চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১:০৫ পূর্বাহ্ণ

ধুপপানির শুভ্র ঝর্নায় অবগাহন

কামাল হোসেন হ বিলাইছড়ি, রাঙামাটি

দেশের প্রায় ৩০টিরও অধিক ঝরনা দেখার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। এমন উচু, শুভ্র, হিং¯্র, ক্ষিপ্র, তেজদ্বীপ্ত, যৌবনময়, রূপসী ঝর্না জীবনে দেখিনি। কোন বিশেষণ দিয়ে শেষ করা যায় না এই ঝর্নার। পথের হাজারো কষ্ট নিমেষেই ধুয়ে মুছে দূর করে দিল অপরূপ ঝরনা ধুপপানি।
প্রায় ২০০ ফুট উচু হতে ৬ ফুট উচ্চতার প্রায় ১৫ ফুট ব্যাস নিয়ে শুভ্র আকার ধারন করে ঝাঁপিয়ে পড়ছে দানবীয় রূপে। পুরো খাদ জ্বলকনায় ছেয়ে যায়। চোখ খোলা এবং মোবাইল বের করে ছবি তোলা কঠিন। উল্কার মতো ভেসে বেড়াচ্ছে জল কনা, হিমেল পরশে শীতল করছে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসা ঝর্না প্রেমিদের। এই ঝর্নাটি দেশের উচ্চতম ঝর্নাসমূহের একটি। এটির অন্যতম বিশেষত্ব ঝর্নার নিচে একটি গুহা আকৃতির খাদ আছে, যেখানে বসে ঝর্নার পিছন থেকে ছন্দময় প্রবাহ উপভোগ করতে পারবেন। এদেশে আর কোন ঝর্নায় এমন চটি পাবেন না।
আসার সময় হালকা বৃষ্টি হয়েছিল, ঝর্নায় নেমে সবাই যখন মাস্তিতে মশগুল তখনি হঠাৎ বেড়ে গেল ঝর্নার ক্ষিপ্রতা। পাহাড়ি গাইডদের মতে হৈ-হুল্লোড় বেড়ে যাওয়ায় ভ্রান্ত ক্ষিপ্ত হয়ে গেছেন। এখানে ঝর্নার ওপরের খাদে সাধনা করেন এক ভান্তে। সেজন্য আগে এখানে আসা নিষিদ্ধ ছিল।

ঝর্নার ক্ষিপ্রতা দেখে যখন ফিরে আসতে চাই তখন দেখি ঝিরিপথে বন্যার স্রােত। অন্যদলের ২ জন ভেসে গেল স্রােতের তোড়ে, একজন ২০০ ফুট দূরে শরীর সব কাপড় ছেড়ে দিয়ে একটি গাছ ধরে জীবন রক্ষা করেন। আটকে পড়েন ১০-১২টি দলের প্রায় ৩ শতাধিক পর্যটক। সাহসী এক গাইড প্রায় ৭০০/৮০০ ফুট খাড়া পাহাড় কেটে বিকল্প রাস্তা তৈরি করে। খাড়া পথ ধরে হামাগুড়ি দিয়ে কোন মতে ওপরে উঠে এসে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলি। বৃষ্টিতে পিচ্ছিল পাহাড়ের খাদে ঢাকার অন্য দলকে সহযোগিতা করি আমরা। ঢাকার কিছু নারী সদস্য খুব দুর্বল ছিল, যেখানে পা দেন পিছলে পড়ে যান, উনাদের ধরতে টিমের যে সদস্য এগিয়ে আসেন উনিও চিৎপটাং। এখানে সবচেয়ে বড় ঝুঁকি নিচে গড়িয়ে পড়লে ইহলীলা যেমন সাঙ্গ হবে তেমনি একবার মনোবল হারালে ফিরে আসা কঠিন হবে। প্রায় ১ ঘন্টার মরণপণ সংগ্রাম করে যখন ওপরে উঠে আসলাম তখন সকলের প্রাণ যায় যায় অবস্থা, গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল।
যেখানে আসা যত কঠিন সেখানে যেন ততবেশি সৌন্দর্য অপেক্ষা করে। ধুপপানি ঝরনায় আসা সত্যি অনেক কঠিন, এখানে পরিচর্যা, রাস্তা তৈরি, রশি বাধা, পথ তৈরি কিছুই নেই। জীবনবাজি রেখে ঝুঁকি নিয়ে এখানে আসতে হয়। আনাড়ি, ভিতু এবং দুর্বলচিত্তের কারো না আসাই উত্তম।

কিভাবে যাবেন: কাপ্তাই থেকে প্রায় ২ ঘন্টার বোট করে বিলাইছড়ি, বিলাইছড়ি থেকে প্রায় ২ ঘন্টা ৩০ মিনিট বোট করে উলুছড়ি, উলুছড়ি থেকে ৩০ মিনিটের খোসা নৌকা করে পাহাড়। পাহাড়ি পথে উঁচু-নিচু কঠিন ট্রেকিং প্রায় ২ ঘন্টা ৩০ মিনিটের যা আপনাকে হাপিয়ে তুলবে। এসে পৌঁছাবেন ধুপপানি পাড়া। এখান থেকে ঝর্নার ছপাৎ ছপাৎ আওয়াজ শোনা যায়। পুরো পথে শুধু ধুপপানি পাড়ায় একটি খাওয়ার দোকান অন্য কোথাও কোন আহারের সুযোগ নেই। ধুপপানি পাড়া থেকে নামতে হবে খাড়া ৭০০/৮০০ ফুট যা কমপক্ষে ৩০ মিনিটের ধাক্কা। ধুপপানির সাথে দেখে যেতে পারেন গাছ কাটা, নও কাটা এবং বিলাইছড়ি ঝরনা।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট