চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ফাঁদ

নুর আঙ্গেজ বেগম

৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১:২১ পূর্বাহ্ণ

নারী জীবনটাই যেন কাঁটা ভরা রাস্তা। চলতে গেলেই হোঁচট খেতে হয়। এটা অফিস পাড়া থেকে শুরু করে নারীর প্রতিটি কর্মস্থলেই যেন একটা ফাঁদ পাতা থাকে। সুযোগ বুঝে ফনা তুলে পুরুষ। ভালোবাসার অভিনয়ে কেবল কিশোরী যুবতীকে নয়, গৃহবধুও বাদ থাকে না এই জালে আটকা পড়তে। আজ আমি তেমনই একটি লেখা লিখছি।

ল্যান্ড ফোনে আমার বান্ধবী মিতুর ফোন এল (ছদ্মনাম)। এখনই চলে আয়। আমি ঘুমের বড়ি খেয়েছি। তড়িঘড়ি করে সকাল দশটায় তার বাসায় হাজির হলাম। হাসপাতালে ইমার্জেন্সিতে নিয়ে ওয়াশ করে বিপদমুক্ত মিতু। হাসপাতালে যাওয়ার আগে আমাকে বলেছিল। আমি যার জন্যে এই ঘুমের বড়ি খেয়েছি সে আসবে। না কোথাও সেই লোকটির দেখা পাইনি। দুপুর দুটোর দিকে ঘরে নিয়ে আসি মিতুকে। তার পরিবার জানে দুই ছেলে ঠিকভাবে পড়াশুনা করে না, কথা শুনে না। তাই তার মা ঘুমের বড়ি খেয়েছে। তার স্বামীর কাছেও হাজারো প্রশ্নের সম্মুখীন। এবার আসি আসল ঘটনায়। ল্যান্ড ফোনে রং নাম্বারে সেই লোকটির সাথে পরিচয়। এরপরই সময়ে অসময়ে ফোন। আবেগ, ভালোবাসার কথা বলে তার ফাঁদে আটকে ফেলা। আর এর পরিণামে অনেকটা খালি বাসায় সম্পর্কে লিপ্ত হওয়া। এটা সেটা গিফট দেওয়া সবই ছিল। আমার শুধু জানা ছিল লোকটাকে মিতুর ভালো লাগে। তারা বন্ধু হয়ে আছে। থাকবেও। আমি কখনো এইসব ভালো চোখে দেখিনি। কেন যেন আমার লোকটিকে ভালোই লাগতো না। যদিও আমরা তিনজন কফিশপে কফি খেয়েছি। আমি তাকে বারবার বলেছি। লোকটিকে আমার ভালো লাগে না। সাবধান কিন্তু। না মিতু সাবধান হয়নি। তাদের শারীরিক সম্পর্কটা আমার কাছে গোপন করে। আর সেই লোকটি তাদের চরম মুহূর্তগুলো ছবি বন্দী করে মিতুর অজান্তে। একদিন ঘুমের বড়ি দিয়ে বলে “তোমার দুই ছেলেকে খাওয়াবে। আর তারা ঘুমিয়ে গেলে তুমি ঘর ছেড়ে আমার কাছে আসবে।” ছেলেদের পরিবর্তে নিজেই খায় ঘুমের বড়ি। আর আমাকে ফোন। স্বামীর সন্দেহ থেকেই যায়। তারও অনেক দিন পর মিতুর ড্রাইভার তার স্বামীকে সব বলে দেয়। পরিনামে প্রচ- মার এবং স্থান বদল হয়ে অন্য জায়গায়।
অনেক দিন পর সেই মিতুর ফোন পেলাম। কাহিনী ছিল আরো অনেক কিছু। ঘর বন্দী সেই মিতু জানায়, ‘পৃথিবীটাই আমার কাছে অন্ধকারে জগৎ ছিল এক সময়।’ এতোকিছুর পরও লোকটি তার পিছু ছাড়েনি। সব সময় হুমকী থাকতো। “তোমার খারাপ ভিডিওগুলো আমার কাছেই আছে।”আবার ফাঁদে আটকানোর চেষ্টা করে। স্ত্রীকে সব সময় ভীতু আর আনমনা দেখে তার স্বামী আবার তাকে প্রশ্নে জর্জরিত করে। ভিডিওর কথাও অজানা থাকে না। র‌্যাব এর সাহায্যে মাটির নিচ থেকে উদ্ধার হয় সেই ভিডিও। অনেক অনেক দিন পর মিতুর ফোন। এখন আমরা ভালো আছি। তার দুই ছেলে দেশের বাইরে। বয়স্ক দুই নর-নারী বিছানায় শুয়ে তাদের অতীত স্মরণ করে।

যে কোন সময় যে কোন কাওকে ভালো লাগতেই পারে। এটা মনের ব্যাপার। কিন্তু নিজের মনের উপর কন্ট্রোল না থাকলে বিপদ আসবেই। কেন এই পরকীয়া? স্বামীসঙ্গের অভাব নাকি স্বামীর ভালোবাসার অভাব! নাকি নিজের মন আবার নতুনের স্বাদ নিতে চায়। চায় অন্য পুরুষের স্পর্শ নিতে।

তথ্য প্রযুক্তির যুগে এখন প্রেম হোক কিম্বা পরকীয়া একেবারেই সস্তা। দুই একদিনের কথাতেই মনের জগৎটা পাল্টে যায়। যায় বিভোর হয়ে অন্য আর একজনের হৃদয়ে আসন গাঁথে। কিন্তু স্থায়ী হওয়া তো দূরের কথা, কিছুদিনের ভালোলাগা মানুষটাই আবার হয়ে যায় আর একজনের কাছের মানুষ। মনের দাম এদের কাছে যেন ঠুনকো কাঁচ। শুধু এই নয়। পরকীয়ায় নিজ সন্তানও কোন এক সময় বোঝা হয়। গৃহহারা হয় কতো গৃহবধু। পরিণামে একুল ও কুল দুকুলই হারায়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট