চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

দেশের একমাত্র কুম্ভমেলা বাঁশখালীর ঋষিধামে পুণ্যার্থীর ঢল

অনুপম কুমার অভি ■ বাঁশখালী

১ মার্চ, ২০২০ | ৩:৩৭ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের বাঁশখালীতেই একমাত্র কুম্ভমেলা অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলার কালিপুর ইউনিয়নের কোকদ-ী গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয় ঋষিধাম। ঋষিকুম্ভ মেলা প্রবর্তন থেকেই অমৃত লাভের আশায় সাধু, সন্ন্যাসী ও ভক্তদের এখানে সমাগম ঘটতে থাকে। প্রতি তিনবছর অন্তর অন্তর ঋষিধামেই সাধু, সন্ন্যাসী ও ঋষিদের সম্মিলনীতে কুম্ভমেলা জমে উঠে।

কুম্ভমেলা হলো সাধু সম্মিলন। এই মেলাকে অনেকেই তীর্থস্থান হিসেবে চিহ্নিত করেন। ভারতের চারটি কুম্ভ তীর্থের (হরিদ্বার, প্রয়াগ, নাসিক, উজ্জয়িনী) যেকোন একটিতে প্রতি তিনবছর অন্তর পূর্ণ কুম্ভের সাথে সঙ্গতি রেখে প্রত্যেক অর্ধ ও পূর্ণ কুম্ভের পরের বছর পরমতীর্থ ঋষিধামে ১৯৫৪ সালে (১৩৬০ বাংলা শুভ মাঘী পূর্ণিমা) অনাড়ম্বরভাবে কুম্ভের বিশেষ বিধান ঘোষণা করা হয়েছিল। ১৯৫৭ সালে সর্বপ্রথম বাঁশখালীর ঋষিধামে ঋষিদের নামের সাথে মিল রেখে ঋষি কুম্ভমেলার সূচনা হয়। ভারতের কুম্ভমেলার মতোই বাংলাদেশেও এটি অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। গুরুজী স্বামী জগদানন্দ পুরী মহারাজের শিষ্যত্ব লাভের পর স্বামী অদ্বৈতানন্দ পুরী মহারাজ ভারতে কুম্ভমেলায় যাওয়ার জন্য আদেশ প্রার্থনা করেন। তখন মহারাজ প্রিয় শিষ্যকে এই নির্দেশ দিলেন, ‘বহিঃকুম্ভে কাজ কি ? বহিঃকুম্ভে না গিয়ে অন্তঃকুম্ভে ডুব দাও।’ তখন থেকে অদ্বৈতানন্দ পুরী মহারাজ বাঁশখালীতে কুম্ভমেলার প্রবর্তন করেন। ১৯৫৭ সাল থেকে ঋষিকুম্ভ মেলার আয়োজন শুরু হয়।

উল্লেখ্য, ৩১ জানুয়ারি থেকে ১০ দিনব্যাপী বাঁশখালীর কালিপুরের ঋষিধামে কুম্ভমেলা সম্পন্ন হয়েছে। এ উপলক্ষে আয়োজিত মহা শোভাযাত্রায় ভারত, রাশিয়া ও বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত সাধু-সন্ন্যাসীগণ অংশগ্রহণ করেন। মহা শোভাযাত্রার পৌরহিত্য করেন চট্টগ্রামের তুলসীধাম ও বাঁশখালীর ঋষিধামের মোহন্ত মহারাজ স্বামী সুদর্শনানন্দ পুরী। মেলার শুরু থেকেই প্রতিদিন হাজার হাজার পূণ্যার্থীর ঢল নামে।
বাঁশখালী উপজেলার কালিপুর ইউনিয়নের কোকদ-ী গ্রামের ঋষিধামের ঋষিকুম্ভ ও কুম্ভমেলার সরেজমিনে দেখা যায়, পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত ঋষিধাম মন্দিরে চলছে বিশ্বকল্যাণে ভুবনমঙ্গল। মন্দিরে ঢোকার মুখে পাশের মাঠে বসেছে মেলা। পাশেই চলছে দূর-দূরান্ত থেকে আগত ভক্তদের জন্য প্রসাদ আস্বাদনের বিশাল আয়োজন। এই প্রসাদকেন্দ্রেই একসাথে ১০ হাজার ভক্ত একত্রে প্রসাদ গ্রহণ করেছে। এজন্য প্রতিদিন বিভিন্ন স্থানে ৩’শ স্বেচ্ছাসেবক দায়িত্ব পালন করেন। কুম্ভমেলাকে কেন্দ্র করে পুরো বাঁশখালী জুড়ে ছিল উৎসবের আমেজ। যানজট উপেক্ষা করে দীর্ঘপথ পায়ে হেঁটে পুণ্যলাভের জন্য ভক্তরা গেছেন ঋষিধামে।
কুম্ভমেলার ইতিহাস: হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী ভারতের চারটি স্থানে কুম্ভমেলা অনুষ্ঠিত হয়। এগুলো হলো হরিদ্বার, প্রয়াগ, নাসিক ও উজ্জয়িনী। তিন বছর পর চক্রাকারে চারটি স্থানে কুম্ভমেলা হয়। সেই হিসেবে একেকটি স্থানে ১২ বছর পরপর এ মেলা ঘুরে আসে। বাংলাদেশে একমাত্র বাঁশখালী ঋষিধামেই তিন বছর পর পর এই মেলার আয়োজন করা হয়।

জানা যায়, দীক্ষাদান কর্মসূচিতে তিন হাজার ভক্ত এবার সদ্দীক্ষা গ্রহণ করেন। দীক্ষা প্রদান করেন স্বামী সুদর্শনানন্দ পুরী। তথ্যমতে, দূর-দূরান্ত থেকে ভারতের চারটি স্থানে গিয়ে তীর্থ করতে অক্ষম। তাদের কথা বিবেচনা করে বাঁশখালীর ঋষিধামে প্রতিষ্ঠাতা মোহন্ত স্বামী অদ্বৈতানন্দ পুরী মহারাজ ১৯৫৭ সালে বাঁশখালীর ঋষিধামে কুম্ভমেলার প্রবর্তন করেন। অদ্বৈতানন্দ পুরী মহারাজ বাঁশখালীর বাণীগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৭ সালে নগরীর তুলসীধামেই দেহত্যাগ করেন। ভারতের চারটি স্থানে যেকোন একটি মেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার এক বছর পরপর বাংলা মাঘ মাসের ত্রয়োদশী তিথিতে ঋষিধামের কুম্ভমেলা বসে। প্রতিবারই ভারতসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শতাধিক সন্ন্যাসী আসেন। তাদের উপস্থিতিতে এটি মিলনমেলায় পরিণত হয়। মেলা উপলক্ষে দূর-দূরান্ত থেকে অর্ধশতেরও বেশি সন্ন্যাসী উপস্থিত থাকেন।
ঋষিধামে আগত সন্ন্যাসীরা জানান, কুম্ভ মানে অমৃতের কলস। অমৃত লাভের আশায় একবার দেবতাদের সঙ্গে অসুরকূলের সমুদ্রমন্থন হয়েছিল। সমুদ্রমন্থনের কারণে উঠে এলো বহু মূল্যবান সামগ্রী। উঠল একটি অমৃতের ভা-ার। অসুরদের এই অমৃত কুম্ভ না দেয়ার জন্য দেবরাজ ইন্দ্র পুত্র জয়ন্ত একসময় সেটি নিয়ে গেলেন। নিয়ে যাওয়ার সময় অমৃত ভা-ার রাখা হয়েছিল ৪টি স্থানে। হরিদ্বার, প্রয়াত, ত্রিম্বকেশ^র-নাসিক ও উজ্জয়িনী। এই চারটি স্থানে কলস থেকে কয়েক ফোঁটা অমৃত রস পড়েছিল বলে ধারণা। তাই এই চারটি স্থানে অমৃত সুধারস আস্বাদনের জন্য বসে কুম্ভমেলা। এগুলো তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট