চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

উইথ ব্লাড অ্যান্ড সোয়েট এবং শুভ জন্মদিন

২০ নভেম্বর, ২০২২ | ১:২৯ অপরাহ্ণ

উইথ ব্লাড অ্যান্ড সোয়েট এবং শুভ জন্মদিন।
২০১৬ সাল।
অনেস্ট নামের চ্যারিটি প্লাটফর্মটি নিয়ে চিন্তা ভাবনা করছি, কিন্তু কীভাবে বা কাকে নিয়ে মাঠে নামবো বুঝতে পারছি না। তখন একদিন হঠাৎ অপু মনিরুলের কথা মাথায় এলো। অসম্ভব ক্রিয়েটিভ ছেলে। সমস্যা হলো, ও তখন জাপান থেকে পড়াশোনা করে ফিরে এসে একটি শিপ বিল্ডিং কোম্পানিতে কাজ করছে। তাই ও কতটুকু সময় দেবে বা উৎসাহ দেখাবে বুঝতে পারছিলাম না। আবার এটাও ঠিক আমার চিন্তার সাথে খাপ খাইয়ে অনেস্টে গড়ে তোলার জন্য আর কাউকে পছন্দও হচ্ছে না। অবশেষে একদিন ওকে ব্যাপারটা বললাম। ও কিছুটা নিরাসক্ত ভঙ্গিতে বললো, আমাকে পুরো ব্যাপারটি বুঝিয়ে দিন। আমি ওকে বোঝালাম, আমরা এমন একটি চ্যারিটি প্লাটফর্ম গড়ে তুলতে চাই, যা বাজারমূল্যের চাইতে বা বিনামূল্যে পণ্য বিক্রি বা বিতরণ করবে। যা সামান্য লাভ হবে তার ৬০% তাৎক্ষণিকভাবে ক্রেতাকে দিয়ে দেওয়া হবে, বাকি ৪০% যাবে পরিচালন ও চ্যারিটি বাবদ। এর উদ্যোক্তারা লাভ তো দূরের কথা বিনিয়োগও ফেরত নেবেন না।
অপু মনোযোগ দিয়ে শুনে বললো, টাফ জব। এরকম প্রতিষ্ঠানের সাথে সাধারণ মানুষ পরিচিত না৷ বিশ্বাস করানোও কঠিন হবে। তারপরও আমাকে ভাবতে হবে।
আমি তখন চাকরিসূত্রে সিলেটে। ওকে বললাম, তুমি ছুটি নিয়ে সিলেট আসতে পারবে?
ও বললো, পারবো।
কয়েকদিন পর অপু সিলেটে আমার বাসায় এলো। আমি বললাম, তুমি কি কিছু ভেবেছ? ও জবাব দিলো, ভেবেছি, কিন্তু এখন বলব না। আগে নিরিবিলিতে তিনদিন আরো চিন্তা করব। আমার রুমটা দেখিয়ে দিন।
কথা শেষ করে সে তাঁর রুমে ঢুকে গেলো। পরের তিনদিন একবারের জন্যও তার সাথে আমার দেখা হয়নি। কারণ রুম থেকে সে বের হয়নি। খাবারদাবারও সেখানে পৌঁছে দেওয়া হয়। আমি কিছুটা চিন্তিত এবং বিরক্তও। কথা নেই বার্তা নেই, এ ছেলে বন্ধ রুমে কী করে?
চতুর্থ দিন বিকেলে সে বের হলো, তার হাতে ল্যাপটপ। আমি অবাক হয়ে তাকাতেই বললো, ইয়োর মডেল ইজ রেডি।
অতি বিস্ময়ের সাথে পরের কয়েক ঘণ্টা মডেলটি দেখলাম। আমি যা চেয়েছিলাম তারচে অনেক বেশি সমৃদ্ধ। আমার চিন্তার বাইরেও কিছু চ্যারিটি সেগমেন্ট। দেখা শেষে আমি মুগ্ধতা এবং হতাশার মিশ্রণ নিয়ে বললাম, কিন্তু আমি তো ইনিশিয়ালি লাখখানেক টাকা, আমার পুরোনো ল্যাপটপ আর বন্ধুদের দেওয়া কিছু পণ্য ছাড়া কিছুই দিতে পারবো না। তুমি এ দিয়ে কীভাবে এটা গড়ে তুলবে?
উত্তর এলো, উইথ মাই ব্লাড অ্যান্ড সোয়েট।
মানে?
আমি চাকরি ছেড়ে দিয়ে ফুল টাইম এটা নিয়ে কাজ করব?
বলো কী! তোমাকে বেতন কোত্থেকে দেবো?
প্রথম ছমাস ওগুলো নিয়ে ভাবতে হবে না। আমি জাহাজ ডিজাইনের কাজ জানি। ফাঁকে ফাঁকে ফ্রি ল্যান্সার হিসেবে কন্ট্রাক্টে কাজ করব। আই ডোন্ট নিড মাচ মানি।
অপু মনিরুল কিন্তু আসলেই তার রক্ত এবং ঘাম দিয়ে আজকের বিশাল ‘অনেস্ট’ গড়ে তুলেছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে প্রায় দুলাখ মানুষ এর সেবা পাচ্ছেন। পরে অনেক হৃদয়বান মানুষ উদ্যোক্তা হিসেবে অনেস্টে যোগ দিলেও অপুর রক্ত এবং ঘামের ঋণ শোধ করার ক্ষমতা আমাদের নেই।
আজ ওর জন্মদিন।
শুভ জন্মদিন, অপু।
তোমার রক্ত এবং ঘামের দাম নিশ্চয় পরম করুণাময় দেবেন।

লেখক: কথাসাহিত্যিক

পূর্বকোণ/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট