চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে…

ছন্দা দাস

২২ মে, ২০১৯ | ১:৩৬ পূর্বাহ্ণ

(১) মানুষের সুখের সংজ্ঞা কি তা আজও আমার জানা হলো না। কেউ ভাবে অর্থ, কেউ তার পরিবারের সঙ্গ, কেউ বা দু’বেলা পেট ভরে খেতে পাওয়া আবার কেউ কেউ তার নিজস্ব ভাবনার জগতে একছত্র বিচরণ করাকেই সুখ মনে করে। এ ছাড়াও যে মানুষের আরও কত রকমের চাওয়া বা ইচ্ছে যে রয়েছে তার নির্দিষ্ট কোন সীমা নেই। আমি একজন নারীর কথা জানি যার সবকিছু আছে কিন্তু তবু তাকে কখনো হাসতে দেখিনি। সব সময় মুখে যেন একটা বিষাদের ছায়া। বেশ সুন্দরী। গাড়ি, বাড়ি, স্বামী সবদিকেই পরিপূর্ণ সংসার। দু’ সন্তানের জননী। ছেলে দুটোও দেখতে বেশ, লেখাপড়ায়ও চৌকষ। তবে যে জিনিসটা একটু চোখে লাগে তা হচ্ছে স্বামী তার একটু যেন বয়সে বড়। কিন্তু আমাদের সমাজ এমন তো প্রায়ই দেখি। তার সঙ্গে একদিন এক অনুষ্ঠান বাড়িতে কথা হচ্ছিল। সেই একটু আগ্রহ নিয়ে আমার পাশে এসে বসেছিল খাওয়ার পরে। বাড়ি ফেরার তেমন তাড়া ছিল না বলে আমিক তার সাথে গল্পে মেতে গেলাম। চিরদিনই আমার অজানা কোন মানের মনের বিচিত্রতার সাথে পরিচিত হতে ভালো লাগে। দু’জন নারী যখন কথা বলে তখন তাদের কি আলাপের বিষয়বস্তু ঠিক থাকে। রান্নাঘর থেকে দুনিয়ার কত বিষয়ের উপর যে চলে কথাবার্তা। এরই মধ্যেই আবার ঢুকে যায় মনের কোন অন্ধকারে যদি না সমমনা মানুষের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়। যেহেতু আমি নারীদের নিয়ে লিখি। এবং সেটা দেখি তার জানা আছে। তখন আমি নিজেকে সার্থক মনে করি। মহিলা কেমন যেন দিধান্বিত চিত্তে আমাকে সেদিন প্রশ্ন রাখলেন আচ্ছা আন্টি আপনি নারী ধর্ষণ নিয়ে অনেক লিখেছেন আমি সেসব লেখা পড়ি। খুব ভালো লাগে। আমি বলি চেষ্টা করি। আমি ভাবছিলাম সেসব লেখা কেউ পড়ে না। আজ শুনে খুব আশান্বিত হলাম। মেয়েরা সচেতন হওয়া দরকার। এবার সে বললো নারী ধর্ষণ তো অনেক রকম বলুন? আমি বললাম নিশ্চয়। ধর্ষণ মানে তো শুধু শারীরিক নয়। মানসিক ধর্ষণও কম হচ্ছে না। এর একটা ডাটা নিলে বুঝতে পারবে। মহিলা এবার তার আঁচল আঙুলে জড়াতে জড়াতে বললো অতৃপ্ত যৌন আকাক্সক্ষাও এক রকম ধর্ষণ নয় কি? আমি ভীষণ অবাক হয়ে মহিলার দিকে তাকিয়ে আছি। না? আমি তার প্রশ্নকে অস্বীকার করতে পারিনি। সেই মুহুর্তে আমার তসলিমা নাসরিনের কথা বিশেষভাবে মনে পড়ছিল। এই বিষয়ের উপর তার অনেক লেখার জন্য তাঁকে সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। শুধু যে পুরুষ তা নয় সেদিনও আজও মহিলারা তাঁকে আসামীর কাঠগড়ায় বসাতে ভালোবাসে। কিন্তু দিন বদলাচ্ছে। মহিলারা এখন আগের চাইতে অনেক সোচ্চার। এই যে এই মহিলা আজ যে একটা নিজের ব্যক্তিগত বিষয়ের কথা আমার সাথে আলোচনা করছে এবং এটাও যে একটা ধর্ষণের মধ্যে পড়ে তা বুঝতে পেরেছে তার জন্য আমি আনন্দিত। এই জন্যই কি সব সময় তার মুখে সবসময় বিষাদের ছায়া লেগে থাকে? সব থেকেও তার যেন কিছু নেই। টাকা, পয়সা, গাড়ি, বাড়ি কিছুই তাকে শান্তি দিতে পারছে না। সে মহিলা পারছে না ছেড়ে যেতে তার স্বামী, সন্তান, সংসারকে ত্যাগ করতে, না পারছে এ নিয়ে ভালো থাকতে। অনেকেই বলবেন এ আবার কি? এমন তো অনেকেই আছে। অনেকেই পারা আরা সবাই পারা এক কথা হতে পারে না। সবাই পারছে বলে ঐ মহিলাও পারবে তা হতে পারে না আমাদের জীবনের চাহিদার অন্যান্য বিষয়গুলোর মতো যৌন চাহিদাও একটি এবং সবার তা সমান থাকে না। কারো বেশি কারো কম। দূর্ভাগ্যবশত আমার পরিচিত এই মহিলার আকাক্সক্ষা বেশি। স্বামী পারছে না বা অক্ষম মহিলার খুব কম বয়সে বিয়ে হয়ে যায়। শারীরিক সুখ বোঝার আগেই তার বিয়ে হয়ে যায় এবং সন্তানও হয়ে যায়। সন্তানেরা একটু বড় হলেই সে বুঝতে পারে তার শারীরিক চাওয়া। স্বামী কিন্তু তখন তার নির্জীব। এমতাবস্থায় মহিলা দিনের পর দিন এক অসুখী জীবনের সাথে দিন কাটাচ্ছে। অন্য কিছু দিয়েই তার এই চাওয়াকে পূর্ণতা দিতে পারছে না। আমি তখন ভাবনার অথৈ সাগরে ভাবছি। এই জন্য কি তাহলে অনৈতিক কাজকর্ম এখন বৃদ্ধি পেয়েছে? কিন্তু নাহ্। এইসব আগেও ছিল কিন্তু তা অপ্রকাশিতই থাকতো কিন্তু এখন মানুষের এই বোধ আগের মত নেই তা অপ্রকাশিতই থাকতো কিন্তু এখন মানুষের এই বোধ আগের মত নেই লজ্জাও নেই। যদি পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে আমরা কিন্তু তখন তার এই কাজের জন্য তিরস্কার মূখর হই। অথচ মহিলা তাকে ধর্ষণ বলে আখ্যায়িত করছে। আমিও এক অদ্ভুত বিষয়ের উপর ভাবতে ভাবতে বিদায় নিয়েছিলাম অনুষ্ঠান থেকে কিন্তু মহিলার উপর আমার অদ্ভুত মমত্ববোধ কাজ করছিল।
(২) বহুল আলোচিত একটা বিষয়ের উপর আজ আলোকপাত করবো। কি সেটা? হ্যাঁ “র্ধষণ”। আজকাল আমাদের প্রাত্যাহিক জীবনে ধর্ষণের হার এতো বৃদ্ধি পেয়েছে যে মানুষ যেন আর আগের মতো এ নিয়ে অবাক হয় না। আলোচনাও করে না? এ আর কি বলবো রোজই তো হয়ে যাচ্ছে বাড়িতে, মাঠে, হোটেলে, বাসে, স্কুলে, কলেজে অফিসে। ভাবলে আঁতকে উঠতে হয় নয়টি সংবাদপত্রে পেলাম গত আটদিনে ৪২ টি ধর্ষণ হয়েছে আমাদের দেশে এ হলো সংবাদপত্রের মাধ্যমে জানা। কিন্তু অপ্রকাশিত আরও কত যে হয়েছে তা বলাই বাহুল্য। প্রতিকার কি? আইনের মাধ্যমে? না কি জনগণ নিজেই তুলে নেবে আইন? আইনের মাধ্যমে তো আমরা এর সুফল পাচ্ছি না। কারণ আসামী আইন প্রণেতা বা মন্ত্রীদের আত্মীয়তার সুবাদে পার পেয়ে যাচ্ছে। আর জনগণও যেন নিষ্ক্রিয়। এমতাবস্থায় আমাদের করণীয় কি? সামাজিক আন্দোলন ছাড়া এই মহামারী রোগ কিছুতেই প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। হোক না সেটা আজই এখুনিই দু’জন কিংবা তিনজন মহিলাকে নিয়ে। দেখবেন এই দু’তিনজনই মহিলার সাথে সোচ্চার হয়ে এক সময় তা বিলাস জনসমুদ্রে পরিণত হবে।
এই যে সে মেয়েটি বাসে ড্রাইভার ও হেল্পারেরা ধর্ষিতা হলো বারজন মহিলা তার প্রতিবাদ করেছে? একদিন একটু আলোচনা হলো তারপর আবার ভাসমান। এভাবে কখনই তার অবসান হবে না। মেয়েদের সমস্যা নারীকেই তার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। তাই কাল নয় আজই আসুন সব মহিলারা আজ প্রতিবাদ মুখর হই। নইলে আপনার কিশোরী মেয়েটিরও একই অবস্থা হতে পারে আমাদের উত্তরসুধীদের রক্ষার দায়িত্ব আমাদের। আমাদেরই উচিত প্রদীপের শিখাটি জ¦ালিয়ে দেওয়া। তার আলো জ¦ালিয়ে রাখার কৌশল তাদের জানিয়ে দিন, নারীদের বাসযোগ্য স্থান নারীকেই সৃষ্টি করে যেতে হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট