চট্টগ্রাম রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

বাংলাকে বোধহয় একটু বেশিই ভালোবাসি!

ফারজানা তাবাসসুম

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ | ১০:৩৭ অপরাহ্ণ

ছোটবেলায় আমাকে ইংলিশ মিডিয়াম ছাড়িয়ে বাংলা মিডিয়ামে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত ভালো না খারাপ ছিল সেটা তখন বোঝার বয়স আমার ছিল না। আমার চোখে শুধু পড়েছিল অনেক সুন্দর ঝকঝকে, সুন্দর, রঙ্গিন করে সাজানো ক্লাসরুম থেকে কেবল চেয়ার, টেবিল আর বেঞ্চ-ব্ল্যাকবোর্ডের ক্লাসে চলে আসা।

 

ছোটবেলার দুঃখ দীর্ঘস্থায়ী হয় না। আমারও হয়নি। আমি বন্ধু পাতিয়ে দিব্যি তরতরিয়ে বড় হতে লাগলাম। প্রতি জন্মদিনে বাংলা, ইংরেজি দুধরনের বইই উপহার পাই। গোগ্রাসে গিলি দুটোই।

 

আমার ভোকাবুলারি আর শব্দভাণ্ডার বাড়ে পাল্লা দিয়ে। জনকণ্ঠ নামের যে পত্রিকা আসতো বাসায়, তার ছোটদের পাতায় গল্প লিখে আমার লেখালেখির হাতেখড়ি হল। আমি মনের আনন্দে সুকুমার রায়, বিভূতিভূষণ, সত্যজিৎ, জাফর ইকবাল, হুমায়ূন আহমেদ পড়তে লাগলাম।

 

JK Rowling, Roald Dahl ও আছেন একদম পাশের তাকেই। Lord of the rings, The Perks of Being a Wallflower, To Kill a Mockingbird, The Fault in Our Stars সব সমানতালে পড়ে যাচ্ছি। তখনো পছন্দের Genre ঠিক হয়নি। পড়তে ভালো লাগে, পড়ি।

 

রবীন্দ্র সংগীত যেমন শুনি, বন জোভিও তেমনি। বাংলা মুভি যেমন দেখি, ইংরেজিও। এখানে অবশ্য আমার মামাদের একটা ধন্যবাদ পাওনা আছে। ওদের কারণে দারুণ সব গান, বই, মুভি হাতের নাগালেই ছিল আমার।

 

ক্লাসে ইংরেজিতে হায়েস্ট মার্ক পাই, বাংলায়ও আশির ওপরে। ভালো রেজাল্ট নিয়েই স্কুল, কলেজ শেষ করি আমি। দুটো ভাষাতেই বলতে, লিখতে, শুনতে সমান স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।

 

তবে ততদিনে টের পেলাম বাংলাকে বোধহয় একটু বেশিই ভালোবাসি আমি। গল্প লিখি বাংলায়। ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট আছে একটা। সেখানে স্ট্যাটাস দিই বাংলায়। লোকে প্রশংসা করে আমার লেখার।

 

আস্তে আস্তে মাধ্যমের বিভেদ ঘুচে যায় ইউনিভার্সিটিতে এসে। সবার জন্যেই একটা মাধ্যম এখানে। ইংরেজি। প্রফেসর ক্লাসে বাংলায় লেকচার দিলেও বই, স্লাইড, পরীক্ষায় ব্যবহার করার ভাষা ইংরেজি। কোথাও আটকাইনি। দেশ ছাড়ার জন্যে IELTS দিয়ে সেখানেও ভালো স্কোর করেছি।

 

নিজের অভিজ্ঞতায় বুঝেছি যে ইংরেজি চাইলেই শেখা যায়। কিন্তু একদম ছোটবেলায় বাংলাটা ভালো করে না শিখলে, ভালোবাসতে না জানলে সেটা বড়বেলায় সেভাবে হয় বলে আমার অন্তত মনে হয় না। আমারই বন্ধু, কাজিনদের তো দেখেছি। বলতে পারলেও অনেকেই ভালো পড়তে বা লিখতে পারে না। কিছু ব্যতিক্রম আছে হয়তো কিন্তু সেটা তো আর উদাহরণ হতে পারে না।

 

সেদিন কি একটা গান শুনতে শুনতে পার্টনারকে বলছিলাম, এতদিন পরে এসে আমি আমার বাবা-মায়ের সিদ্ধান্তটা বুঝতে আর সেটাকে মূল্যায়ন করতে পারছি। ওই বয়সে আমাকে বাংলা ভালোবাসতে না শেখালে আজ এভাবে এ শব্দগুলোর অর্থ কোনভাবেই এমন করে ফিল করতে পারতাম না। এখন যেভাবে পারি, এমন করে মনের কথা বাংলায় লিখতেও পারতাম না।

 

আমি কোনদিন মা হলে আমার সন্তানকে বাংলাটা যত্ন করে শেখাবো। এ দেশে থাকলে ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ এমনই শিখে যাবে। আমি কেবল বাংলাটা ভুলতে দেবো না। ওর মায়ের ভাষা তো ওটাই।

 

সবাইকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের শুভেচ্ছা।

 

লেখিকা: কানাডা প্রবাসী লেখক এবং শিক্ষক।

 

পূর্বকোণ/জেইউ/পারভেজ

শেয়ার করুন