এক যে ছিলো সোনার কন্যা, মেঘ বরণ কেশ, ভাটি অঞ্চলে ছিলো সেই কন্যার দেশ….। হুমায়ুন আহমেদের লেখা এই গানটি শুনে নাই, বাংলাদেশের খুব কম মানুষই আছে।
তেমনি চট্টগ্রামের ভাটি অঞ্চলের আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকার নাম শুনে নাই চট্টগ্রামের তথা দেশের অনেক কম মানুষই আছে। এটি আভিজাত্য বা পশ এরিয়া হিসাবে প্রতিষ্ঠা পায় সত্তরের দশকের শুরু থেকে। আশির দশক পুরোটাই ছিলো অনেকের বসবাসের স্বপ্নের জায়গা।
মোহ কাটতে শুরু করে যখন সাগরের পানির উচ্চতা বেড়ে লোকালয়ে ময়লা পানি প্রবেশ শুরু হয়। আগ্রাবাদ ছেড়ে চলে যেতে থাকে নতুন পশ এরিয়ায় অর্থাৎ আবাসিক এলাকায়।
চট্টগ্রাম শহরের চারদিকের জীবনযাত্রা এখন জোয়ার-ভাটার উপর নির্ভরশীল। জোয়ারের পানি বহদ্দারহাট থেকে মুরাদপুর, ষোলশহর থেকে বায়েজিদ, পাহাড়তলী থেকে ফইল্লাতলী, দেওয়ানহাট থেকে পতেঙ্গা অর্থাৎ চারিদিকে জোয়ারের পানিতে টইটম্বুর। বারতিপাওনা শহরের মাঝখানে খুলশী থেকে বাটালি হিল, এ কে খান থেকে সারসেন রোড উঁচু থাকায় পানির থাবা থেকে নিরাপদ অবস্থানে। এই উঁচু অঞ্চলের বৃষ্টির পানি পাহাড় বেয়ে নেমে যায় শহরের চারিদিকের নিচু এলাকাগুলিতে অর্থাৎ ভাটির দিকে। জোয়ারের পানি যোগ পাহাড়ের পানি সমান সমান ভয়াবহ দুর্যোগ।
দুর্যোগে বাড়িঘরের বেহাল দশা। ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। অসুস্থের চিকিৎসায় অসহনীয় কষ্ট ইত্যাদি ইত্যাদি।
দায়ী কে? সরকার, সিটি করপোরেশন, সিডিএ কর্তৃপক্ষ, নাকি এলাকার জনপ্রতিনিধি?
সরকার সিটি উন্নয়নের জন্য ৯/১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে, পত্রিকায় দেখেছি। এর সুফল কখন কীভাবে পাবো জানি না। তবে দায়িত্ববান একজন নাগরিক হিসাবে আমি কি আমার দায়িত্ব পালন করছি? প্রতিনিয়ত ময়লা-আবর্জনা ফেলছি যত্রতত্র। নালা-নর্দমায় ফেলে দিচ্ছি, ঘরে ব্যবহারের অনুপযোগী কাপড়, পাপোশ, বালিশ-লেপ-তোশক, পাম্পাস-প্যাডসহ অনেক অপ্রয়োজনীয় আবর্জনা। কার্টুন, চিপসের খোলস, পলিথিনসহ নিত্যব্যবহার্য উৎছিষ্ট তো আছেই।
চট্টগ্রাম শহরের চারদিক ভাটি অঞ্চল। এই আবর্জনাগুলোই কোথাও না কোথাও নালা নর্দমায় পানির সরে যাওয়ার প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। এমনিতে খাল-বিল, নদী-নালা দখলদারদের হিংস্র থাবায় শহরের পরিবেশ সংকুচিত হয়ে গেছে। তার উপর আমাদের সামান্য অসচেতনতাও দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
আমি বলছি, এটিই মূল কারণ নয়। শহর রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্তরা দায় এড়াতে পারবে না কোনভাবেই। তারা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবে, আর আমরা সাধারণ জনগণ নির্দিষ্টস্থানে ময়লা আবর্জনা ফেলবো। অন্যকে উৎসাহিত করবো। তবেই ভাটি অঞ্চলের মানুষ সুখ-শান্তির মুখ দেখতে পারবে, আমার বিশ্বাস।
লেখক: ভাইস প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন ও পরিচালক, বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন।
পূর্বকোণ/জেইউ/পারভেজ