চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বিমানবন্দরে যাত্রী ভোগান্তির শেষ কবে

শামীম হামিদ

৩১ জানুয়ারি, ২০২৩ | ৯:০২ অপরাহ্ণ

মেলবোর্নের টুল্লামারিন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশনের কাজটা এত কম সময়ে হয়ে যাবে ভাবিনি। ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা মিষ্টি হেসে আমার কাছ থেকে পাসপোর্টটা চেয়ে নিলেন। সেটা স্ক্যান করতে করতে আমার একটা ছবিও তুলে ফেললেন।

এরপর পাসপোর্টটা ফিরিয়ে দিয়ে বললেন, অস্ট্রেলিয়ায় তোমাকে স্বাগত জানাই। এই দেশে তোমার অবস্থান আনন্দময় হোক। পুরো ব্যাপারটা শেষ করতে মিনিট খানেক সময় লাগলো। কোনো উটকো প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়া ছাড়াই অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশ করলাম। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট বিশ্বকাপ-২০২২ কভার করতে অস্ট্রেলিয়ায় এসেছি আমরা বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি সাংবাদিক।

এয়ারপোর্টের ইমিগ্রেশন নিয়ে আমাদের সবার মধ্যেই খানিকটা উদ্বেগ ছিল। অস্ট্রেলিয়া উন্নত দেশ। আমরা এসেছি বাংলাদেশ নামের উন্নয়নশীল এক দেশ থেকে। নানাজনের কাছে শুনি, গরীব দেশের লোকজনকে বড়লোক দেশের এয়ারপোর্টে হয়রানি করে। তবে মেলবোর্ন এয়ারপোর্টে এমন কিছুই হলো না। আমরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বাইরের দিকে পা বাড়ালাম। এয়ারপোর্টের ডিউটি ফ্রি শপগুলোর চাকচিক্য দেখতে দেখতে বাইরে আসার সময় মনে পড়ছিল বিভিন্ন দেশের ইমিগ্রেশনে ভোগান্তির নানা স্মৃতি।

২০১৭ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহের ঘটনা। বেনাপোল বর্ডার দিয়ে ভারতে যাচ্ছি। সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে বাংলাদেশ প্রান্তের ইমিগ্রেশন শেষ। এবার যাবো ভারতে প্রান্তের ইমিগ্রেশনে। দূরত্ব বড়জোর ১০০ মিটার। কিন্তু নোম্যান্স ল্যান্ডের অবস্থা দেখে ভড়কে গেলাম। বিশাল লাইন। সেই লাইন আর এগোয় না। পিঁপড়ার গতিতে এগোচ্ছি বললেও ভুল হবে। কারণ আমাদের মত অপেক্ষা করতে না হলে পিঁপড়াও ওই জায়গাটুকু পার হয়ে আমাদের আগে ইমিগ্রেশনে চলে যেতো। যাই হোক, সেদিন প্রায় চার ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষার পর বেলা দেড়টার দিকে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের মুখোমুখি হতে পেরেছিলাম। আমার সাথে ছিল স্ত্রী নওশিন আর আমাদের ৮ বছরের ছেলে ফাইয়াজ। ইমিগ্রেশন থেকে বের হওয়ার পর তাদের মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছিল না। অভূক্ত পেটে চার ঘণ্টা রোদে পুড়ে বেচারাদের কি হাল হয়েছিল সেটা আর নতুন করে বলতে চাই না। সেদিনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম খুব বেশি প্রয়োজন না পড়লে আর কখনো ভারতে যাবো না। অন্ততঃ সড়ক পথেতো নয়ই। পরের ঘটনা ২০১৯ সালের।

আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ কভার করতে ইংল্যান্ডে গেছি। হিথরো এয়ারপোর্টের ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা কয়েকজন জোট বেঁধে আমাদের বাংলাদেশি সাংবাদিকদের ঝেকে ধরলেন। তারা আইসিসি‘র অফিশিয়াল ইনভাইটেশন, হোটেল বুকিংয়ের ডকুমেন্ট, অফিসের অ্যাসাইনমেন্ট লেটারসহ ‘চৗদ্দগুষ্ঠির ঠিকুজি’ যাচাই-বাছাই করে পাসপোর্টে ‘অ্যারাইভাল’ সিল দিয়েছিলেন। সেদিন এয়ারপোর্ট থেকে বের হতে আমাদের অনেকটা সময় লেগে গিয়েছিল। সিঙ্গাপুরের ইমিগ্রেশনেও একবার বিড়ম্বনায় পড়েছিলাম। সপরিবারে।

২০১৭ সালের ঘটনা। সিঙ্গাপুরে মামাতো বোনের বাসায় বেড়াতে গেছি। কয়েকদিন পর সেখান থেকে গেলাম পাশের দেশ ইন্দোনেশিয়ার রিও আইল্যান্ডের বাটাম সিটিতে। সিঙ্গাপুরের হার্বার ফ্রন্ট থেকে ক্রুজ শিপে মাত্র ৪০ মিনিটের ভ্রমণ। আমাদের ভিসা ডবল এন্ট্রি টাইপের যা দিয়ে দুইবার সিঙ্গাপুরে প্রবেশ করার সুযোগ ছিল। ইন্দোনেশিয়া থেকে আবার সিঙ্গাপুরে ফেরার সময় কোনো অসুবিধায় পড়ার কথা ছিল না। কিন্তু পড়লাম। এক রাত দুইদিনের প্যাকেজ ট্যুর শেষ করে যখন সিঙ্গাপুরের হারবার ফ্রন্টের ইমিগ্রেশনে দাঁড়ালাম, সেখানকার কর্মকর্তারা আমাদের দিকে সন্দেহের চোখে তাকালেন। যেন আমরা বিরাট অপরাধী। আন্তর্জাতিক মাফিয়া চক্রের সদস্য। আমাদেরকে পাশের একটা রুমে নিয়ে বসানো হলো। সেখানে দেখলাম আমরা একা নই। আরো কয়েকটা পরিবার আগে থেকেই বসে আছে। কিছুক্ষণ পরপর একেকটা পরিবারকে ভেতরের আরেকটা রুমে ডাকা হচ্ছে। যথাসময়ে আমাদের ডাক পড়লো। ভেতরে গিয়ে দেখলাম ব্যাপারটা তেমন কিছুই না। তারা আমাদের কাছে বাংলাদেশে ফেরার রিটার্ন টিকেট দেখতে চাইলেন। দেখালাম। জানতে চাইলেন কোথায় উঠেছি। বোনের বরের কথা বললাম। ঠিকানা জানতে চাইলেন। নোট বুকে তা টুকে রাখলেন। এরপর আমাদের ‘সময় নষ্ট করার জন্য’ দুঃখপ্রকাশ করে স্মিত হাসি হেসে বললেন, তোমরা এবার যেতে পারো। বিশ্বের অনেক দেশের এয়ারপোর্টেই ই-গেট ব্যবস্থা রয়েছে যার সাহায্যে ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া অনেক গতিশীল হয়েছে। পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও হযরত শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কিছুদিন আগে এই ব্যবস্থা চালু হয়েছে। ই-গেট একধরনের স্বয়ংক্রিয় ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা। এই গেটের দু’টি ধাপ রয়েছে। প্রথম ধাপে পাসপোর্টের ফটো আইডি পেজ স্ক্যানারের ওপর রাখলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্ক্যান হয়ে প্রথম দরজাটি খুলে যায়। পরের ধাপে যাত্রীর ছবি তোলার পর দ্বিতীয় দরজাটিও খুলে যায়। আমাদের দুই এয়ারপোর্টে ই-গেট থাকলেও এখনো এই সিস্টেম পুরোপুরি কার্যকর নয়। যাত্রীদের ইমিগ্রেশন সারতে হয় ম্যানুয়ালি। জানি না আমাদের এয়ারপোর্টগুলোতে যাত্রীদের ভোগান্তির অবসান কবে হবে!

 

পূর্বকোণ/রাজীব/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট