চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

আয়াত, বর্ষা আর আয়নীদের জন্য কী অনিরাপদ হয়ে উঠেছে নগরী?

অনুপম চৌধুরী

২৯ মার্চ, ২০২৩ | ১:৩৭ অপরাহ্ণ

গত বছর ২০২২ এর ১৫ নভেম্বর বিকেলে নিখোঁজ হয় ছোট্ট শিশু আয়াত। ওই বছর ৩০ নভেম্বর (বুধবার) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর আকমল আলী রোডের শেষ প্রান্তে একটি খালের স্লুইচগেট থেকে আয়াতের বিচ্ছিন্ন দুই পায়ের অংশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ১০ দিন পর পিবিআই আবির আলী নামে এক যুবককে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর আবীর জানায়, আয়াতকে শ্বাসরোধ করে খুন করে মরদেহ কেটে ছয় টুকরো করে আবির। এরপর সেগুলো সাগরে ভাসিয়ে দেয়।

 

২৪ অক্টোবর, ২০২২ নিখোঁজ হয় ছোট্ট শিশু মারজানা হক। নগরীর কুসুম কুমারী বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে পড়ত সে। নিখোঁজের তিন দিন পর অর্থাৎ ২৭ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরীর কোতোয়ালির জামাল খানের একটি নালা থেকে শিশুটির বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে এ ঘটনায় গ্রেফতার হন লক্ষণ দাশ নামের এক মুদি দোকানের কর্মচারী। গ্রেফতারের পর লক্ষণ জানায় মারজানাকে ১শ’ টাকার লোভ দেখিয়ে গোডাউনের ভেতর নিয়ে যায়। গোডাউনে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। ধর্ষণের পর রক্তাক্ত জখম হলে ভয়ে ওই শিশুকে মুখ ও নাক চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে খুন করে। পরে গোডাউনে থাকা টিসিবির সীলযুক্ত প্লাস্টিকের ওই বস্তা ভরে গোডাউনের ডান পাশে দেওয়ালের উপর দিয়ে নালায় ফেলে দেয়। এর কিছুক্ষণ পর ওই শিশুর কাপড় চোপড় আরেকটি বস্তায় ভরে একইভাবে নালায় ফেলে দেয়।

 

২১ মার্চ, ২০২৩ নিখোঁজ হয় শিশু আবিদা সুলতানা আয়নী। শিশু আবিদা সুলতানা আয়নী নগরীর পাহাড়তলী কাজীর দীঘি সাগরিকার একটি বিদ্যালয়ে ৪র্থ শ্রেণিতে পড়ত। নিখোঁজের আট দিন পর অর্থাৎ আজ ২৯ মার্চ, বুধবার ভোরে পাহাড়তলীর মুরগি ফার্ম আলম তারার পুকুর পাড় এলাকার ডোবা থেকে শিশুটির গলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন। এ ঘটনায় মোহাম্মদ রুবেল নামের স্থানীয় এক তরকারি বিক্রেতাকে আটক করা হয়েছে। পুলিশের ধারণা শিশুটিকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। তার মা-বাবা জানায়, গত ২১ মার্চ স্কুলের যাওয়ার পথে তাকে বিড়ালছানা দেওয়ার লোভ দেখিয়ে স্থানীয় তরকারি বিক্রেতা মো. রুবেল অপহরণ করে নিয়ে যায়।

 

উপরের সবকটি ঘটনা একি টাইপের। নিখোঁজের কয়েকদিন পর মরদেহ উদ্ধার। সবকটি ঘটনা চট্টগ্রাম নগরীর। সারা ৬৪ জেলায় এসব ঘটনা অহরহ হচ্ছে। যে কটি মিডিয়ায় প্রকাশ পাচ্ছে তা জানতে পারছি। বাকিসব হয়তো আস্তে আস্তে বাণের জলে ভেসে যাচ্ছে।

 

একটা সমাজের কতোটা অধঃপতন হলে এ ধরনের কর্মকাণ্ড ঘটে। নিস্পাপ এ শিশুগুলোর দোষ কোথায়? যে তাদের মরতে হবে? এ শিশুগুলো কোথায় নিরাপদ? আপনার আশপাশেই রয়েছে এসব হায়েনা চোখ। এসব চোখ যতদিন উপড়ে ফেলতে পারবেন না ততদিন এসব কর্মকাণ্ড চলবে। তাতে একের পর এক খালি হবে বাবা-মার বুক। একটা সন্তানের পেছনে কতখানি শ্রম মা-বাবাসহ আশপাশের মানুষ দেন তা সবাই জানেন। কিন্তু সামান্য কুকের্মর বলি হচ্ছে আমাদের শিশুগুলো। আর কোনো মায়ের বুক খালি হোক আমরা তা চাই না। সেজন্য প্রশাসনকে কঠোর ভূমিকা নিতে হবে। সাথে আমাদেরও। আমাদের চারপাশে এসব হায়েনাকে দেখে রাখতে হবে। তবেই আমাদের কোমল শিশুগুলোর জন্য স্বাধীন পরিবেশ তৈরি হবে।

 

 

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট