চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪

ছেলের পেছনে তারাবীর প্রথম নামাজ আদায়, আলহামদুলিল্লাহ!

২৪ মার্চ, ২০২৩ | ২:১০ অপরাহ্ণ

হাফেজ আবদুল্লাহ নাছির। এখন পঞ্চমে পড়ে। আদর করে ডাকি, ড. হাফেজ মাওলানা আবদুল্লাহ নাছির।
ছেলের পেছনে গতবার প্রথম নামাজ আদায় করেছিলাম। ধারাবাহিকতায় গতকাল থেকে এবারো শুরু হয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ।
ছেলের পিছনে শুধু পিতা নই। ছেলের আংকেলও রয়েছেন।
রয়েছে আবদুল্লাহর চাচাতো ভাই ৯ বছরের আবুল ওয়াফা। হিফজে এখন তেরো পারাতে আছে। আগামী বছর সেও তারাবীর ইমামতির স্বপ্ন দেখছে।
আবদুল্লাহর সহপাঠী মেঝো ভাইয়ের ছেলে হাফেজ আবু বকর মুনাজ্জি। তারাবীতে তার সুমধুর কণ্ঠের তিলাওয়াতে এবার এলাকার মসজিদের মুসল্লীগণ দারুণ খুশী, আলহামদুলিল্লাহ।
আল হুমাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু মহিলা মাদ্রাসা জামে মসজিদের দ্বিতীয় তলাটা সম্পূর্ণ মহিলাদের জন্য। মাদ্রাসার ছাত্রী নিবাসের শিক্ষার্থী ও এলাকার অন্যন্য মহিলাদের সাথে সেখানে রয়েছেন আবদুল্লাহর আপুরা, আন্টি মা’গণ।
নীচ তলায় আরো রয়েছে আব্দুল্লাহর ছোট ভাই ৮ বছর বয়সী আদিল। নামাজ শুরু হওয়ার পর দেখি পাশে ঠেলেঠুলে হিজাব পরিহিতা আরেকজন এসে জায়গা দখল করে নিয়েছে।
আবদুল্লাহর ছোটবোন ৪ বছরের ফাতিমা।
বড়জোর এক রাকাত পড়েছে। তারপর হিজাব খোলা, সেটা ঠিক করাতেই তিনি ব্যস্ত।
সিজদা দেওয়ার সময় লক্ষ্য করলাম- তিনি সিজদায় না গিয়ে দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে আশেপাশে বেশ হাসিমুখে ইন্সপেকশন চালাচ্ছেন।
এই ছোট বয়সে আমরাও কতো দুস্টামী করতাম!
টুপি নিয়ে চলতো ব্যস্ত খেলা, নামাজ পুরো শেষ না করে পাশের জনের সাথে মশুগুল হয়ে যেতাম ফিসফিস গল্পে। মনে হতো জরুরি সব কথাগুলো এই নামাজের মধ্যেই, এক্ষুণি বলা চাই।
আরেকটু বড় হলে রুকুতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত বসে থাকা, অতঃপর দ্রুত নিয়্যত বেঁধে রুকুতে যাওয়া, পাশের জনের সাথে ঠেলাঠেলিতে চুপিচুপি অংশগ্রহণ করা, সালাম ফিরানোর সময় হলে তড়িঘড়ি করে ভদ্র হয়ে যাওয়া, মুরুব্বীদের বকাঝকা, কত্তো কত্তো স্মৃতি!
এলাকার একজন মুয়াজ্জিন ছিলেন, তিনি নামাজে নিয়্যত বাঁধলেও গায়েবি দৃষ্টিতে সবই দেখতে পেতেন। সালাম ফিরানোর পর পর শাস্তি নগদে দিয়ে দিতেন। কখনো বেত, কখনোবা নিজের হাত।
নামাজে মনেহতো অনেকক্ষণ, অনেকক্ষণ সময় লেগে যাচ্ছে!
তারপরো আমরা আনন্দচিত্তে মসজিদে যেতাম। সেই ছোট বেলার তারবীহর সময়গুলো দারুণ আনন্দে অতিবাহিত হতো।
এখন তারবীতে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত মনদিয়ে শোনার চেষ্টা করি।
প্রিয় হাবীব সাল্লালাহু আলাইহিসসালাম এর উপর নাজিলকৃত কিতাব, যে কিতাব তিনি তিলাওয়াত করেছেন, হাতে কলমে শিক্ষা দিয়েছেন, সে কিতাবের প্রতিটা শব্দে মনেহয় প্রিয় রাসুল সাল্লালাহু আলাইহিসসালাম জড়িয়ে আছেন।
একাগ্রচিত্তে কান পাতি, প্রিয় সেই কিতাবের সুমধুর শব্দগুলো। এ যেনো আসমান থেকে সরাসরি প্রিয় হাবীব সাল্লালাহু আলাইহিসসালাম এর উপর নাজিল হচ্ছে। আর আমরা তা’ই যেনো শুনতে পাচ্ছি।
কিছু বুঝি। বহু কিছুই বুঝি না। তারপরও পুরো অন্তর দিয়ে তিলাওয়াত শোনার জন্য আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাই।
যদি মহান আল্লাহ তায়াল এই সামান্য প্রচেষ্টাটুকু কবুল করেন, সেই আশায়।
আহা কতো দ্রুত রাকাতগুলো শেষ হয়ে যাচ্ছে। শুরু করতে না করতেই বিশ রাকাত শেষ!
দেখতে না দেখতেই প্রথম তারাবী শেষ হয়ে গেলো।
দ্রুতই চলে যাবে রহমত, বারাকাত আর মাগফিরাতের এই মহিমান্বিত মাস।
ভালো সময়গুলো কাজে লাগানোর একটু সামান্য চেষ্টা করলেই দেখা যায়, সময়গুলো বড্ড দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে।
হাঁটতে চলতে, গাড়িতে বসা অবস্থায় আমরা কি সময়গুলো কাজে লাগাচ্ছি!
জিকির বা তিলাওয়াতে সময়গুলো কি কাটছে!
মোবাইলে ফেইসবুকিং তো সারা বছরই করতে পারবো। অন্তত এই রমজানে এই মোবাইলেই কোরআনুল কারীম এপ্সটা কি ওপেন করে দেখে দেখে তিলাওয়াত করতে পারি না!
সকল মাসের সেরা মাস তথা পবিত্র কোরআন নাজিলের এই মাসের সর্বোচ্চা উপকারিতা, কল্যাণ আমাদের ভাগ্যে কি জুটবে!

লেখক: চেয়ারম্যান, আলহাজ্ব শামসুল হক ফাউন্ডেশন

পূর্বকোণ/এএইচ

শেয়ার করুন