চট্টগ্রাম সোমবার, ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

ঢাবির নতুন ভিসি ড. নিয়াজকে নিয়ে সচিব বন্ধুর স্ট্যাটাস

২৮ আগস্ট, ২০২৪ | ৩:৪৫ অপরাহ্ণ

আমার নিয়াজ ভাই

সিলেট এমসি কলেজ থেকে আম্মা চট্টগ্রাম কলেজে বদলি হয়ে এলেন সত্তরের দশকের শেষ দিকে। চট্টগ্রাম কলেজের ঠিক উল্টো পাশেই রাস্তার ওপারে চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হলাম। কলেজিয়েট ও মুসলিম হাই স্কুলের সুনাম তখন চট্টগ্রাম শহরে সবচেয়ে বেশি। ওদিকে শত বছরের পুরনো স্কুল হলেও মাত্রই জুনিয়র স্কুল থেকে হাই স্কুল হওয়া আমাদের স্কুল ধারে ভারে খানিক পিছিয়ে ।

 

এই চ্যালেঞ্জের মাঝেই এসএসসির প্রথম ব্যাচ ভালো রেজাল্ট করলো। এ ব্যাচের সবচেয়ে খ্যাতিমান ছাত্র সম্ভবত শহীদ মাহমুদ জঙ্গী ভাই, যিনি দেশের সেরা গীতিকারদের একজন হিসেবে নাম কুড়িয়েছেন। স্যার ম্যাডামরা গল্প করতেন, আবদুল্লাহ আল মুতী শরফুদ্দীন স্যার এই স্কুলের ছাত্র। সেরকম সুনাম এ স্কুলের জন্য পরে আর কে বয়ে আনবে?

 

তখনও চট্টগ্রাম বোর্ড হয়নি। কুমিল্লা বোর্ড থেকে আর্টসে চল্লিশ হাজার ছেলে পরীক্ষা দিলে চল্লিশ জন ফার্স্ট ডিভিশন পাওয়াও ছিল তখন মুশকিলের ব্যাপার। এমন সময় এসএসসিতে স্কুলের সেকেন্ড ব্যাচ কাঁপিয়ে দিল। আর্টসে কুমিল্লা বোর্ডের মেধা তালিকায় ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ না, কুমিল্লা জেলা স্কুল না, কলেজিয়েট তো নয়ই, মেধা তালিকায় প্রথম হয়ে বসে আছে আমাদের স্কুল। সেই স্কুলের বোর্ড কাঁপানো ছাত্রের নাম নিয়াজ আহমেদ খান।

 

গর্বে আমাদের বুকের ছাতির মাপ বেড়ে গেলো অনেক। কিন্ত ভয়ানক কড়া মোস্তফা নূরুল করিম স্যার আমাকে ডেকে বললেন- থার্ড ব্যাচে তোকে নিয়ে আশা। নিয়াজকে ফলো কর। নাহলে তোরে শেষ করে দেবো!

 

বললেই হলো? আগরতলা আর চৌকিরতলা এক? আমি হলাম পরের ব্যাচে বোর্ডে ফিফথ। বন্ধুরা বললো- ভালো রেজাল্ট, স্যাররা মুখ ভার করে রইলেন। কি সর্বনাশ করলেন নিয়াজ ভাই আমার!

 

গেলাম চট্টগ্রাম কলেজে। নিয়াজ ভাই আমার এক ব্যাচ সিনিয়র। আম্মার ডিরেক্ট ছাত্র আমরা দুজন। এইচএসসিতে নিয়াজ ভাই বোর্ডে ফার্স্ট। আমার উপর আবার চাপ! পরের বছর আমি বোর্ডে ফোর্থ। নিয়াজ ভাইয়ের সাথে কি করে পারা যায়?

 

গেলাম ভার্সিটিতে। নিয়াজ ভাই পাবলিক এডে, পরের বছর আমি পলিটিক্যাল সায়েন্সে। নিয়াজ ভাই আমার বন্ধু লে. কর্ণেল (অবসরপ্রাপ্ত) ইরশাদকে নিয়ে বার করলেন পত্রিকা- ‘ইউনিভার্সিটি ম্যাগাজিন’। তাকে ফলো করে আমি বার করলাম- ‘এসো’। অনার্সে নিয়াজ ভাই ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট। পরের বছর আমার ডিপার্টমেন্টে আমি তিন নম্বরের জন্য ফার্স্ট ক্লাস হারিয়ে সেকেন্ড ক্লাস ফার্স্ট। মাস্টার্সে যথারীতি উনি ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট। পরের বছর আমিও তাই। ওই একটি বার জীবনে আমি তাঁকে ছুতে পেরেছিলাম। উনি ভার্সিটিতে জয়েন করলেন। আমি পরের বছর ভার্সিটিতে জয়েন করেও চলে এলাম সিভিল সার্ভিসে। মেধা চর্চার ইতি হলো আমার।

 

নিয়াজ ভাই ছুটেই চললেন-ওয়েলস থেকে পিএইচডি করলেন। অক্সফোর্ড থেকে পোস্ট ডক করলেন। অসাধারণ সব রিসার্চ করে দেশ বিদেশে খ্যাতিমান হলেন। ঢাকা ভার্সিটিতে এসে দলবাজিমুক্ত রংবিহীন শিক্ষক থেকে সততার সাথে কাজ করে দেশসেরা একাডেমিশিয়ানদের একজন হয়ে গেলেন। একাডেমিয়ার বাইরে সামরিক-অসামরিক আমলাদেরও পড়াতে লাগলেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। সৎ, ধর্মপ্রাণ, ডাউন টু আর্থ, সুপণ্ডিত এই মানুষটি বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করেও ভালো করলেন। প্রাইভেট একটি ইউনিভার্সিটির প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে প্রশাসনিক দক্ষতারও পরিচয় দিলেন। তার আছে মিডাস টাচ-কোথাও হাত দিলেই সোনা ফলে।

 

আমি সিভিল সার্ভিসে এসে সচিব হওয়ার পরও তার আফসোস-চিরটিকাল তার স্নেহভাজন আমি বখাটে রয়ে গেলাম। পড়ালেখায় তেমন এগোলাম না। তার অধীনে পিএইচডি করার সুযোগ দিলেন। ব্যস্ততার জন্য তাও করা হলো না আমার। তাতে কি আমার জন্য তার স্নেহের ভাণ্ডার কমে? সম্ভব না কখনোই।

 

শিক্ষক, প্রশাসক, গবেষক, লেখক, সৎ, ধর্মপ্রাণ, রং ও দলবাজিহীন নিয়াজ ভাই প্রাচ্যের অক্সফোর্ডের ভিসি হিসেবে এ যাবতকালের সেরা চয়েস। চোখ বন্ধ করে গ্যারান্টি দিচ্ছি- তাকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেন। ‘চা-সিঙ্গারা‘ ভার্সিটি বদলে যাবে- আমি মোর দ্যান শিওর।

 

তাকে কোনও অভিনন্দন না, সারাজীবনে তিনি যা যা করেছেন এই নিয়োগ তার সামান্য প্রাপ্তি মাত্র। এ নিয়োগে তার চেয়ে বরং আমাদের দেশের লাভ হলো বেশি।

 

নিয়াজ ভাইয়ের জন্য দোয়া আর ভালোবাসা। সারাজীবন আপনি আমাদের আইডল। আমাদের গর্বিত করেছেন। এই অভাগা দেশের ফেসবুক পণ্ডিতরাসহ সবাই যদি আপনাকে সত্যিই কাজ করতে দেয়, আপনি আমাদের আবার আরো অনেক গর্বিত করবেন ইনশাআল্লাহ।

 

আমি তখন আরো লেখাপড়া না করার দুঃখ সত্যিই ভুলে যাবো। মূর্খ আমার তাতেই পিএইচডি হয়ে যাবে ।

 

আমাদের আইডল প্রিয় নিয়াজ ভাই। নক্ষত্র হয়ে জ্বলতেই থাকুন বরাবরের মত।

 

সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামানের ফেসবুক থেকে নেওয়া

 

পূর্বকোণ/পিআর/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট