চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

চুনতি সীরাতুন্নবী মাহফিলের ইতিকথা

সৈয়দ মাহফুজ-উননবী খোকন , সাতকানিয়া

৪ আগস্ট, ২০১৯ | ১:২৫ পূর্বাহ্ণ

শাহ হাফেজ আহমদ। জন্মগ্রহণ করেন ১৯২২ সালে। তিনি ছিলেন উপমহাদেশের একজন প্রখ্যাত সুফি সাধক শাহ মাওলানা নজির আহমদের সুযোগ্য সন্তান। আধ্যাত্মিক সাধনা দিয়ে তিনি মানুষের খুব কাছে অবস্থান করেছিলেন। তিনি নিজ এলাকায় শাহ সাহেব, মামা, পীর সাহেব নামে পরিচিত ছিলেন। দারুল উলুম আলিয়া মাদ্রাসা থেকে ফাজিল পাশ করেন। ইসলামি সুফিবাদে বিশ্বাসী শাহ সাহেব আজীবন কাজ করে গেছেন ইসলামের আধ্যাত্মিক দর্শন প্রচারে।
তাকে যেভাবে দেখেছি
সময়টা আমার বালক বেলার। তিনি ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি পরতেন সাথে সাাদা লুঙ্গি, নকশাল ছিদ্রযুক্ত সাদা টুপি থাকতো তার মাথায়। চোখে থাকতো কালো রঙের চশমা। সুগন্ধি মাখতেন গায়ে। আঙুলে পরতেন দামি পাথরের আংটি। তার সাদাসিধে জীবনে আংটিটাই একটু আভিজাত্যের দাবি করতো। তখন আমার বাবা মা বেঁচে ছিলেন। মাঝে মধ্যে তিনি আমাদের বাড়ি আসতেন দুয়েকদিন থাকতেন। আমাদের বাড়ি নিয়ে কিছুটা বলি। সে সময় গ্রামে বিদ্যুৎ ছিল না। তখন চেরাগ, হারিকেন, হেজাগ বাতির দিন। বাড়ির কাজে সাহায্য করার জন্য তখন অন্তত পাঁচ সাতজন গৃহকর্মী ছিল। রং চা পান করতেন, থ্রিকেস বা ক্যাপস্টেন সিগারেট খেতেন শাহ সাহেব মামা। তার জন্য সেটি আমিই নিয়ে আসতাম। বর্তমানে এই সিগারেট বাজারে নেই। শাহ সাহেব যখন আমাদের বাড়িতে আসতেন তার পুত্র জামাল সাহেব, মেয়ে জামাই শিবলি, মানিক (চুনতি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ) সবাই আসতেন। মাঝে মধ্যে শাহ সাহেবের সহধর্মিণীও আসতেন। সময়টা আমাদের জন্য খুবই আনন্দের ছিল। তার আসা উপলক্ষ্যে গল্প-গুজব, খাওয়া-দাওয়া, চা-নাশতা সবই আমাদের বাড়িতে তৈরি করে পরিবেশন করা হত সবাইকে। উনার সান্নিধ্য পেতে অনেকেই ছুটে আসতেন। উৎসবমুখর হয়ে উঠতো আমাদের বাড়ি। এছাড়াও তিনি ভোয়ালিয়া পাড়ার জব্বর মিয়ার বাড়ি, রফিউল কাদের বাড়ি, ছমদরপাড়ার শেঠ আবদুল জলিল ( শেঠ সাহেবের বাড়ি) যেতেন। তিনি আমাদের মাঝে নেই তবুও অনুভবে থাকবেন অনন্তকাল।
চুনতি সীরাতুন্নবী (সা.) মাহফিল : শুরুতে আয়োজক উদ্যেক্তা কেউ ছিল না। এ মাহফিলের শুরুতে ভূমিকা ছিল আমাদের। রুপকানিয়া সমাজ কল্যাণ সমিতির (রুসকস) ৩৫-৪০ জন সদস্য এ মাহফিলের মূল উদ্যোক্তা। আমাদের সাথে ছিলেন মরহুম শেঠ আবদুল জলিল, মরহুম সৈয়দ সাদউল্লাহ, ডা.মোজহারুল হক, রফিউল কাদের, জব্বার মিয়া, আবুল হোচন সাচি ডাক্তারসহ অনেকে। ২৬টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত সাতকানিয়া থানা। পরে সাতকানিয়ার ২৬ ইউনিয়ন থেকে ভাগ হয়ে ৯ ইউনিয়ন নিয়ে লোহাগাড়া থানার উদ্বোধন করা হয়। এর ভিওিপ্রস্তর স্থাপন করেন সাবেক খাদ্যমন্ত্রী এজি মাহমুদ। সাথে আমিও ছিলাম। চুনতি শাহ সাহেব কেবলার বাড়ির সামনে উঠানে আমরা ঈদে মিলাদুন্নবীশেষে সবাইকে খাবার পরিবেশন করতাম। তখন বিদ্যুৎ এসেছে। একদিন খাবার পরিবেশনকালে বিদ্যুৎ চলে যায়। তখন আমরা মোমবাতি জ্বালিয়ে একহাতে মোমবাতি অন্যহাতে চুনতিতে আগত লোকজনকে খাবার পরিবেশন করতাম। এসময় মোমবাতি গলে হাতের আঙুলে গলে পড়তো। এ নিয়ে খুব যন্ত্রণাও ছিল। এসব স্মৃতি নিয়ে ভাল লাগা আর নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত হই আজও।
পরবর্তীতে চুনতির হিরন চেয়ারম্যান, মোসলেম খান বাজালিয়ার আলহাজ মকবুল আহমদ সাহেবসহ অনেককেই পেয়েছি। পর থেকে অনেক আলেম ওলামা ও সুফি সাধকদের পাই। চুনতির সীরাতুন্নবী মাহফিলে ঢাকা আজিমপুরের পীর হজরত দায়েম উল্লাহ, শিক্ষামন্ত্রী অধ্যাপক সৈয়দ আহসান উল্লাহ, তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট আবদুস সাওার এবং তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানও এসেছিলেন। সীরাতুন্নবী মাহফিলে প্রখ্যাত আলেম মৌলানা ফজলুল্লাহ সভাপতিত্ব করেছিলেন। সেই সময় জিয়াউর রহমানকে মাদ্রাসা বিল্ডিং এর উপরে খাবার পরিবেশন করা হয়েছিল। ভিআইপিদের সেখানে খাবার দেয়া হত। নিচতলায় মাহফিলে আসা সাতকানিয়ার লোকজন থাকেন। বর্তমানে এ সীরাতুন্নবী মাহফিল ১৯ দিন ধরে চলে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট