চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সাফল্য অর্জনকারী জয়িতা 

শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও স্বাবলম্বী সাহেদা আকতার

মরিয়ম জাহান মুন্নী

২৫ ডিসেম্বর, ২০২০ | ৫:১৬ অপরাহ্ণ

৭ বছর বয়সে মারাত্মক দুর্ঘটনায় হারিয়ে ফেলেন ডান পা। পঙ্গু শরীর নিয়ে চালিয়ে নিচ্ছিলেন পড়াশোনা। ১০ম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাবার মৃত্যুতে আর্থিক সমস্যায় পড়ে যান। বাবার অবর্তমানে পরিবারের সদস্যরা তাকে অবহেলা করতে শুরু করে। ছয় সদস্যের পরিবারে দেখা দেয় অভাব। পড়াশোনা অসমাপ্ত রেখে শুরু করেন সেলাইয়ের কাজ। একের পর এক বাধার পাহাড় ডিঙিয়ে তার সামনে ধরা দিয়েছে সাফল্য। এই স্বাবলম্বী নারীর নাম সাহেদা আকতার।

অদম্য এই নারী ২০২০ সালের মা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম বিভাগের সেরা পাঁচ জয়িতার একজন হয়েছেন। অর্থনৈকিতভাবে সাফল্য অর্জনকারী জয়িতা ক্যাটাগরিতে তিনি চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার মধ্যে সেরাদের সেরা হয়েছেন।

তার এ সাফল্যের পেছনে গল্প জানতে চাইলে সাহেদা আকতার বলেন, এমনও অনেক দিন গেছে আমি না খেয়ে দিন কাটিয়েছি। এমনিতে সংসারে অভাব, পা হারিয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করে বোঝা হয়ে ছিলাম পরিবারে। আজ আমি একাই আমার পরিবারের ভরণপোষণ করি। এখন সংসারে অভাবও নেই। আমি অভাবকে ভয় পাই। কারণ অভাব যে কত কষ্ট তা আমি জানি। কান্না জড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন সাহেদা আকতার।

তিনি আরো বলেন, পা হারিয়েও বাবা থাকা অবস্থায় বাবার সহযোগিতায় ও নিজ ইচ্ছায় জাফরাবাদ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করি। কিন্তু সংসারে অভাব-অনটনের কারণে এসএসসি পরীক্ষা দেয়া হলো না। কারণ বাবার পক্ষে পাঁচ ভাই-বোন ও বাবা-মাসহ সাত সদস্যের পরিবারের ভরণপোষণ চালানো সম্ভব হচ্ছে না। ২০১৫ সালে বাবা ক্যান্সারে মারা যায়। পরিবারে আরো অভাব দেখা দেয়। এবার আমার উপর সংসারের অবহেলা আরো বেড়ে যায়। কারণ ভাইরা বিয়ে করবে আমি তাদের বোঝা। আমাকে তাদের সংসারে রাখতে চায় না।

এমন অবস্থায় আমি খুব অসহায় অবস্থায় পড়ে যাই। সিদ্ধান্ত নিলাম সংসারে বোঝা হয়ে থাকবো না। আমাকে কিছু করতে হবে। কিন্তু কি করবো বুঝতে পারছি না। তখনই আমাদের এলাকার সমাজ উন্নয়ন সংস্থা নামের একটি এনজিও থেকে সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। সেই এনজিও আমাকে একটা সেলাই মেশিন দেয়। এই সেলাই মেশিনই আমার জীবনে পরিবর্তন এনে দেয়। প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ টা পোশাক ডেলিভারি দিচ্ছি। এর মধ্যে আমার কাছে কিছু টাকা জমে।

আমিও ব্যবসা বড় করতে চাচ্ছিলাম। মায়ের সাথে আলোচনা করে তিন বছর আগে চট্টগ্রাম শহরের চলে আসি। এখানে একটা বাসা ভাড়া নিই। ঘরের মধ্যেই সেলাই শুরু করি। এখানেও আমার কাস্টমার বাড়তে থাকে। এখন আমি আরো দুইটা সেলাই মেশিন কিনেছি। ১০ জন মেয়েকে কাজ শেখাচ্ছি ও তিনজন মেয়ে আমার এখানে চাকরি করছে।

 

পূর্বকোণ/পি-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট