গণ-আন্দোলনের মুখে গত সোমবার (৫ আগস্ট) শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেন। তখন কার্যত সরকারহীন হয়ে পড়ে দেশ। একইসাথে বড় ধরনের বিপদে পড়েছে প্রিয় স্বদেশ। অর্থনীতি পঙ্গু, প্রচুর জাতীয় সম্পদ বিনষ্ট। সর্বোপরি চলছে ক্রান্তিকাল। দেশকে এই ক্রান্তিকাল থেকে দ্রুত উত্তরণের ত্রাণকর্তা হিসেবে গত বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) দায়িত্ব নিয়েছেন নোবেলবিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে তিনি কি দেশকে বিপদ থেকে উদ্ধার করতে পারবেন। তার উত্তর অবশ্যই হ্যাঁ, তিনি পারবেন। দৃঢ়তার সাথে বলার একমাত্র কারণ, দেশ-বিদেশে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাংগঠনিক দক্ষতা এবং উদ্ভাবনী ক্ষমতা সবার জানা।
বিশ্বে তাঁর মতো এতো বেশি সাংগঠনিক ক্ষমতা আর কারও নেই। বিশ্বে তাঁর চাওয়া-পাওয়ার আর কিছু নেই। তিনি সব কিছু পেয়ে গেছেন। তিনি এখন জাতিকে দিতে এসেছেন। তাড়াতাড়ি দ্রুত ক্ষতি কাটিয়ে তিনি অগ্রগতির দিকে দেশকে ধাবিত করবেন। আমাদের গণতন্ত্রের পথে ফিরিয়ে আনবেন এটাই সবার প্রত্যাশা।
তাঁর হাত ধরেই দেশে সবার সুখ আসবে মনে করছেন অনেকেই। কারণ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশ-বিদেশে সবার উপরে। এর আগে কখনো কোন পদ তিনি গ্রহণ করেননি। এখন যখন গ্রহণ করেছেন দেশের জন্য সম্ভব সবকিছু করার জন্য তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন। অতীত অভিজ্ঞতায় বলা যায় তিনি সফল হবেন। বাকিটা নির্ভর করবে আমরা কতখানি তাঁকে সহযোগিতা করি তার উপর। সবার ভাগ্য কিন্তু এক। সবাইকে তাকে সহযোগিতা করতে হবে।
প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জীবনে ব্যর্থতার ইতিহাস নেই। চট্টগ্রাম বিশ্বদ্যিালয়ের অর্থনীতি বিভাগের দায়িত্ব নিয়ে তিনি সফল হন। বিভাগটিকে সুসংগঠিত করে নেতৃত্বগুণ শুরু করেন সেখান থেকেই। পরবর্তীতে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের আর তেমন কষ্ট করতে হয়নি। সমস্যা বুঝার অসাধারণ বুদ্ধি আছে তাঁর।
ছায়া সুনিবিড় মায়াভরা গ্রামে সবুজে আচ্ছাদিত নজু মিয়া সওদাগর বাড়ি। নতুন দেশের, নতুন সরকার প্রধানের পৈত্রিক ভিটা এটি। যে বাড়ি ঘিরে এখন উচ্ছ্বাস আর আনন্দের ফোয়ারা বইছে। ছোটবেলার একটা অংশ কেটেছে এই গ্রামেই। এরপর চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হয়ে চলে যান শহরে। শিক্ষাজীবন শেষে যোগ দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৭৪ সালে দারিদ্র্য বিমোচনে প্রতিষ্ঠা করেন তেভাগা খামার। ১৯৮৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সামাজিক সমতা তৈরি ও দারিদ্র্য বিমোচনের নতুন এক অর্থনৈতিক ধারণাকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরেন। যা তাঁকে বরণীয় করেছে বিশ্বজুড়ে।
প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে নোবেল জয়ের সুখস্মৃতি এখনও অমলিন। প্রায় দেড়যুগ পর আবারও আনন্দে ভাসছে চট্টগ্রামের মানুষ। কারণ চট্টগ্রামের সন্তান অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবার হয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতা এবং উদ্ভাবনী ক্ষমতার মাধ্যমে দেশকে সংকট থেকে উদ্ধার করতে পারবে বলে মন্তব্য করেছেন তাঁর সহপাঠী অর্থনীতিবিদরা। সমস্যা বুঝার অসাধারণ বুদ্ধি দিয়ে তিনি দেশকে অগ্রগতির দিকে ধাবিত করতে সক্ষমও বললেন তারা।
নানা ঘাত-প্রতিঘাতে অবিচল পাহাড়ের মতো দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটির কাঁধেই এখন বাংলাদেশের দায়িত্ব। তাঁর চোখে এবার বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছেন সবাই। তাঁকে ঘিরে প্রত্যাশার কমতি নেই সহপাঠীদের মাঝেও। দেশসেরা অর্থনীতিবিদ প্রফেসর মইনুল ইসলামের সাথে ৬৬ বছরের সম্পর্ক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের। সারবিশ্বে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতো সাংগঠনিক ক্ষমতা আর কারও নেই বললেন তিনি। প্রফেসর ড. ইউনূসের এখন কিছু পাওয়ার নেই, তিনি সবকিছু পেয়ে গেছেন এখন তিনি দিতে এসেছেন এই মন্তব্য প্রফেসর মইনুল ইসলামের।
অপর অর্থনীতিবিদ প্রফেসর সেকান্দর খান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পরেই ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অথনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান। তিনি মনে করেন দেশ-বিদেশে সবার গ্রহণযোগ্য প্রফেসর ইউনূস দেশ গঠনে সফল হবেন। তিনি এও বললেন, তাঁর জীবনে ব্যর্থতার ইতিহাস নেই।
নয় ভাই-বোনের মধ্যে ড. মুহাম্মদ ইউনূস দ্বিতীয়। পরিবারের অন্যান্যরাও এই জ্ঞান তাপসের দেশপ্রেম আর প্রজ্ঞায় মুগ্ধ। নতুন বাংলাদেশ তাঁর অবিচল নেতৃত্বে সামনে এগিয়ে যাবে বিশ্বাস করেন তাঁরা। আমাদেরও প্রত্যাশা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো পুর্নগঠনের মাধ্যমে দেশকে প্রকৃত গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে নেওয়ার কাজে নতুন সরকার সফল হবে। দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসন ও তিন দফা ভোটাধিকার বঞ্চিত হবার ক্ষোভ থেকেই ছাত্র-জনতা গণ-অভ্যুত্থান ঘটিয়ে শেখ হাসিনা সরকারকে বিদায় করেছে। ফলে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনাই হচ্ছে মূল লক্ষ্য।
আমরা জানি, এতাদিন স্বৈরতান্ত্রিক ধারায় চলে আসছিল দেশ। তার বদলে গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে আনার কাজটি অত্যন্ত কঠিন। এরপরও বিশ্বাস করতে চাই, নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত নতুন অন্তর্বর্তী সরকার তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে সক্ষম হবেন।
দারিদ্র্য বিমোচনে বৈশ্বিক মানুষ ড. ইউনূসকে ঘিরে বাংলাদেশের সমৃদ্ধি আসবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। দেশের নানা খাতে ভর করা অশুভ শক্তিকে বিদায় করে অর্থনৈতিক সংস্কারে তিনি সফল হবেন বলেই বিশ্বাস তাঁদের।
পূর্বকোণ/জেইউ/পারভেজ