চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতে অভিভাবকের ভূমিকা

২৯ অক্টোবর, ২০২২ | ৫:৫৭ অপরাহ্ণ

নেপোলিয়ন বলেছিলেন, ‘তোমরা আমাকে একজন শিক্ষিক মা দাও, আমি তোমাদের শিক্ষিত জাতি উপহার দেব।’ শিশুর প্রারম্ভিক শিক্ষার স্থান হলো পরিবার। শিশু ছোটবেলা থেকে বেড়ে ওঠে পরিবারে। বেড়ে ওঠার পাশাপাশি পরিবার থেকেই শিষ্টাচার শিখে। তাই মনীষীরা পরিবারকে শাশ্বত বিদ্যালয় হিসেবে অভিহিত করেছেন।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হবার পূর্বে স্বরবর্ণ আর ব্যঞ্জনবর্ণের শিক্ষাটা শিশু তার মা-বাবার কাছেই শিখে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় সম্পৃক্ত হওয়ার পরপরই শিশু পরিবারের বাইরে শিক্ষার নতুন পরিবেশের সঙ্গে পরিচিত হয়। তখন থেকেই শিক্ষকদের পাশাপাশি অভিভাবকের দায়িত্ব বেড়ে যায়। সন্তানদের সঠিক সময়ে বিদ্যালয়ে পাঠানো, তাদের প্রতিদিনের পড়ালেখার ব্যাপারে খোঁজ-খবর রাখা। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অভিভাবকদের সচেতনতা এখনো শতভাগে পৌঁছায়নি। এর প্রধান কারণ হলো- দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অভিভাবকরা এখনো ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখার ব্যাপারে অসচেতন। অবশ্য এক্ষেত্রে দারিদ্রতা এবং নিরক্ষরতাও অন্তরায়। কারণ দেশের এসব দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অনেকেই নিরক্ষর। তাই বিদ্যালয়ে তাদের সন্তানরা কি পড়ছে, কি শিখছে সেটা জানার আগ্রহ থাকলেও পড়ালেখা না জানার কারণে তাদের সে বিষয়ে জানা সম্ভব হয়ে ওঠে না।

 

সচেতন অভিভাবকদের কথা বাদ দিলে, দেশের অধিকাংশ দরিদ্র মা-বাবারা সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে নিজেদের প্রতিদিনকার রুজি-রোজগার নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। অনেক অভিভাবককে দেখা গেছে দু’মুঠো অন্নের জোগান দিতে অন্যের বাসা-বাড়িতে কাজ করছেন। অনেকেই আবার নিজের ক্ষেত-খামার দেখাশোনায় ব্যস্ত। মাঝে মাঝে বাবা-মাকে সংসার ও ক্ষেত-খামারের কাজে সহযোগিতা করার জন্য অনেক শিক্ষার্থী নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিত হতে পারে না। প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেক শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে এমনটি দেখা যায়। নিয়মিত বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতি তাদেরকে পড়ালেখায় পিছিয়ে দেয়। ঝরে পড়ার আশংকা সৃষ্টি করে।

বর্তমানে সরকার ঝরে পড়া রোধ এবং বিদ্যালয়ে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে মা সমাবেশ, অভিভাবক সমাবেশ, উঠান বৈঠক, সমাজ উদ্বুদ্ধ করণ সভা বাধ্যতামূলক করেছেন। পাশাপাশি সকল শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির আওতায় এনে শিক্ষায় ঝরে পড়া রোধ করে মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়নে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। প্রতিটি মা ও অভিভাবক সমাবেশে দেখা যায় খেটে খাওয়া মানুষগুলোর একটাই কথা থাকে যে, তারা সারাদিন বাইরে থাকেন, তাই ছেলে-মেয়েরা স্কুলে গিয়ে কি করছে না করছে সেটা তাদের পক্ষে খোঁজ-খবর নেওয়াটা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তবে যখনই সুযোগ পান তারা চেষ্টা করেন তাদের পড়ালেখার ব্যাপারে খোঁজ নেওয়ার।

 

বর্তমান যুগে ভালো ফলাফল করতে হলে পড়ালেখার বিকল্প নেই। নামে মাত্র পাশ করে সার্টিফিকেট পাওয়ার আশায় থাকলে সেই সার্টিফিকেট জীবনের কোন ক্ষেত্রে কাজে আসবে না। তাছাড়া সচেতন অভিভাবকরা নিজেরাই বেশি উৎকণ্ঠায় ভোগেন সন্তানদের পড়ালেখা পরবর্তী ভবিষ্যৎ নিয়ে। শহর কিংবা গ্রাম সব জায়গায় এখন অভিভাবকরা সচেতন হয়ে উঠছেন সন্তানদের পড়ালেখার ব্যাপারে। তবে প্রত্যন্ত এলাকার জনগোষ্ঠীকে যতদিন পর্যন্ত না সচেতন করা যাবে ততদিন মানসম্মত শিক্ষার অগ্রযাত্রা ব্যাহত হবে। কারণ একজন শিক্ষার্থীকে গড়ে তোলার জন্য শিক্ষকদের পাশাপাশি অভিভাবকদের ভূমিকা কোন অংশেই কম না। সারাদিনের কয়েক ঘণ্টা বিদ্যালয়ের গণ্ডিতে থাকলেও, দিনের বাকি সময়টা শিক্ষার্থীরা পরিবারেই থাকে। তাই বিদ্যালয়ে কি পড়ানো হয়েছে, বাড়িতে কোন কাজগুলো করতে হবে- এসব ব্যাপারে অভিভাবকদের সচেতনতা জরুরি।

নেপোলিয়ন স্বপ্ন দেখেছিলেন বহু বছর আগে। কিন্তু বর্তমান বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে সন্তাদের সুশিক্ষিত নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হলে সকল শ্রেণি, গোত্র, ধর্ম ও বর্ণের অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতার বীজ বপন করতে হবে। বিদ্যালয়ের মা সমাবেশ, অভিভাবক সমাবেশ, উঠান বৈঠক, হোম ভিজিট, সামাজিক উদ্বুদ্ধকরণ সভার মাধ্যমে অভিভাবক ও সমাজকে সচেতন করার প্রক্রিয়া চলমান। তাই মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের পাশাপাশি অভিভাবকদের যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে হবে।

সোনার বাংলাদেশ গড়তে সুশিক্ষিত জাতি গঠন করা জরুরি। একমাত্র পরিবার, অভিভাবক, বিদ্যালয়, শিক্ষক, সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিরাই পারেন এই কাজটাকে সহজ করে সম্পন্ন করতে। বিদ্যালয়ের সঙ্গে সেতুবন্ধন স্থাপন করে শিশুর ভবিষ্যৎ জীবনকে রাঙিয়ে তুলতে সকল অভিভাবকগণ এগিয়ে আসলেই মানসম্মত শিক্ষা তার আপন গন্তব্যে নোঙর ফেলতে পারবে।

লেখক : সহকারী শিক্ষক, পাঠানটুলী খান সাহেব বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

 

পূর্বকোণ/এএস

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট