চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

মহেশখালী আদিনাথ জেটি

সাগর-পাহাড় প্যারাবনের নিবিড়তায় কার না মন জুড়ায়!

আরফাতুল মজিদ ■ কক্সবাজার

১ মার্চ, ২০২০ | ৩:৩৭ পূর্বাহ্ণ

মহেশখালীর অন্যতম আকর্ষণ আদিনাথ জেটি। এটি বাংলাদেশের দীর্ঘতম জেটি। আদিনাথ মন্দিরের পাদদেশ হতে শুরু হয়ে মহেশখালী চ্যানেলে গিয়ে পড়েছে এই সুদীর্ঘ জেটি। পিছনে শ্যামল মৈনাক পাহাড়, অন্যদিকে নোনাজলের সমুদ্র, দু’পাশে ঘন নিবিড় প্যারাবন জেটিটিকে এক অপূর্ব নৈসর্গিক মহিমায় উদ্ভাসিত করেছে। সোলার লাইটের মিষ্টি আলোয় জেটিটির সৌর্ন্দয্য রাতের বেলায় পর্যটক মনকে আকৃষ্ট করে। জ্যোৎস্না রাতে জেটিতে বসে মেঘ ও চাঁদের লুকোচুরি খেলা দেখতে দেখতে যেকোন মানুষের মনে কবিতার জন্ম নেবে।

বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন আদিনাথ পাহাড়ের পাদদেশের চতুর্দিকে কি অপূর্ব সৌন্দর্য ও নূপুরের লীলাভূমি। মহেশখালীর আদিনাথের চতুর্দিকে পর্যটন স্পট। বাংলাদেশের একমাত্র স্বাস্থ্যকর স্থান, পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ দীর্ঘসমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের সঙ্গে সংযুক্ত মহেশখালী আদিনাথের বিশাল পাদদেশে সাগর সংলগ্ন পাহাড় বেষ্টিত পর্যটক স্থান, ম্যানগ্রোভ বন ও মৌসুমী বাতাস সকলের মন জুড়ায়। বিভিন্ন প্রজাতির বাগান, বাগানে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির কিচির মিচির আনাগোনা, বাগানের নিচে আদিনাথ মন্দির, সাগরের ঢেউ, এমন অপরূপ সৌন্দর্য যেন মন কেড়ে নেয়ার মতো। এখানে জীবনের কোন ঝুঁকি বা হুমকি নেই। পাহাড়ের পাদদেশের সাথে সংযুক্ত সাগরের কিনারে আদিনাথ জেটি হয়ে কক্সবাজার থেকে আগমন ও নিরাপদে যাওয়া আসা যাওয়া করা যায়।
দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর মূল প্রবেশদ্বার দুই জেটি; ১ গোরকঘাটা জেটি, ২ আদিনাথ জেটি। গোরকঘাটা জেটিটি ১৯৮৬ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক নির্মিত হয়। মূলত এই জেটিটি নির্মাণের পর হতে জেলা শহর কক্সবাজারের সাথে যোগাযোগ অনেক সহজতর হয়। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি গোরকঘাটা জেটি উদ্বোধন করেন। উভয় জেটি দিয়ে দেশি-বিদেশি পর্যটকগণ মহেশখালী তথা মহেশখালীর বিশ্বখ্যাত আদিনাথ মন্দির দেখতে আসে। এই ২টি জেটি দিয়ে স্পিডবোট এবং ইঞ্জিন বোটের মাধ্যমে মহেশখালীবাসী জেলা শহর কক্সবাজারে যাতায়াত করে। আদিনাথ জেটি ২০০৬ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর নির্মাণ করে।

কীভাবে যাবেন: কক্সবাজার থেকে যেতে হবে নুনিয়াছড়া ৬ নং জেটি দিয়ে। কক্সবাজারের যেকোন জায়গা থেকে অটোরিকশা অথবা সিএনজিট্যাক্সি নিয়ে চলে যান ঘাটে। কক্সবাজারের ৬ নং জেটিঘাট থেকে জনপ্রতি ৮০ টাকা ভাড়ায় স্পিডবোট করে মহেশখালী যাওয়ার জন্যে স্পিডবোট পাবেন, মহেশখালী পৌঁছাতে সময় লাগবে ২০-২৫ মিনিট। এছাড়া ইঞ্জিন নৌকা দিয়েও যাওয়া যায়। চাইলে স্পিডবোট বা ইঞ্জিন নৌকা রিজার্ভ করে নিতে পারবেন।
মহেশখালীতে যা দেখবেন: বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ মহেশখালীর অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে আছে বৌদ্ধ বিহার, রাখাইন পাড়া, স্বর্ণমন্দির, ঝাউবন ও চরপাড়া বীচ, পান বাগান ও লবণের মাঠ। এছাড়া এই পাহাড়ি দ্বীপের চারপাশ ঘুরে দেখতে খারাপ লাগবে না আপনার।

জেটির বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশবিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এনভায়রনমেন্ট পিপল’র প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বলেন, আদিনাথ জেটিতে যাওয়ার সময় একদম সাগরের মুক্ত মৌসুমী বাতাস বয়ে যায়, যাতে কোন রোগ নাই। বলতে গেলে এখানকার পরিবেশ স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপযোগী। যেদিকে তাকাই সাগরের নিকটতম বাসিন্দা ঝাঁকে ঝাঁকে গঙ্গা কবুতর। মহেশখালীর সাগরের সাথে বাইন, সুন্দরী, কেউড়া গাছসহ আরো নানান প্রকারের সরকারের রূপিত ও সৃষ্টিকর্তার দানে হাজার হাজার প্রজাতির গাছের বাগান অপূর্ব সৌন্দর্য মন কেড়ে নেয়ার মতো। দ্বীপের এসব সম্পদ রক্ষাও করতে হবে আমাদের। যাতে ভূমিদস্যুদের নজর না পড়ে। যে পরিবেশের ওপর আমাদের বেঁচে থাকা।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট