চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

জার্মানিতে স্থায়ীত্ব: যেসব তথ্য জেনে নেয়া প্রয়োজন

১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ৫:৫৩ অপরাহ্ণ

জার্মানিতে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য বেশ কয়েকটা উপায় আছে। এগুলোর মধ্যে আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রচলিত উপায়টা হচ্ছে ডিগ্রি শেষ করে চাকরিতে ঢোকা। চাকরির বয়স দু’বছর হলে এবং এই দু’বছর সময়ে যথাযথ ট্যাক্স পরিশোধ করলে আপনি PR বা Permanent Residence এর জন্য আবেদন করতে পারবেন।

 

এখন আপনার ব্যাকগ্রাউন্ড যাই হোক না কেন চাকরির বিজ্ঞাপনগুলোর দিকে তাকানো মাত্রই আপনার একটা ধারণা হয়ে যাবে যে জার্মানিতে জার্মান ছাড়া চলা আর জলে নেমে কুমিরের সাথে যুদ্ধ করা অনেকটা একইরকম। এখানে চাকরি তথা PR পেতে হলে যে জিনিসগুলো আপনাকে অন্য দশজনের চেয়ে সামনে এগিয়ে রাখবে সেগুলো হলো:

১. জার্মান ভাষা: একেবারে কম করে হলেও B1 লেভেল পর্যন্ত জার্মান শেখা থাকা চাই। এর চেয়ে যত বেশি হয় তত ভালো। জার্মানিতে চাকরি বলেন, PR বলেন, পাসপোর্ট বলেন তথাপি একটা সুন্দর জীবন বলেন; জার্মান ভাষার চেয়ে বড় অস্ত্র আপনার হাতে আর নেই। এই ভাষাটাকে যদি আপনি দখলে নিতে পারেন তাহলে মনে করবেন যে আপনার ৭০% পথ পরিস্কার হয়ে গেল।

 

২. টেকনিক্যাল স্কিল: R, Python, SPSS মূলকথা হচ্ছে ডেটা অ্যানালাইজ করা যায় এমন যেকোনো একটা সফটওয়্যারে দখল থাকলে মনে করবেন চাকরি নামক যুদ্ধের ময়দানে আপনার হাতে একটা মিসাইল আছে।

 

৩. ড্রাইভিং লাইসেন্স: ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকা একটা বিশাল স্কিল। চাকরির বিজ্ঞাপন পড়তে পড়তে যখন দেখবেন সব যোগ্যতা আপনার আছে কিন্তু একদম শেষ পয়েন্টে গিয়ে দেখলেন তারা ড্রাইভিং লাইসেন্স চেয়ে বসেছে! কেবল এই একটা জিনিসের জন্য যখন আপনি আবেদনটা করতে পারবেন না, বিশ্বাস করেন মাথার চুল ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে করবে। তাছাড়া এখানে ড্রাইভিং লাইসেন্স নেয়া অনেক ব্যয়বহুল একটা ব্যাপার। দেশ থেকে ড্রাইভিংটা শিখে আসতে পারলে আপনি একধাপ এগিয়ে যাবেন।

 

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের ড্রাইভিং লাইসেন্স কিন্তু এখানে কাজ করবে না। এখানে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আপনাকে আগে লিখিত পরীক্ষায় পাশ করতে হবে এবং তারপর প্র্যাকটিকেল পরীক্ষা দিতে হবে। আপনার যদি আগে থেকে গাড়ি চালানোর কোনো হাতেখড়ি না থাকে তাহলে এই ভীষণ ব্যয়বহুল প্র্যাকটিকেল ক্লাসগুলো করতে করতে আপনার মানিব্যাগ খালি হয়ে যাবে। তাছাড়া পড়াশোনা এবং কাজের চাপ সামলে ড্রাইভিং শেখার মতো সময় বের করাটাও খুব কঠিন। সেজন্যই ড্রাইভিংটা দেশ থেকে শিখে আসার পরামর্শ থাকবে।

 

৪. ইন্টার্নশিপ/ অভিজ্ঞতা: পড়াশোনা চলাকালীন একটা ইন্টার্নশিপ বা কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন করা খুব দরকার। এটা আপনার সিভিকে বেশ আকর্ষণীয় করে তোলে। পাশাপাশি অনেকসময় দেখা যায়, যে কোম্পানিতে আপনি ইন্টার্নশিপ করেছেন সেখানেই আপনার কাজের দক্ষতার ওপর নির্ভর করে ওরা আপনাকে চাকরি দিয়ে দিয়েছে। তাই পড়াশোনা চলাকালীন কেবল ‘অড জব’ বা ইয়োরো আয়ের ধান্দায় না পড়ে একটু অভিজ্ঞতা অর্জনের পেছনেও সময় ব্যয় করুন।

 

৫. নেটওয়ার্কিং: এটা শুনতে হাস্যকর শোনাবে কিন্তু বিশ্বাস করুন জার্মানিতে নেটওয়ার্কিং আমাদের দেশের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ভালো কাজ করে। আপনি সিভি দিয়ে যত জায়গায় ইন্টারভিউর ডাক পাবেন, আপনার কোনো বড় ভাই বা বোন যদি ওই কোম্পানিতে থাকে এবং সে যদি আপনাকে রেফার করে তাহলে সেটা আপনার রেনডম সিভি ড্রপের চেয়ে কয়েকগুণ ভালো কাজ করবে। এরা কথার মর্যাদা দেয়। এরা যাকে চেনে সে যদি একজন মানুষকে ভালো বা যোগ্য বলে তাহলে সেটা ওরা বিশ্বাস করে। এখানে রেফারেন্স লেটার খুব দামি একটা জিনিস। আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে না চিনলে কোনো প্রফেসর ভুলেও রেফারেন্স লেটার দিবে না এবং চিনলেও আপনি ঠিক যেমন এবং যতটুকুর যোগ্য সে ঠিক ততটুকুই লিখবে। একশব্দও বাড়িয়ে বা কমিয়ে লিখবে না। আর এ কারণেই এখানে রেফারেন্সের এত দাম। সুতরাং, মানুষের সাথে মেশা, সততা এবং নিষ্ঠার সাথে কাজ করে বিশ্বাস অর্জন করা বা শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা অন্য আর ক’টা স্কিলের মতই সমান গুরত্বপূর্ণ।

 

লেখক: শিক্ষার্থী, জর্জ আগস্ট ইউনিভার্সিটি, জার্মানী

 

 

পূর্বকোণ/জেইউ/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট