চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

রমজানের সাথে শাওয়ালের ৬ রোজায় সারা বছর রোজার সমান সওয়াব

নাসির উদ্দিন

১৬ মে, ২০২১ | ১:৪৮ অপরাহ্ণ

আরবি  চান্দ্রবৎসরের দশম মাস হলো ‘শাওয়াল’। সম্মানিত  চার মাসের একটি  শাওয়াল। এর অর্থ হল উঁচু করা বা উন্নতকরণ। এই মাসের আমলের দ্বারা পুণ্য য়।লাভ হ নেকির পাল্লা ভারী হয় এবং সাফল্য আসে। এই মাসের প্রথম তারিখে ঈদুল ফিতর । পয়লা শাওয়াল সদাকাতুল ফিতর বা ফিতরা আদায় করা এবং ঈদের নামাজ পড়া ওয়াজিব। একমাস ফরজ রোজা পালন শেষে নফল রোজার প্রতি মনোনিবেশের মাস এটি।

রমজান ছাড়াও মুসলিমদের জন্য বছরে ৫১টি রোজা রাখার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। আরবি প্রতিমাসের চাঁদের ১৩, ১৪, ও ১৫ তারিখে তিনটি করে ১১ মাসে ৩৩টি। জিলহজ্জ মাসের ১ থেকে ৯ তারিখ পর্যন্ত ৯টি, শাওয়াল মাসে ৬টি, মহররম মাসে ২টি এবং শবেবরাতে ১টি রোজা রাখা মোস্তাহাব। 

প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) সপ্তাহে সোম ও বৃহস্পতিবার দুইদিন রোজা রাখতেন। এই দুই দিন ফেরশেতারা আমাদের আমল নামা আল্লাহর দরবারে পেশ করেন। তাই নবীজি রোজা থাকা অবস্থায় যাতে  আমলনামা আল্লাহর দরবারে পেশ হয় সেই চেষ্টা করতেন। এছাড়া তিনি রবিউল আউয়াল মাসের যে কোন সোমবারে তাঁর জন্মের কারণে শোকরিয়া আদায়ের জন্য রোজা রাখতেন। 

রমজান মাসের কাজা রোজা সম্পর্কে মহান আল্লাহ তাআলা কোরআন করিমে বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ থাকবে কিংবা সফরে থাকবে, সে (রমজানের পরে) অন্য দিনগুলোতে রোজা রাখতে পারবে।’ (সুরা: ২ বাকারা, আয়াত: ১৮৪)। তাই যাঁরা সফরের ক্লান্তি বা অসুস্থতার কারণে রমজানের পূর্ণ রোজা রাখতে পারেননি, তাঁরা সেগুলো রমজানের পর অন্য সময়ে আদায় করে নেবেন। কাজা রোজা রেখে ভেঙে ফেললে পুনরায় একটার পরিবর্তে একটা কাজা আদায় করতে হয়, কাফফারার প্রয়োজন হয় না।

প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) বলেছেন, আল্লাহ তায়াল শাওয়াল মাসের ছয়দিনে আসমান এবং জমিন সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি এই মাসে রোজা রাখবে আল্লাহ তায়ালা তাকে প্রত্যেক সৃষ্ট জীবের সংখ্যার সমান নেকি দিবেন। সমপরিমাণ গুনাহ মুছে দেবেন এবং পরকালে তাকে উচ্চ মর্যাদা দান করবেন।

এই মাসে ছয়টি নফল রোজা রাখা সুন্নত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যারা রমজানে রোজা পালন করবে এবং শাওয়ালে আরও ছয়টি রোজা রাখবে; তারা যেন পূর্ণ বছরই রোজা পালন করল। শাওয়াল মাসের এই ছয়টি রোজা মূলত সুন্নত। যেহেতু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে তা আমল  করেছেন এবং আমল করার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু পরিভাষায় এগুলোকে নফল রোজা বলা হয়; কারণ এগুলো ফরজ ও ওয়াজিব নয়, নফল তথা অতিরিক্ত।

রোজার সময় প্রতিটি নেক আমলের সওয়াব আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কমপক্ষে ১০ গুণ করে দিয়ে থাকেন। এই হিসাবে রমজান মাসে এক মাসের (৩০ দিনের) রোজা ১০ গুণ হয়ে ৩০০ দিনের সমান হয়। অবশিষ্ট ৫৪ বা ৫৫ দিনের জন্য আরও ছয়টি পূর্ণ রোজার প্রয়োজন হয় (যেহেতু অর্ধেক বা অর্ধদিবস রোজা নেই)। ছয়টি সুন্নত রোজা পালন করলে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে হিসাব করে এই ছয়টি নফল (অতিরিক্ত) রোজা সুন্নত করলেন, তা আদায় হবে। এই ছয়টি রোজা ১০ গুণ হয়ে ৬০ হবে, মোট এক বছরের রোজার সমান হবে।

উল্লেখ্য, রোজা ২৯ হলেও তা এক মাস ধরে ৩০০ ধরা হবে। যেমন মাসের দিন ২৮ বা ২৯ যা-ই হোক, মাসিক বেতন পূর্ণ মাসেরই প্রদান করা হয়।

হজরত আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যে শাওয়াল মাসে বিয়ে-শাদি সুন্নত, যেরূপ শুক্রবারে, জামে মসজিদে ও বড় মজলিশে আকদ-নিকাহ অনুষ্ঠিত হওয়া সুন্নত। কারণ, মা আয়িশা (রা.)-এর বিয়ে শাওয়াল মাসের শুক্রবারে মসজিদে নববিতেই হয়েছিল। ছয় রোজা শাওয়াল মাসের নির্ধারিত সুন্নত।

নবীজি ফরমান: ‘যে ব্যক্তি রমজানের রোজা ঠিকভাবে রাখল এবং শাওয়ালে আরো ৬টি নফল রোজা রাখল আল্লাহপাক ওই ব্যক্তিকে সারাবছর নফল রোজা রাখার সওয়াব দান করবেন।’ হাদিসের ব্যাখ্যা কোরআনের আয়াত দিয়ে-আল্লাহ বলেন, ‘যে এক নেকির কাজ করবে তাকে আমি দশ গুণ দান করব। এক মাসে দশ মাস। ৬ রোজায় ৬০ দিন অর্থাৎ দুই মাস।’

এ হাদিসটি মূলত পবিত্র কুরআনুল কারিমের সূরা আনআমের ১৬০ নম্বর আয়াতের সমর্থন বহন করে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘কেউ কোন সৎ কাজ করলে তার দশ গুণ সওয়াব প্রদান করা হবে।’ (সুরা আনআম : আয়াত ১৬০) এ আয়াতের আলোকে রমজান মাসের রোজার ১০ গুণ সাওয়াব দেয়া হলে তা হবে ৩০০ দিন আর শাওয়ালের ৬ রোজার সাওয়াব ১০ গুণ হলে তা হবে ৬০ দিন। মোট ৩৬০ দিনে আরবি বছর পূর্ণ হয়ে যায়। আর সে হিসেবেই সারা বছর সাওয়াব লাভ করে মুমিন। যার পরিপূর্ণতা আসে এ শাওয়াল মাসে।

কিন্তু কোন কারণে যাদের রমজানের ফরজ রোজা ছুটে গেছে আগে ওই রোজাগুলো রাখতে হবে। ছয় রোজার আগে কাযা রোজা শেষ করতে হবে। তারপর ছয় নফল রোজা একত্রে কিংবা বিরতি দিয়ে রাখা যাবে।

নবীজি উম্মতদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘রাখ, সুস্থ থাক’।  আল্লাহ আমাদের নবীজির কথামতো রোজা রাখা এবং সুস্থ থাকার তৌফিক দান করুন।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট