চলতি মৌসুমে মহেশখালী উপজেলার বিল বরজ ও পাহাড়ের ঢালুতে পানের বাম্পার ভাল হওয়াতে পানচাষীরা মহাখুশি। মহেশখালীর পান নিয়ে ফোকগান শিল্পী শেফালী ঘোষের কন্ঠে চট্টগ্রামের জনপ্রিয় গান ‘যদি সুন্দর একখান মুখ পাইতাম, মইশখাইল্যা পানর খিলি তারে বানাই খাওয়াইতাম’ সবার জানা আছে। উপজেলার প্রায় ৭৫ শতকরা লোক পান চাষের ওপর নির্ভরশীল। এখানকার অধিবাসীদের অন্যতম সুপ্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী পেশায় পান চাষ। পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় এই ভূমি পান চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। মহেশখালীর পানের বিশেষত্ব হলো মিষ্টি স্বাদ। যার কারণে এই পান সারাদেশে বিখ্যাত।
এ বছর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে মিষ্টি পানের বাম্পার ফলন যেমন হয়েছে, তেমনি হাট-বাজারে পানের দামও রেকর্ডে আকাশচুম্বী। মহেশখালীর উৎপাদিত পান দেশজুড়ে বিখ্যাত সুস্বাদু মিষ্টি পান হিসেবে পরিচিত। এই মিষ্টি পানের দাম বেড়ে যাওয়ায় চাষিরা খুশিতে আত্মহারা। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৫টি ইউনিয়নÑ বড় মহেশখালী, হোয়ানক, কালারমারছড়া, ছোট মহেশখালী, ও শাপলাপুরে পাহাড়ী ঢালু ও আবাদি কৃষি জমিতে ১৬শত হেক্টর জমিতে মিষ্টি পান চাষ করে আসছে পান চাষিরা। এদিকে পাহাড়ি ঢালুতে শ্রেণি অনুসারে পান চাষ দুই-তিন বছর স্থায়ী হলেও কৃষি জমিতে চাষ টিকে মাত্র ৫-৬ মাস। তবে কৃষি জমিতে পান চাষ অক্টোবর-নভেম্বর মাস থেকে শুরু হয়ে মে মাসে শেষ হয় এমনটা জানান পানচাষীরা।
পাহাড়ি এলাকায় পানচাষ যেকোন সময়ে করা যায় বলে হোয়ানকের হুমায়ুন মোস্তফা, কালারমারছড়া ইউনিয়নস্থ ফকিরজুম পাড়ার মোস্তাক, শাপলাপুর ইউপির এমইউপি সদস্য আব্দু সালাম ও ছোট মহেশখালী জাহাঙ্গীর আলমসহ পানচাষিরা জানিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পানের বরজ থেকে পান তুলে চাষিরা ছোট, মাঝারি ও বড় আকারে পান প্রতি বিরা ২৫০-৩০০ টাকা বিক্রি করে থাকেন। উপজেলার গোরকঘাটা, বড় মহেশখালীর নতুন বাজার, হোয়ানক ইউনিয়নের টাইম বাজার, পানিরছড়া বাজার, কালারমারছড়া ইউনিয়নের নোনাছড়ি বাজার, জনতা বাজার (বালুর ডেইল) ও শাপলাপুর ইউনিয়নের শাপলাপুরের হাইস্কুল বাজারে বিশালাকারে সপ্তাহে যেকোন দু’দিন উল্লেখিত ইউনিয়নের মিষ্টি পানের হাট বসে।
গত ৩১ জানুয়ারি স্থলপথে মহেশখালীতে প্রবেশদ্বার কালারমারছড়া জনতাবাজার (চালিয়াতলী বালুর ডেইল) বাজারে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, পান বেচাকেনা করতে ৭ শতাধিক চাষি পান নিয়ে বাজারে এসেছে। অপরদিকে পান ক্রয় করতে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আগত পান ব্যবসায়ীরা হাট-বাজার শুরু হওয়ার পূর্বে উপস্থিত হয়ে থাকে। ওই ব্যবসায়ীরা পানের আকারভেদে ক্রয় করে থাকে। ওই পান চকরিয়া, বান্দরবান, পটিয়া, বাঁশখালী, চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ ও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ী বাজার থেকে পান সংগ্রহ করে থাকে। অতপর ট্রাক বোঝাই করে পাঠিয়ে দেয়, দেশের বিভিন্ন জায়গায়।
পানচাষি আমির আলী বলেন, এ বছর আল্লাহর রহমতে যেভাবে পানের বাম্পার ফলন হয়েছে, তাতে পান চাষে লাভ না হয়ে লোকসান হবে মনে করছিলাম। কিন্তু বছরের শুরুতে পানের মূল্য একবারে আকাশচুম্বী। স্থানীয় পান ব্যবসায়ী জোনাব আলী জানান, বিদেশে পান রপ্তানি সরকারিভাবে বন্ধ থাকলেও ব্যক্তিগত উদ্যোগে মধ্যপ্রাচ্যেসহ বিভিন্ন দেশে পান রপ্তানি হচ্ছে।
পক্ষান্তরে এখানকার পানের সুনাম দেশের সীমানা পেরিয়ে এশিয়া মহাদেশ ছাড়াও ইউরোপ-আমেরিকাতেও ছড়িয়ে রয়েছে। কারো কারো মতে, আফ্রিকা মহাদেশের কিছু কিছু দেশও বাদ যায়নি। সমগ্র বাংলাদেশের দুই-তৃতীয়াংশ মিষ্টি পান মহেশখালী দ্বীপ উৎপাদিত হয়ে থাকে।
মহেশখালী উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কাইছার উদ্দিন বলেন, বিগত সময়ের চেয়ে বর্তমানে পানের ন্যায্যমূল্য যেমন পাচ্ছে, তেমনি বাম্পার ফলনও হয়েছে। তিনি জানান, কৃষি বিভাগ থেকে মৌসুমের শুরুতে পান চাষিদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিয়েছে।
কক্সবাজার জেলা কৃষি প্রশিক্ষণ অফিসার শামশুল আলম পূর্বকোণকে বলেন, মহেশখালীবাসীর ঐতিহ্য হচ্ছে পানচাষ। তারা যে কষ্ট ও মনোযোগ সহকারে পান বরজের পরির্চচা করে। তাতে পান চাষে হয়েছে বাম্পার ফলন, সাথে মিষ্টি পানের মূল্য এভাবে থাকলে তাদের মুখে হাসি ফুটবে। ভবিষ্যতে চাষের ওপর তারা আরো বেশি মনোযোগ হয়ে পড়বে আশা রাখি।