চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

মিসওয়াক কেন করবেন?

২৮ অক্টোবর, ২০২২ | ১১:২৬ পূর্বাহ্ণ

মিসওয়াক একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। মিসওয়াক করলে দাঁতের সৌন্দর্য ও স্বাস্থ্য ঠিক থাকে। এটি মাড়ির স্বাস্থ্যও ভালো রাখে। নিয়মিত মিসওয়াক করলে দাঁত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে। এতে দাঁত শক্ত ও মজবুত থাকে। মুখের ভেতরের রোগ-জীবাণু দূর হয়। তাতে পেটের অনেক অসুখ থেকে মানুষ মুক্তি পায়। এভাবে মিসওয়াক মানুষের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে।

 

 

মিসওয়াকের গুরুত্ব ও ফজিলত

মিসওয়াক করলে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, ‘মিসওয়াক মুখের পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম ও আল্লাহর সন্তোষ লাভের উপায়’ (নাসায়ি : ৫)। মিসওয়াক করলে সত্তরগুণ বেশি সওয়াব লাভ হয়। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে নামাজের জন্য মিসওয়াক করা হয়, তা ওই নামাজ অপেক্ষা সত্তরগুণ উত্তম, যে নামাজের জন্য মিসওয়াক করা হয় না’ (আল-মুসতাদরাকু লিলহাকিম : ৫১৫)। এ ছাড়াও মিসওয়াকের ১১টি উপকারিতা রয়েছে। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের অবশ্যই মিসওয়াক করা উচিত। কেননা মিসওয়াক ক. মুখের পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম, খ. আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উপায়, গ. ফেরেশতাদের আনন্দিত করে, ঘ. নেক আমল বৃদ্ধি করে, ঙ. এটি একটি সুন্নত, চ. দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পায়, ছ. মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়, জ. দাঁতের মাড়ি মজবুত হয়, ঝ. কফ দূর হয়ে যায় ও ঞ. মুখে সুগন্ধি আনে।’ অন্য বর্ণনায় আছে মিসওয়াক পেট ভালো রাখে। (শুয়াবুল ঈমান : ২৫২১)

 

 

কখন মিসওয়াক করা সুন্নত?

অজুর সময় মিসওয়াক করা সুন্নত। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমার উম্মতের জন্য যদি কষ্ট মনে না করতাম, তাহলে প্রত্যেক নামাজের সময় তাদের মিসওয়াক করার আদেশ করতাম।’ নামাজের পূর্বেও মিসওয়াক করা সুন্নত। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমার উম্মতের জন্য বা তিনি বলেছেন, লোকদের জন্য যদি কষ্ট মনে না করতাম, তাহলে প্রত্যেক নামাজের সময় তাদের মিসওয়াক করার আদেশ করতাম।’ (বুখারি : ৮৮৭)

 

জুমার নামাজের পূর্বেও মিসওয়াক করা সুন্নত। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ এই দিনকে মুসলিমদের ঈদের দিনরূপে নির্ধারণ করেছেন। অতএব যে ব্যক্তি জুমার নামাজ আদায় করতে আসবে সে যেন গোসল করে এবং সুগন্ধি থাকলে তা শরীরে লাগায়। আর মিসওয়াক করাও তোমাদের কর্তব্য’ (ইবনে মাজা : ১০৯৮)। এ ছাড়াও ঘুম থেকে জেগে মিসওয়াক করা সুন্নত।

হুজায়ফা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী (সা.) যখন ঘুম থেকে জাগতেন তখন মিসওয়াক দিয়ে মুখ পরিষ্কার করতেন’ (বুখারি : ২৪৫)। তাহাজ্জুদ নামাজের জন্যও মিসওয়াক করা সুন্নত। হুজায়ফা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী (সা.) রাতের বেলা যখন তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য উঠতেন তখন মিসওয়াক দ্বারা তাঁর মুখ পরিষ্কার করে নিতেন’ (মুসলিম : ৪৮১)। তা ছাড়াও কুরআন তেলাওয়াতের পূর্বে এবং বাইরে থেকে এসে ঘরে প্রবেশের পূর্বেও মিসওয়াক করা সুন্নত।

 

 

মিসওয়াকের স্বাস্থ্যগত উপকারিতা

প্রতিবার খাবারের সময় দাঁতের ফাঁকে খাবার আটকা পড়ে, যা পচে প্রতিনিয়ত জন্ম লাভ করে অসংখ্য ব্যাকটেরিয়া। যেগুলো পাকস্থলিতে প্রবেশ করে খাদ্যের গুণগতমান নষ্ট করে দেয়। পেটে সমস্যা সৃষ্টি করে। পেটে গ্যাস হয়। মুখ দিয়ে দুর্গন্ধ বের হয়। শরীরকে দুর্বল করে দেয়। তা ছাড়া এতে দাঁতের মাড়িতে জন্ম লাভ করা জীবাণু দাঁতের মাড়িকে দুর্বল করে দেয়। দাঁত নড়তে থাকে। অকালে দাঁত পড়ে যায়। তবে সময়মতো ও নিয়মিত মিসওয়াক করলে দাঁত ও মাড়ি ভালো থাকে। সুতরাং আমাদের উচিত মহানবীর সুন্নত পালন ও নিজের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য নিয়মিত মিসওয়াক করা।

 

লেখক : ড. হাফেজ মাওলানা মো. মাহবুবুর রহমান

 

পূর্বকোণ/আর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট