চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

বোয়ালখালীতে লেবুর প্রচুর উৎপাদন

ভালো লাভ পেয়ে চাষীও স্বস্তিতে

মো. ফারুক ইসলাম

৫ মে, ২০১৯ | ১:২৮ পূর্বাহ্ণ

দক্ষিণ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায় উৎপাদিত লেবু এখন বাজার মাতাচ্ছে। ফলন বেশি হওয়ায় গরমের দিনে লাভও হচ্ছে প্রচুর। এতে করে চাষীর আসল টাকা উঠার পাশাপাশি লভ্যাংশও যোগ হচ্ছে।
জানা যায়, বোয়ালখালীর পূর্বদিকে কড়লডেঙ্গা ও জ্যৈষ্ঠপুরায় রয়েছে পাহাড়। আর এসব পাহাড়ে বারোমাসি লেবুর আবাদ করে স্থানীয় চাষীরা জীবিকা নির্বাহ করে। কষ্টার্জিত টাকা লেবু বাগানে খাটিয়ে লাভের আশায় প্রহর গুনতে থাকেন। তবে গরমকালে ও রমজান মাসে লেবুর চাহিদা বেশি থাকায় এ সময়টাতে চাষীরা বেশি লেবু বিক্রি করেন। তবে বর্ষাকালে লেবুর ফলন বেশি হলেও এ সময় লেবুর দাম কম থাকে। এতে করে চাষীরা লোকসানের শিকার হন।
কড়লডেঙ্গার স্থানীয় চাষী মো. সৈয়দুল আলম ও মুরাদ হাসান বলেন, কড়লডেঙ্গার পাহাড়ে প্রায় ৫শ’ থেকে ৬শ’ লেবু বাগান আছে। এসব বাগান সমতল ভূমি থেকে দূরে হওয়ায় লেবু চাষীদের অনেক কষ্ট স্বীকার করে পাহাড়ে লেবু বাগান করে তা পরিচর্যা করতে হয়। বর্ষাকালে লেবুর চাহিদা কম থাকায় বছরের এ সময়টাতে তাদের লোকসান গুণতে হয়। গরমকালে লেবুর চাহিদা বেশি থাকার দরুণ লেবুর আকার বড় হওয়ার আগে তারা ছোট-বড় লেবু বাগান থেকে এনে বাজারে বিক্রি করেন। এতে করে বর্ষায় লোকসান হওয়া অর্থের কিছুটা হলেও পাওয়া যায়। বর্তমানে প্রতি বস্তা লেবু মহাজনের কাছে ৩ হাজার ৮শ’ টাকা থেকে ৪ হাজার টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। আর প্রতি বস্তায় লেবুর থাকে ১৫শ’। তবে এতে খরচও আছে। পাহাড়ের লেবু বাগান থেকে লেবু পেড়ে আনতে কর্মীর দরকার পড়ে। প্রতি ভার লেবু আনতে কর্মীকে ৫শ’ টাকা দিতে হয়। তাছাড়া লেবু আড়তে আনার পর তা বাছাই করে বস্তায় ঢুকাতেও খরচ দিতে হয়। সব মিলিয়ে কিছু টাকা পরিবহন খরচ ও সাধারণ শ্রমিকদের বেতনে খরচ হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে জাতীয় চাষীর পুরস্কার নেয়া জ্যৈষ্ঠপুরার লেবু চাষী ও ব্যবসায়ী মোজাম্মেল হক বকুল জানান, তার এলাকায় প্রায় ৬শ’ লেবু বাগান আছে। এসব বাগান থেকে প্রতিদিন প্রচুর লেবু বিক্রির জন্য আনা হয়। আসন্ন রমজানে লেবুর প্রচুর চাহিদার কথা মাথায় রেখে চাষীরা প্রচ- খাটছেন লেবু বাগানে। কারণ রমজানের ইফতারে লেবুর শরবতের জুড়ি নেই। তাছাড়া এলাকার চাহিদা মিটিয়ে প্রতিদিন প্রচুর লেবু দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হচ্ছে। বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা চালানের মাধ্যমে টাকা প্রেরণ করেন। আর প্রতিদিনের বাজার দর হিসেব করে তারা লেবু রপ্তানি করে থাকেন। একেক দিন একেক রকম দাম থাকে বাজারে। গত কিছুদিন আগেও স্থানীয় বাজারে প্রতি জোড়া লেবু ৩০ থেকে ৪০ টাকা বিক্রি হয়েছে। এখনো বড় সাইজের লেবুর দাম একটু বেশি। আর ছোট সাইজের লেবু কিছুটা কম দামে বিক্রি হচ্ছে। এসব লেবু কোথায় রপ্তানি হয় জানতে চাইলে তিনি জানান, সাধারণত চট্টগ্রাম শহর, ফেনী, স্টিল মিল এলাকা, কুমিল্লা, নোয়াখালী, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে লেবু রপ্তানি করা হয়। প্রতিদিন বোয়ালখালী থেকে ৩০ থেকে ৪০ ট্রাক লেবু দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রপ্তানি করা হয়।
মধ্যম কড়লডেঙ্গার লেবু ব্যবসায়ী আবু তাহের জানান, কলন্দর শাহ মাজার গেইটে তার নিজস্ব লেবুর আড়ত আছে। প্রতিদিন তার আড়ত থেকে ৫ হতে ৮ ট্রাক লেবু বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হয়। তাছাড়া পাহাড়ের লেবু বাগানে বারো মাসই লেবু ধরে বলে লেবু চাষীদের বাগান পরিচর্যার দিকে বিশেষ নজর রাখতে হয়। আবার এসব গাছ থেকে লেবুর চারার কলম করে নতুন নতুন বাগান গড়ে তোলা হচ্ছে। একেকটা লেবু গাছ বড় হলে গড়ে ৭০ থেকে ৯০টি লেবু ধরে। আর লেবু পরিপক্ক হলে সাইজটা অনেক বড় হয়। সেই সাথে প্রচুর রস পাওয়া যায়। এ গরমে লেবুর চাহিদা বেশি হওয়ায় চাষীরা অধিক লাভের আশায় ছোট-বড় সব লেবু বাগান থেকে পেড়ে বাজারে নিয়ে আসছে। কারণ গরমকাল আর রমজান মাসকে ঘিরে চাষীরা অধিক লাভের আশায় প্রচ- পরিশ্রম করছেন। অধিক ফলনের কারণে অধিক মুনাফা পাওয়ার পাশাপাশি লেবু চাষে লগ্নি করা অর্থ উঠে আসছে। ফলে চাষীর মুখে এখন স্বস্তির হাসি। তাছাড়া লেবু বাগানকে কেন্দ্র কওে এখানে অনেক ব্যবসায়ী লেবু ব্যবসায় ঝুঁকেছেন। একে তো প্রচ- গরম, অন্যদিকে গরমে প্রচুর চাহিদা থাকায় বাজারে এখন লেবুর চাহিদা বেশি। যার কারণে ব্যবসায়ীরা লাভের আশায় লেবুর ব্যবসাটাকে সময়োপযোগী মনে করছেন। বাম্পার ফলনের কারণে বর্তমানে স্থানীয়দেও চাহিদা মিটিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বাজার মাতাচ্ছে বোয়ালখালীর লেবু।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট