যটকদের সত্যিই বিমোহিত করেছে। সফরে ভ্রমন সঙ্গী ছিল এস এম কপিল উদ্দিন, এস এম আসিফ তানবীর ও জিয়াউল হক।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট