চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

চন্দনাইশ ও সারাদেশে কমে গেছে

বট-দেবদারুসহ বড় বড় প্রাচীন গাছ

দেলোয়ার হোসেন , চন্দনাইশ

৪ আগস্ট, ২০১৯ | ১:২৫ পূর্বাহ্ণ

একসময় বাংলাদেশের গ্রামে-গঞ্জে বড় বড় প্রাচীন বৃক্ষরাজীতে বসতি করতো শকুনসহ বিভিন্ন ধরনের পাখি। কিন্তু কালের বিবর্তনে বর্তমানে শকুনসহ বড় বড় পাখির বাসা তৈরি ও বিশ্রাম নেয়ার মতো বড় গাছের সংখ্যা খুব কম। সরকারি বনসহ বিভিন্ন বনাঞ্চলেও বড় গাছের পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে।
শিমুল, ছাতিন, বট, দেবদারুর মতো প্রাচীন বৃহদাকার গাছ এখন সহজে চোখে পড়ে না। এতে গত তিনযুগে আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে পরিবেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় পাখি শকুন। গ্রামে-গঞ্জে একসময়ে গবাদি পশুর মৃতদেহ যেখানে নিয়ে ফেলা হত, সেখানে দলে দলে হাজির হত শকুন। দ্রুতগতিতে তারা মৃত গবাদিপশুর মাংস খেয়ে সাবাড় করে দিত। মৃত পশুর রোগজীবাণু শকুনের পেটে দ্রুত ধ্বংসপ্রাপ্ত হত। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে এ শকুনই প্রকৃতি হতে মৃতদেহ অপসারণের মাধ্যমে পরিবেশ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু বর্তমানে বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীদের তালিকায় স্থান পেয়েছে পরিবেশ রক্ষাকারী পাখি শকুন।
বিজ্ঞানীদের মতে, শকুন না থাকার কারণে বাংলাদেশে এনথ্রাক্স, যক্ষা, ক্ষুরারোগ ইত্যাদি মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া এবং জলাতংক রোগ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। শকুন না থাকায় গবাদিপশুর মৃতদেহ এখন শিয়াল, কুকুর, ইঁদুর, কাক, চিলসহ অন্যান্য প্রাণী খাচ্ছে। এদের পেটে রোগজীবাণু নষ্ট না হওয়ায় জঙ্গল ও জনপদে ছড়াচ্ছে মারাত্মক সব ব্যাধি। শতবর্ষী বট, র‌্যান্ট্রি (শিরিষ), তেঁতুল, দেশীয় কড়ই, কদমসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ একদিকে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করছে, অন্যদিকে প্রকৃতির শোভাবর্ধন করে চলেছে। কিন্তু এগুলো রক্ষায় তেমন কোন উদ্যোগ নেই। কিছু সংখ্যক সুবিধাভোগী মানুষের আত্মবিনাশী কার্যক্রমে পুরানো এ গাছগুলো সাবাড় হচ্ছে। রোগাক্রান্ত হয়েও মরে যাচ্ছে অনেক গাছ। কিন্তু কিছু গাছের ফল আবার পাখির খাবারের অন্যতম উৎস। গাছ কমে যাওয়ায় পাখিরও খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। চন্দনাইশের বিভিন্ন অঞ্চলে এখনো মাঝে মধ্যে চোখে পড়ে শতবর্ষী বটগাছ। যদিও সংখ্যায় তা নিতান্তই কম।
ক্লান্ত প্রতীক এসব বট গাছের শীতল ছায়ায় গা জুড়িয়ে নেয়। এসব গাছের পাতা, ফল ও বীজ পশুপাখির খাবারের প্রয়োজন মেটায়। শুকনো ডালপালা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সর্বোপরি বিশাল এ গাছগুলো জীবন রক্ষাকারী অক্সিজেনের এক বিশাল আধার। বনের মধ্যে বটগাছ না থাকলেও চন্দনাইশের ৪টি বনবিটের বিশাল পাহাড়ি এলাকায় জারুল, কদম, র‌্যান্ট্রি, আকাশি, মেহগনি, সেগুন ও গর্জনসহ বিভিন্ন প্রজাতির বনজ গাছ সরকার পরিবেশ রক্ষার লক্ষ্যে দীর্ঘদিন থেকে বনায়ন করে যাচ্ছে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গৃহস্থীদের পুকুরের পাড়ে রেন্ট্রি, তেঁতুল তবে প্রকৃতি রক্ষায় এ গাছগুলোকে টিকিয়ে রাখা প্রয়োজন। প্রাচীনতম এসব গাছ প্রকৃতি সুরক্ষায় খুবই প্রয়োজনীয় হলেও এগুলোর অনেকগুলোই ব্যক্তি মালিকানাধীন। কতগুলো আবার সড়কের পাশে থাকায় সেসব গাছ দেখার দায়িত্ব সরকারি ভিন্ন সংস্থার।
ইচ্ছা থাকলেও তারা কোন পদক্ষেপ নিতে পারছে না। অনেক সময় সড়ক সংস্কার ও মেরামত প্রতিষ্ঠান স্থাপনের কারণে এসব প্রাচীন গাছগুলো কেটে সাবাড় করে দেয়া হয়। চন্দনাইশের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে এ রকম শতবর্ষী পুরনো কয়েকটি বটবৃক্ষ, তেঁতুল, দেবদারু দেখা গেলেও বেশকিছু গাছ বিগত বিশ বছরের মধ্যে কেটে সাবাড় করেছে জায়গার মালিকেরা। বর্তমানে গাছবাড়িয়া কলেজ গেইট সংলগ্ন বটবৃক্ষটি স্থানীয়দের মতে ২শ’ বছরের অধিক পুরানো এ বটবৃক্ষটি স্থানীয়রা রক্ষায় পুকুরের মধ্যে ওয়াল নির্মাণ করেছে।
একইভাবে পূর্ব জোয়ারা বড়–য়া পাড়া, সাতবাড়ীয়া দেওয়ানজী পাড়া, কানাইমাদারী বড়–য়া পাড়া, গাছবাড়ীয়া-বরকল সড়ক সংলগ্ন পাঠানদ-ী, ফতেনগর বড়–য়া পাড়া, বরমা বাইনজুরী, হযরত আহমদ উল্লাহ শাহ (রহ.) মাজার, চন্দনাইশ দরবার শরীফের সামনেসহ বেশকিছু এলাকায় এ ধরনের শতবর্ষী বটবৃক্ষ ও তেঁতুল গাছ এখনো চোখে পড়ে। এ সকল বটবৃক্ষ, দেবদারু, তেঁতুল গাছ রক্ষণাবেক্ষণে এগিয়ে আসলে পরিবেশের সহায়ক হিসেবে কাজ করবে বলে পরিবেশবাদীরা মনে করেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট