চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বৃষ্টির মুখরতায় টাঙ্গুয়ার হাওর

মুহাম্মদ আবু নাসের , রাঙ্গুনিয়া

৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১২:৫৯ পূর্বাহ্ণ

প্রাণিবৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ টাঙ্গুয়ার হাওরের আয়তন ৬ হাজার ৯১২ একর হলেও বর্ষাকালে তা ২০ হাজার একর ছাড়িয়ে যায়। কানশী নদী ধরে হাওরের দিকে ছুটে চলে বাহন। তাহিরপুর ঘাট থেকে রওনা হওয়ার আগে নৌকায় বোঝাই করে নিতে হয় হাওরবাসের প্রয়োজনীয় রসদ। ঘাটজুড়ে বেঁধে রাখা রং বেরঙের সারি সারি পর্যটক নৌকা মৃদু লয়ে দোল খায়। পানিতে আলোড়ন তুলে দুই পাশে ঢেউ আছড়ে ফেলে ছুটে চলে ইঞ্জিন চালিত নৌকা। নৌকায় বসে হাওরের অপূর্ব বৃষ্টি দেখার মজাই আলাদা। স্থির পানিতে বৃষ্টির ফোঁটা পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই বলের ন্যায় একদলা পানি লাফিয়ে ওঠে। তারপর ছোট ছাতার ন্যায় আকুতি নিয়ে চারপাশে প্রসারিত হয়ে হাওরে মিশিয়ে যায়। নৌকার পাশ কাটিয়ে পেছনে চলে জলার ঘাসবন, কলমিবনে বকের ইতিউতি চাহনি। বৃষ্টির পরশ নিয়ে আসা হাওরের হিমেল বাতাসের ছোঁয়া লাগে চোখেমুখে। নৌকার ছাদে উঠে দাঁড়ালে দৃষ্টিজুড়ে ধরা দেয় সীমাহীন অবাক জলের দুনিয়া। যত দূর চোখ যায়, ঢেউ খেলানো নীল জলের রাজ্য। মাঝে-মধ্যে সবুজ টিপের মত জেগে থাকা হিজল-করচের বন। এ সৌন্দর্য ভাষাহীন। সেই এক অন্যরকম অনুভূতি।

হাওর এলাকায় রয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। সিঁড়ি বেয়ে টাওয়ারের চূড়ায় উঠলে ধরা দেয় হাওরের অন্য রূপ। সন্ধ্যা নামলে হাওরের অবস্থা নীলাভ রঙের মোলায়েম পরশ বুকজুড়ে। হাওরের সীমারেখায় মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে জ¦লে ওঠে সারি সারি সীমান্তবাতি। রাতের শেষ প্রহর পেরোলেই অবাক হয়ে ধরা দেয় হাওর। অপার্থিক নীলাভ আলোয় ভাসছে যেন পুরো হাওর। আবছা আঁধার ফুঁড়ে সে নীলের মোলায়েম চাদরে জড়িয়ে আছে আকাশ জমিন হাওর তেপান্তর !
আলো আরেকটু ফোটার পর অন্যরকম আবেশ। হাওরের প্রান্ত ছুঁয়ে নীলাদ্রি হ্রদ। হ্রদের গা ছুঁয়ে মেঘালয় পাহাড়ের চূড়ায় ক্রমে উঠে গেছে চুনাপাথর আর শৈলশ্রেণির দেয়াল। পাহাড়ের গা যেন জড়িয়ে ধরে আটকে থাকা বাড়িঘরের সীমা ছাড়িয়ে পাহাড়শ্রেণির চূড়ায় জমেছে মেঘ, তার ছায়ায় লেকের নীল জল। মেঘকণা আর ভোরের বাতাসের হিম পরশ দোলা দেয় তনুমনে।

টাঙ্গুয়ার হাওরে যেতে হলে বৃহত্তর সিলেট ভূমির সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলায় যেতে হবে। বাসে করে সুনামগঞ্জ পৌঁছে সেখান থেকে বাস কিংবা লেগুনায় করে তাহিরপুর যেতে হয়। নদীর ঘাটে রয়েছে সারি সারি পর্যটক নৌকা। সেসব নৌকায় করে হাওরে ভ্রমণ করেন পর্যটকরা অবলীলায়। বৃষ্টিমুখর দিনে হাওর ভ্রমণের আনন্দ অপরূপ হয়ে ধরা দেয়। যার পরশে পুলকিত হয় দেহমন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট